২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, শনিবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
বরিশালে তীব্র গরম ও তাপদাহে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের মাঝে খাবার স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেঃ রেকর্ড, বানারীপাড়ায় বৃষ্টি কামনায় ইস্তিসকার নামাজ আদায় দর্শনায় তৃষ্ণার্থ পথচারীদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ,স্যালাইন এবং শরবত পানি বিতরণ ঘোড়াঘাটে সড়ক দুর্ঘটনায় চালক- হেলপার নিহত ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রতীক পেয়ে ভোটের মাঠে প্রার্থীরা সুন্দরগঞ্জে যুবলীগ নেতা আজমের উপর দুর্বৃত্তদের হামলা চুয়াডাঙ্গায় রাতে বাবাকে নিতে আসতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলের মুত্যু, দু’ বন্ধু মারাত্নক জখম বানারীপাড়ায় বসতঘরে লাগা আগুনে শতবর্ষী বৃদ্ধার করুন মৃত্যু ! বাংলাদেশের উন্নতি দেখে এখন লজ্জিত হই: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
ওসি শিশিরের অপকর্ম তদন্তে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের টিম বরিশালে

ওসি শিশিরের অপকর্ম তদন্তে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের টিম বরিশালে

ডেক্স প্রতিবেদক: বরিশাল জেলা পুলিশের সর্বাধিক বিতর্কিত বর্তমান বানারীপাড়া এবং সাবেক উজিরপুর থানার ওসি শিশির কুমার পালের অপকর্ম তদন্তে ঢাকা পুলিশ হেটকোয়াটার্সের একটি টিম গত দুইদিন ধরে বরিশালে অবস্থান করছে। এর আগেও এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঢাকা হেডকোয়াটার্স থেকে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল।

তদন্তের একটিরও এখনও আলোর মুখ দেখেনি। যা চলমান রয়েছে বলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এরই মধ্যে উজিরপুরে একজন শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মারধরের মামলা দিয়ে সেই ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে এই পুলিশ কর্মকর্তা অতিউৎসাহি ভূমিকা রেখেছিল। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৪ জুন উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম নারায়নপুর গ্রামের ছয় বছরের এক শিশুকে শাপলা তুলতে সহায়তা করলে খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি কলাবাগানে নিয়ে যায় স্থানীয় মান্নান বেপারী। এরপর ধর্ষণ চেষ্টা করলে শিশুটি আত্মচিৎকার দিলে তাকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিশুটির মা শিউলি বেগম আইনের আশ্রয় নিতে গেলে সংশ্লিষ্ট থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিশির কুমার পাল তাদের অবহেলা করেন।

ওই শিশুর পিতা প্রতিবন্ধী হওয়ায় একপর্যায়ে তাকে ওই পুলিশ কর্মকর্তা সমঝোতায় যেতে চাপ প্রয়োগ করে। ওই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবরের শিরোনাম হলে ধুরন্দর পুলিশ কর্মকর্তা শিশির কুমার পাল ২৭ জুন একটি মারধরের মামলা নিয়ে বিষয়টি ভিন্নদিকে প্রবাহিত করে নিজেকে বিতর্ক থেকে দূরত্বে রাখেন। কিন্তু মিডিয়া প্রকাশিত সংবাদে ঘটনার সবিস্তর উঠে আসায় ফাঁস হয়ে যায় পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষমতা অপব্যবহার কিভাবে করেছে। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রনি খানের ভাষ্য ছিল, তিনি এগিয়ে এসে দেখতে পান বিবস্ত্র মান্নান শিশুটিকে ঝাপটে ধরে আছেন এবং চিৎকার দেয়ায় হত্যার চেষ্টায় পানিতে নামায়। মান্নানের বাড়ি একই গ্রামে এবং কিছুটা প্রভাবশালী। ঘটনার বহুদুর গড়ালে মান্নান বেপারি তিন ছেলে রুবেল, রাসেল, সোহেল, স্ত্রী পিয়ারা বেগম ও শ্যালক আ: ছত্তার থানা অভ্যন্তরে ওসি শিশির কুমার পালের সাথে গোপন বৈঠক করে আত্মরক্ষার আর্থিক সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হন। তারই আলোকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা মারধরের ঘটনা রূপ দিতে সাজানো হয় একটি নাটক। সর্বশেষ মিডিয়া এ বিষয়ে সজাগ থাকায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা একটি মামলা নিতে বাধ্য হয়।

অবশ্য মান্নান বেপারিকে অন্তত ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ থেকে রক্ষার এই পন্থা নিয়েও মিডিয়ায় খবর প্রকাশ পায়। ঢাকার জাতীয় গণমাধ্যমসহ আঞ্চলিক পত্র-পত্রিকায় এই ঘটনার শুরু থেকে থানা পুলিশের নাটকীয়তা নিয়ে ফের সংবাদ প্রকাশিত হলে ঢাকা পুলিশ হেডকোয়াটার্স বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেয়। এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে দায়িত্বরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনকে সরেজমিন পরিদর্শন করার নির্দেশ দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন তারই প্রেক্ষাপটে গতকাল মঙ্গলবার বরিশালে পৌঁছে উজিরপুরে যান এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে গত বছরের ২৪ জুনের সেই ঘটনা সম্পর্কে অবগত হতে চান। এ সময় তৎকালীন উজিরপুর থানার ওসি শিশির কুমার পালের অসহযোগীতার বিষয়টি নিশ্চিত হতে চান। সূত্র জানায়, তদন্তে আসা এই পুলিশ কর্মকর্তা বিচক্ষনতার সাথে সময় নিয়ে ওসি শিশিরের সেদিনের ভূমিকা প্রকৃত অর্থে কি ছিল তা যাচাই-বাছাই করে সত্য উদঘাটন করতে চান। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় উজিরপুরের এই ঘটনা নিয়ে পুলিশ হেডকোর্য়াটার ওসি শিশিরের অসহযোগীতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে তদন্ত গঠন করে তাকে দায়িত্বভার দেন। কিন্তু তৎসময়ে দেশে করোনা প্রাদুর্ভাব বিস্তার এবং ভাইরাস নিয়ে দেশব্যাপি আতঙ্ক-উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়ায় পুলিশ প্রশাসনের ব্যস্ততা এবং যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশু ধর্ষণ চেষ্টার বিপরীতে মারামারির ঘটনা রূপ দেয়ার নায়ক শিশিরের বিষয় জানতে সময়ক্ষেপন ঘটেছে। ততক্ষণে ওসি শিশির কুমার উজিরপুর থেকে বানারীপাড়া থানায় বদলি হয়ে যায়।

বর্তমানে তিনি সেখানে কর্মরত রয়েছেন। তদন্তে আসা এই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য ২৯ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে উজিরপুরের এই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন পুলিশ হেডকোয়াটার্সের নজরে আসার পরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, এর আগেও ওসি শিশির কুমারের কর্মকান্ড অর্থাৎ আরও তিনটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পাশাপাশি জেলা পুলিশ থেকেও দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ সকল ঘটনায় সবকটিতেই এই পুলিশ কর্মকর্তার অসহযোগী ও পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ ছিল। কিন্তু অদ্যবধি কোন তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট অজ্ঞাত কারনে জমা দিতে পারেনি।

তবে অভিযোগ রয়েছে জেলা পুলিশের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা ওসি শিশির কুমারের পক্ষে থাকায় কোন তদন্তই শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখছে না। বরং ওসি শিশির যত বিতর্কিত হয়েছেন জেলা পুলিশ তত পুরষ্কৃত করায় সংশ্লিষ্ট থানায় বহাল থাকাসহ নির্যাতিতদের অভিযোগ ভুয়া বলে মন্তব্য করে সৃষ্ট ঘটনা থেকে নির্যাতিতদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এমন অভিযোগও রয়েছে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ওসি শিশির সম্পর্কিত অভিযোগ নিয়ে গেলে তা আমলে নেয়া হয়না। আবার প্রকাশিত সংবাদ ভুয়া প্রমাণ করতে জেলা পুলিশ বিশেষ ব্যক্তিদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে শিশিরের অনূকুলে বক্তব্য উপস্থাপন করে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবেদককে উল্টো দায়ী করার নজিরও রয়েছে।

এভাবে জেলা পুলিশ সহায়তা করায় ওসি শিশির প্রকারান্তরে হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া। ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে আর্থিকভাবে ফুলেফেপে হয়ে ওঠেন গাড়ি-বাড়ির মালিক। পরিবহন ব্যবসাসহ একাধিক আলিশান অট্টালিকাও গড়ে তুলেছেন। মাঠ পুলিশের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা তৈরির অভিযোগও রয়েছে। ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উজিরপুরের জল্লা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু আততায়ীর গুলিতে প্রকাশ্যে নিহত হন। তখন ওসি শিশির ওই এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবকদের মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। পাশাপাশি হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে উত্তেজিত নান্টুর সমর্থকদের উস্কে দিয়ে বেশ কিছু মুসলিম পরিবারের বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজে দাড়িয়ে থেকে অগ্নিসংযোগে সহায়তা করে।

সেই থেকে ওসি শিশিরকে সাম্প্রদায়িক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ভাবা হতো। এছাড়া নিহত নান্টু চেয়ারম্যান হত্যার দায়ে এক যুবককে ঢাকা থেকে ধরে এনে ক্রসফায়ারে হত্যার পর আতঙ্ক সৃষ্টি করে ওসি শিশির। এরপর ওই মামলা ফাঁসানোর ভীতি সৃষ্টি করে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেছে বলে বিভিন্ন মহল অভিযোগ জানিয়ে আসছে। অপর একটি সূত্র জানায়, উজিরপুরে থাকাবস্থায় বহু অপকর্ম এবং সাংবাদিক নিগৃত করার হোতা ওসি শিশির স্থানীয় বিভাজন আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে একটি পক্ষের চিহ্নিত হওয়ায় তাকে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর পাশ্ববর্তী বানারীপাড়া থানায় বদলি করা হয়। বর্তমানে ওসি শিশির কুমার পাল সেখানেই কর্মরত রয়েছেন।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019