২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪১ অপরাহ্ন, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, বুধবার, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
দাবি না মানায় ইয়াবা নাটকের বলি প্রধান শিক্ষক! আজকের ক্রাইম-নিউজ

দাবি না মানায় ইয়াবা নাটকের বলি প্রধান শিক্ষক! আজকের ক্রাইম-নিউজ

আজকের ক্রাইম ডেক্স
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১নং উত্তর হামছাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মাসুদ আলম সোমবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উপবৃত্তি সংক্রান্ত দাফতরিক কাজে বিদ্যালয়ে যান। এ সময় বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একটি ভবনে স্থানীয় একটি যুবসংঘের অফিস ব্যবহার করার পুরনো দাবি নিয়ে আবারো সংগঠনের নেতারা সেখানে যান। কিন্তু শিক্ষক মাসুদ আলম তাদের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই সংগঠনের নেতারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে ইয়াবা সেবনের ‘নাটক সাজিয়ে’ ফাঁসানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

‘ইয়াবা সেবনের’ ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে কৌশলে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে ওই ভিডিওটি মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে ভাইরাল করার চেষ্টা করে যুবসংঘের নেতারা। ‘ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামসহ’ প্রধান শিক্ষককে আটকের দাবি করেন যুবসংঘের সভাপতি মাকছুদুর রহমান। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলে গিয়ে ইয়াবা সেবনের কোনো আলামত বা আটককৃত কাউকে খুঁজে পাননি তারা। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী মো. মাসুদ আলম লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উত্তর হামছাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। অভিযুক্ত মাকছুদুর রহমান একই এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় উত্তর হামছাদী যুবসংঘের সভাপতি।

স্থানীয়রা জানায়, উত্তর হামছাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাসুদ আলম। সম্প্রতি বিদ্যালটিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান তিনি। গত কিছু দিন থেকে বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত ভবনে অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য অনুমতি চায় স্থানীয় যুবসংঘের সদস্যরা। সরকারি ভবনে বেসরকারি কোনো সংগঠনের অফিস ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় তাদের প্রস্তাবে রাজি হননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই সংঘের সদস্যরা। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে তাড়ানোর সুযোগ খুঁজতে থাকেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন সন্ধ্যায় উপবৃত্তি-সংক্রান্ত দাফতরিক কাজে বিদ্যালয়ে এলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে যুবসংঘের সদস্যরা দলবদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে ইয়াবা সেবনের নাটক সাজিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধাম শিক্ষক মাসুদ আলমকে আটক করে।
বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে ও প্রধান শিক্ষকের কক্ষের টেবিলের ওপরে কয়েকটি দিয়াশলাইয়ের কাঠি, সিগারেটের খালি প্যাকেট, মেঝেতে পলিথিনের কাগজে মোড়ানো সিগারেটের শেষাংশ, প্লাস্টিকের বোতল ও বোতলের ছিপি ইত্যাদি দিয়ে ইয়াবা সেবনের নাটক সাজিয়ে হেনস্তা করে যুবসংঘের সদস্যরা। এ সময় কৌশলে মোবাইলে নাটকীয় ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তারা। পরে তাদের ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই প্রধান শিক্ষক।

তিনি আরো বলেন, যুবসংঘের সভাপতি মাকছুদুর রহমানের নেতৃত্বে সদস্যরা কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে তাকে সন্ত্রাসী কায়দায় টানাহেঁচড়া করে লাঞ্ছিত করে। পরে ইয়াবা সেবনের অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে জোরপূর্বক ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে তারা। এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে যুবসংঘের সভাপতি মাকছুদুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ে যুবসংঘের অফিস ব্যবহার বিষয় নয়। প্রধান শিক্ষক ইয়াবা সেবন করেন এমন অভিযোগে গত ২৫ দিন ধরে হাতে নাতে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা। ঘটনার দিন সদস্যদের সন্দেহ হলে বিদ্যালয়ে গিয়ে ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামসহ তাকে আটক করে পরে আমাকে খবর দেওয়া হয়। এতে নাটক সাজানোর প্রশ্নই আসে না।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহসভাপতি ও সদর উপজেলা সহকারী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মফিজ উল্যা বলেন, খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাসহ স্থানীয়রা এগিয়ে এলে প্রথমে ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেয় ওই সংঘের সদস্যরা। পরে তার অনুরোধেই উপস্থিত যুবসংঘের সদস্যদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার শর্তে মুক্তি পান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ আলম। তিনি আরো বলেন, প্রধান শিক্ষককে কখনোই বিদ্যালয়ের আঙিনা কিংবা বাইরে কোথাও সিগারেট খেতেও দেখেননি তিনি। তবে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে যুবসংঘের অফিস করতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
লক্ষ্মীপর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে ইয়াবা সেবনের কোনো আলামত বা কাউকে খুঁজে পাননি তারা। তা ছাড়া এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি কেউ।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল কুমার ঘোষ বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি একজন গণমাধ্যম কর্মীর মাধ্যমে শুনেছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে দোষী প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া ঘটনাটি যদি ষড়যন্ত্রমূলক হয়, তাহলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019