০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, ২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, রবিবার, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবেলায় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জেলার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে একটি করে কন্ট্রোল রূম খোলা হয়েছে।
জেলায় ৪০৩টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে দুর্যোগকালীণ বা পরবর্তী সময়ে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১০০ মেট্রিকটন চাল, ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ১৬৬ বান্ডিল টিন এবং ৩৫০০ কম্বল মওজুদ রাখা হয়েছে।
শুক্রবার পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভায় এসব তথ্য জানান হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী। সভায় পটুয়াখালী শেখ হাসিনা সেনানিবাসের প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন শিবলী জানান, সরকারের সবশেষ রিসোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. আবদুল মোনায়েম সাদ জানান, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা প্রশাসনের বাইরে স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে পৃথক একটি করে কন্ট্রোল রুম চালু রাখা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো জরুরি ভিত্তিতে যাতে যে কোন মুহুর্তে খোলা যায়, তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ফিরোজ আহমেদ জানান, দুর্যোগের আগাম প্রচার প্রচারণা এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য তারা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। অনেক জেলে এখনও সাগরে রয়ে গেছে। তারা তীরে ফিরে আসতে পারেনি। আবার বহু জেলে ফিরে এসেছে। সাগর থেকে কুয়াকাটায় ফিরে আসার পথে একটি মাছ ধরা ট্রলার থেকে ঝড়ো হাওয়ায় বেলাল হোসেন (৪০) নামে এক জেলে সাগরে ছিটকে পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার সকালে এফবি মা কুলসুম নামের একটি মাছ ধরা ট্রলার থেকে পড়ে তিনি নিখোঁজ হন। নিখোঁজ বেলাল হোসেন পঞ্চগড় জেলার কুরবান আলীর ছেলে। কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনসার মোল্লা নিখোঁজের সত্যতা স্বীকার করে জানান, ট্রলারটিতে ১৫ জন জেলে ছিল।
অপরদিকে, পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে বুলবুল ৬৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওডিশা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে পটুয়াখালী জেলায় হাল্কা ও মাঝারি মাত্রায় বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার সকাল থেকে পটুয়াখালী এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়বে। শনিবার সন্ধ্যার দিকে এ অঞ্চল দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যেতে পারে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জেলার উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জেলার সাগরপাড়ের রাঙ্গাবালী, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলায় হালকা দমকা বাতাসের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবলায় গলাচিপা উপজেলায় সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার বিবরণ দিয়ে ইউএনও শাহ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার সবকটি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অপেক্ষাকৃত দুর্যোগ ঝূঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন চরকাজল, চরবিশ্বাস, পানপট্টি, গলাচিপা সদর ইউনিয়ন এবং চরবিশ্বাস ইউনিয়নের দ্বীপচর চরবাংলা, গলাচিপা ইউনিয়নের দ্বীপ চরকারফারমায় অতিরিক্ত নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। উপজেলা সদরে কন্ট্রোল রুম খুলে সবকিছু তদারকি করা হচ্ছে। সভায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুহৃদ সালেহীন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসএম দেলোয়ার হোসেন, পৌর মেয়র আহসানুল হক তুহিন, অফিসার ইনচার্জ আখতার মোর্শেদসহ কৃষি বিভাগ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন