২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সুদের টাকা আদায় করতে মা-মেয়েকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন। আজকের ক্রাইম-নিউজ

সুদের টাকা আদায় করতে মা-মেয়েকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন। আজকের ক্রাইম-নিউজ

আজকের ক্রাইম ডেক্স:: গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সুদের টাকা আদায় করতে বিধবা মা ও ১০ শ্রেনীতে পড়ুয়া তার মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পাষবিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাওনাদারদের পাশবিক নির্যাতনে বিধবা মা ও মেয়ে আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ নিজেদের বাঁচাতে ৯৯৯-এ এবং ১০৯-এ ফোন দিলেও পুলিশ তাদের উদ্ধার করতে যায়নি।

আহতরা হলেন- কালিয়াকৈর উপজেলার সিরাজপুর এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৩০) ও তার মেয়ে মাহবুবা আক্তার ঝুমা (১৬)। ঝুমা মনিপুর আইডিয়াল পাবলিক স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী।

ভুক্তভোগী পরিবার, এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছর আগে মমতাজ বেগমের স্বামী আব্দুর রশিদ ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর মমতাজ বেগম তার একমাত্র মেয়ে ঝুমাকে নিয়ে বনের জমিতে বসবাস করে আসছেন। এছাড়া তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করে অনেক কষ্টে তার মেয়ে ঝুমাকে লেখাপড়া করিয়ে আসছেন। নানা অভাব-অনটনের মধ্যে কোন রকমে তাদের সংসার চলছে। কিন্তু তাদের সংসারে হানা দেয় একটি প্রতারক চক্র। ওই চক্রের ফাঁদে পড়ে স্বর্ণালংকারসহ আনুমানিক প্রায় ৩ লাখ টাকা ঋণ গ্রস্ত হয়ে পড়েন বিধবা মমতাজ বেগম। পরে তাকে বাধ্য হয়ে স্থানীয় গফুর ডাইভার ও মনির হোসেনের পরিবারসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় দুই মাস কাটতে না কাটতেই সুদখোররা সুদের টাকা আদায় করতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-দমকি দেন। এ বিষয় নিয়ে চলতি মাসের ১ তারিখ সন্ধ্যায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহীম সিকদার মধ্যস্থতা করে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য এক মাসের সময় বেধে দেন। কিন্তু বেধে দেওয়া সময় শেষ না হতেই সুদখোর গফুর ডাইভার, তার স্ত্রী কুলসুম বেগম, ছেলে রিপন হোসেন এবং সুদখোর মনির হোসেন ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগম, মেয়ে মুক্তা আক্তার, ছেলে শহিদ হোসেন, স্থানীয় নয়ন হোসেন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিধবা মমতাজ বেগমের বাড়ি ঘেরাও করে। এসময় তারা সুদের টাকা আদায় করতে বিধবা মমতাজ বেগমকে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করতে থাকে। মাকে মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ঝুমা এগিয়ে গেলে তাকেও একই গাছে বেঁধে রাখে। এ করুণ দৃশ্যটি ভিডিও ধারণ করতে গেলে মমতাজের ছোট বোন মেহেরিন সুলতানা নুরমিনকেও তারা গাছের সঙ্গে বাধার চেষ্টা করেন। তাদের মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেধে প্রায় ঘন্টাখানেক পাশবিক নির্যাতন চালালেও কেউ এগিয়ে আসেনি। দৌঁড়ে কোন রকমে পালিয়ে গিয়ে নুরমিন প্রথমে ৯৯৯-এ পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে ফোন দেন। ৯৯৯-এ এবং ১০৯-এ ফোন দিলেও কোন পুলিশ আমাদের উদ্ধার করতে যাননি। এমনকি স্থানীয় ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই জামাল উদ্দিনকে জানালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। পরে ওই ইউপি সদস্য বিধবা মা ও মেয়েকে উদ্ধার করলে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এরপর তারা ওইদিন বিকেলে বিধবা মমতাজ বেগম বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে কালিয়াকৈর একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী বিধবা মমতাজ বেগম বলেন, একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা হারিয়েছি। ওই টাকা যোগাড় করতে গফুর ডাইভার ও মনির হোসেনের পরিবারসহ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদ করতে হয়েছে। ওই টাকা ফেরত দেয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহীম আমাকে আগামী এক মাসের সময় দিয়েছেন। আমি ওই টাকা ফেরত দিবো। কিন্তু ওই সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা বাড়ি ঘেরাও করে আমাকে ও আমার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেধে পাষবিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমাদের বাঁচাতে আমার ছোট বোন ৯৯৯-এ কল দিলেও পুলিশ আমাদের উদ্ধার করতে আসেনি।

তবে অভিযুক্ত গফুর ড্রাইভার বলছেন, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি মিথ্যা। তবে আমি মারি নাই, আমি জানিও না। অপর অভিযুক্ত মনির হোসেনের মোবাইলে ফোন দিলে রিসিভ করে তার মেয়ে মুক্তা। তিনি বলেন, উল্টো মমতাজ বেগমরাই আমাদের মারধর করেছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহীম সিকদার জানান, ঘটনা শুনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেধে তাদের মারধর করছে। পরে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। তবে ঘটনাটি দুঃখজনক।

ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় ৯৯৯-এ থেকে ফোন আসলে স্থানীয় মেম্বারকে পাঠানো হয়েছে।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019