২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৪ অপরাহ্ন, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, মঙ্গলবার, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
বোরকা পরে বালিকা মাদরাসায় যুবক, ধরা পড়ে খেলেন গণপিটুনি ২৪ বছর কারাভোগ শেষে ভ্যান নিয়ে বাড়ি ফিরলেন ওলিউল কাতারের সঙ্গে ৫ চুক্তি ও ৫ সমঝোতা স্মারক সই পথিকের তৃষ্ণা নিবারণে নলছিটি ফ্রি পানির বুথ করছে বিডি ক্লিন দামুড়হুদায় স্থানীয় এমপির নিকট আত্নীয় হওয়ায় ঘোষনা দিয়ে উপজেলা আঃলীগের সাঃ সম্পাদকের মনোনয়ন প্রত্যাহার গোবিন্দগঞ্জে অটোবাইক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কালে জনতার হাতে ২ জন আটক জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচী উপলক্ষে জনসচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত ঝালকাঠিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে দুর্ধষ ডাকাতির ঘটনার প্রধান আসামি কুখ্যাত ডাকাত সরদার দিপক বড়াল কে আটক করেছে র‌্যাব ৮ চুয়াডাঙ্গায় নিখোঁজের ৬ দিন পর নারীর ঝুলন্ত অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বহিষ্কার
সাহেদ উপাখ্যান ও ছবি প্রতিদিনের সন্দেহ, এ-বুঝি জীবনের শেষ দিন! আজকের ক্রাইম-নিউজ

সাহেদ উপাখ্যান ও ছবি প্রতিদিনের সন্দেহ, এ-বুঝি জীবনের শেষ দিন! আজকের ক্রাইম-নিউজ

সোহেল সানি

নিজের অফিসটাই রাজপ্রাসাদ। অসাধারণ বেশভূষা। পরনে অতি দামী স্যুট। রুচিসম্মত টাই। রাজকীয় আসনটিও সুবিশাল। উচ্চতায় পাঁচফুট চার ইঞ্চি। আসনটির কারণে আকৃতিতে ছোট লাগে। যখন পেছনে হেলান দিয়ে বসে তখন তার পা দুটো শূন্যে ঝুলে থাকে। দুই কনুই আসনের হাতলে স্থাপন করা ও আড়াআড়িভাবে হাত দুটো পেটের ওপর রাখা থাকে। কাঁধটাও প্রশস্ত। বাহু স্ফীত। দৃঢ় উরু ও পেশী যেন কমবয়সী একটি ষাঁড়ের দেহ- যে সব সময় উপগত হওয়ার জন্য একটি সদ্যযৌবনা গাভীর অনুসন্ধান করে।

যে ভদ্রবেশী এক ভয়ংকর অপরাধী। তাকে নিয়ে একটি গল্প লিখবো বলে ভাবছি। চোখের আয়নায় তার বেশভূষা আর ছবি আঁকছি।
সে যে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ।
টেলিভিশন পর্দার পরিচিত মুখ। তার রাজকীয় বেশভূষা আর চেহারায় বিস্মিত। ধৃত সাহেদ আর ভদ্রবেশী সাহেদের পার্থক্যটা নির্ণয় করছে তাবৎ পাপকর্ম। সে মনে করছিল, ওর মধ্যে ষাড়ের যে বিপুল শক্তি আছে, তা কখনই লোপ পাবে না। বেঁধে রাখলেও ছুটে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে। একটি খাঁচায় ভরে দিলেও বাইরে লড়াই এর স্থলে না আনা পর্যন্ত খাঁচা ঝাঁকাতে থাকবে। আহত করলে আরো বেশি লড়াই করবে। অনিশ্চিত দ্বিধাগ্রস্ত হলেও শক্তি তো তখন তার শিং- এ, মাথায় এবং পায়ের ক্ষুরে থাকবে। কিন্তু ধৃত সাহেদ সেরূপে দাঁড়াতে পারলো না।
তিক্ততা ও বিষাদ রাজনীতিপ্রসূত নয়, বরং লড়াই নির্ধারিত স্থানে ক্ষিপ্ত ষাঁড়ের পরিণতি যে অনিবার্য মৃত্যু, সেটা সে উপলব্ধি করেছে। তার ক্ষেত্রে ক্ষমতা আর যাই হোক কুসুমাস্তীর্ণ নয় সেটাও উপলব্ধি করেছে।
সে প্রকৃতিতে অত্যন্ত শান্ত, মার্জিত। হাসিটা প্রাণখোলা। অথচ ভেতরটা তার ক্ষিপ্র। সে তিক্ততার প্রতিচ্ছবি, সব অহংকার ক্ষতবিক্ষত তার।
সাহেদকে কানে কানে কেউ কী বলছিলো, ‘সবকিছু ছেড়ে দাও মহামহিম, নিজেকে রক্ষা কর দূরে কোথাও চলে গিয়ে। ধরা পড়লে তোমাকে কেউ ক্ষমা করবে না।”
সে কারণেই কী শাহেদ চেনাজানা সাতক্ষীরা সীমান্ত অতিক্রম করতে চেয়েছিলো?
যাহোক, শেষ রক্ষা হলো না। কোন ছবিই তার রক্ষাকবজ হলো না!
আসলেই এক মহা-খলনায়ক।
টিভি টকশোতে অট্রহাসিটার মাঝেও তার কেঁদে ফেলার অবিশ্বাস্য মানবপ্রেম ফুটে উঠতো। যে কাউকেই আকৃষ্ট করতে পারতো অনায়াসে,উন্মুক্ত আবেগে। সে গুলিও ছুঁড়তে জানে লক্ষ্যভেদেও নাকি সুনিপুণ।
অথচ, এখন প্রতিদিনের সন্দেহ, এটাই তার জীবনের শেষ দিন। মুখে ছাপ পরিস্ফুট,যৌবন এখন জীবনের দূরের স্মৃতি। ঠোঁটও নিরাসক্ত। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসার মুখে সম্মতির ভঙ্গিতে শুধু মাথা নাড়িয়েছে। সেই মূহুর্ত থেকে তার খোলামেলা ভাব অপসৃত। কন্ঠস্বর, যা কদিন আগেও ছিল পুরুষোচিত, কর্তৃত্ববাদী তা হয়ে গেছে পরিবর্তিত। অত্যন্ত বিনয়কন্ঠে নাকি সে বলছিলো,’প্লিজ গো এহেড, শুরু করুন।’ প্রশ্ন উপলব্ধি করে সর্পিল দক্ষতায় জবাবও দিচ্ছিল। কিন্তু রিমান্ড বলে কথা! তার রক্ত নাকি এক সহস্র শতাংশ পাক হানাদার। পুরুঠোঁটের সঙ্গে একটা বিরাট মুখমণ্ডল একাকার। উগ্রনাক ও কালো কাঁচে আবৃত চোখ দুটো। সাদাদাঁতে হাসি ছড়ালে যেন নেকড়ের দাঁত।
সাহেদের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে নীরবতার ভারী পর্দা ঝুলানো। নিজেকে প্রদর্শনীমূলক ভঙ্গীমায় উপস্থাপন করায় সে ধুর্ত। তার মহাশত্রু মোশে দায়ানের একচোখের আবরণীর ন্যায় চশমার কারণেই সবার থেকে ব্যতিক্রম তা নয়, ব্যতিক্রম অঙ্গভঙ্গির জন্য।
জানা যায়,জন্মের মুহূর্ত থেকেই তার জীবন ব্যতিক্রমধর্মী। আবছা পর্দায় আচ্ছাদিত। কুয়াশার মতো অস্বচ্ছ। নির্লজ্জভাবে সবার সঙ্গে মিশে যেতে পেরেছে। সেলফি আর ছবি প্রতারণার হাতিয়ার। উপস্থাপক সাহেদকে প্রশ্ন করতো, তখন তার হৃদয়ের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যেতো, আবার বিতর্কিত প্রশ্ন এলে তখন সে দরজা রুদ্ধ হয়ে যেতো।
আসলে তাকে দেখলে মনে হবে সে নারী, মদের বিয়ারে প্রাণোচ্ছল হাসিযুক্ত মানুষ নয়, বরং তার প্রকৃতি মানবিকতায় গড়া। সে অকল্যাণকর অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের শত্রু। অথচ উল্টোটিই সে।
জিজ্ঞাসাবাদে তার কন্ঠস্বর ক্লান্ত, প্রায় শব্দহীন, অনুচ্চ কন্ঠ। চেহারায় আতঙ্ক ও ক্লান্তির ছাপ। শ্বেতশুভ্র চুলগুলো কেটে ন্যাড়া হবার ইচ্ছে পূরণ হয়নি। বোরকার নিচে ঢেকে রাখা ক্ষীণ, ভগ্নপ্রায় দেহটা রাজকীয় বেশ হারিয়ে উৎকন্ঠায় উদ্বিগ্ন। ঠোঁট তালাবদ্ধ দরজার মতো রুদ্ধ। শীতের বাতাসের মতো শীতল হয়ে গেছে চোখ। তর্জনী উঁচিয়ে কথা বলার ফুরসত নেই। মানুষের ঘৃণা তার চোখেই ফুটে উঠেছে।
অদূরদৃষ্টির মূল্য তাকে দিতে হচ্ছে। হতোদ্যম সাতক্ষীরা সীমান্তের উপচে’পড়া উৎসুক জনতার ক্রোধে- ঘৃণায় ও লাঠিঠাসা দু’ঘা পিটনিতে হয়েগেছে সে আসল সাহেদ।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, সেনাপ্রধান, আইজিপি, সামরিক বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও দেশবরেণ্য সাংবাদিক-সম্পাদকদের সঙ্গে সাহেদের ছবি আর ছবি। অসৎ কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তিতে ছবিগুলো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছবিগুলো দেখে হতবিহ্বল ও বিস্মিত জাতি।
একটি অশুভ চক্র আবার ছবিগুলোর উন্মুক্ত প্রদর্শনী করছে অসৎ উদ্দেশ্যে। অন্তর্দৃষ্টির অলৌকিক তত্ত্ব দিয়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে ঝড় তুলেছে। মহলটি নির্বোধের মতো ছবি প্রদর্শন করে – গুনীমান্যি ব্যক্তিত্বদের কালিমা দিতে চাচ্ছে। এ অপচেষ্টা দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বদের প্রতি চরম অসম্মান প্রদর্শনেরই শামিল। এটাও একটা অপরাধ। অত্যন্ত হীন মানসিকতা। একটা ধৃর্ত প্রতারকের সঙ্গে নিজ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিবর্গের আপত্তিকর চরিত্রহনন করাও একটা ধৃষ্টতা। এরা অতি উৎসুক দুষ্টচক্র। সাহেদকে গ্রেফতার করেছে কে? সরকারেরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বড় কর্মকর্তাদের ছবি কি তাকে রক্ষা করেছে? করেনি। তাকে অপরাধী হিসাবেও সনাক্ত করেছে কে? সংবিধিবদ্ধ বিচারিক কর্তৃপক্ষ। ধৃত ব্যক্তিটির সঙ্গে আমারও ছবি থাকতে পারতো। সাংবাদিক হিসাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকেও যেতে হয়। মোবাইল ক্যামেরার যুগে কখন কে একজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে ‘প্লিজ স্যার.একটা সেলফিশর্ট! বলাটাই স্বাভাবিক। এটাই সৃজনশীল সংস্কৃতি। ভাবুন উৎসাহী ব্যক্তিটিকে গলাধাক্কা দিয়ে কি বলা সম্ভব, এই কি করছেন? সংবেদনশীলতায় মুখে মিষ্টি আর অন্তরে বিষ? এটা কেমন কথা!
সাংবিধানিকভাবে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে। এখন রাষ্ট্র কীভাবে বলবে এর মাঝে চোর ডাকাত, বাটপার, খুনী সন্ত্রাসী, লুটেরা আছে বা নেই? নৈতিক স্খলনজনতি অপরাধে অভিযুক্ত ভোটার আছে বা নেই। নেতা-নেত্রীরা সব ভোটারেরই ভোট প্রার্থনা করেন – করতে হয় বলে। সব ভোটারের সঙ্গেই তাদের হাত মেলাতে হয়, বুকজড়ানো ভালোবাসা দিতে হয়ে। ছবি তুলতে হয়।
আদমপুত্র কাবিল থেকেই যে পাপাচারের শুরু, তা চলছে লক্ষ কোটি বছর ধরে। অপরাধ অপরাধী পৃথিবীতে নতুন নয়। অপরাধ হবেই। দেখতে হবে রাষ্ট্র অপরাধীর বিচার করে কিনা, তাকে শাস্তি দেয় কিনা। অপরাধী আছে বলেই তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত এবং জেল জরিমানা।
অপরাধী আছে বলে সনাক্ত করার প্রশ্ন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্ম। এটা উপলব্ধি করতে হবে যে, সাহেদ- সাবরিনার মতো হোয়াইট কলার ক্রিমিনালও এই গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানের ফল। অপরাধী সনাক্ত হয়েছে আমরা এ প্রয়াসকে সুস্বাগতম জানাবো। এটাই সুনাগরিকের দায়িত্ব। দেশাত্মবোধের পরিচয়। কিন্তু তা জানিয়ে আমরা ছবি প্রদর্শনমূলক দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বদের অসম্মান করে রাষ্ট্রকে কী দিচ্ছি! সরকারের সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাহেদকে আইনের আওতায় এনেছে। তার বিচার হবে। এটাই সুখবর। যারা ছবিপ্রদর্শনের গানে-নৃত্যে গা ভাসিয়েছে, তারা কি সাহেদকে ধরেছে? ধৃর্তদের মূল উৎপাটনে যদি রাষ্ট্র ব্যর্থ হয় বা হতো, তাহলে এই অপরাধীদের শিকার পুরো জাতি হতো। যাদের অসম্মান করা হচ্ছে, কার্যত তারা
রাষ্ট্রযন্ত্র- দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব।
সাহেদ- সাবরিনার মতো ভদ্রবেশী অপরাধীদের সঙ্গে দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বদের ‘প্রশ্রয়দাতা’ বানিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা নিজের দেশকে বিশ্ববাসীর কাছে ছোট করে দেয়ারই নামান্তর।

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019