০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, মঙ্গলবার, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ
বাংলাবান্ধা মহানন্দা নদীর তীরে বালু
চরে পুঁতে রাখা ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতার করেছে তেঁতুলিয়া থানা পুলিশ।
নিবিড় তদন্ত ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কুলেস হত্যা কান্ডের রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামী বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের জায়গীরজোত গ্রামেন মৃত সলেমান আলী পুত্র নশিরুল হক (৪২), নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার ওরফে শ্যামলী (৩৪) গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারকৃতরা সোচ্ছায় ঘটনার বিবরণ ও ভিকটিম জুয়েলকে হত্যার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তী মূলক জবানবন্দি দেন।
স্ত্রী সেলিনা আক্তার ও তার পরকিয়া প্রেমিক নশিরুল হকের কল লিষ্ট পর্যালোচনা ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ২১ নভেম্বর তারিখে ভোরে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ থানার ভবানীপুর ডাঙ্গার হাট এলাকায় জনৈক আজিজুল ইসলামের মালিকাধীন এনএবি ইটভাটা হইতে গ্রেফতার করা হয়। এবং আসামী সেলিনা আক্তার ওরফে শ্যামলীকে তার পিতার বাড়ি ঝালঙ্কনী কাজীপাড়া বোদা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বিবরণে জানা যায়, নিহত জুয়েল ইসলাম ও স্ত্রী সেলিনা আক্তার ওরফে শ্যামলীর গ্রামের বাড়ি জেলার বোদা উপজেলায়। কাজের সন্ধানে তারা তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা আসে এবং বাসা ভাড়া নিয়ে এলাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে থাকেন। কাজের সুবাদে ২০১৭ সালে আসামী নশিরুল হকের সাথে পরিচয় হয় শ্যামলীর। পরিচয়ের এক পর্যায়ে পরকিয়া সম্পর্ক শুরু হয় তাদের প্রায় ফোনে কথা বলত। স্ত্রীর পরকিয়া সম্পর্কের কথা জেনে যায় জুয়েল। এ নিয়ে স্বামী স্ত্রী মধ্যে মনোমালিন্য শুরু এবং একপর্যায়ে সেলিনা তার বাবার বাড়ীতে চলে যায়। সেলিনার সাথে জুয়েলের ফোনে কথা চলতে থাকে। সেলিনার সহিত বাবার বাড়িতে গিয়ে কয়েকবার দেখা করেন আসামি নাশিরুল এবং তাকে কিছু জিনিসপত্র কিনে দেয়। এভাবেই পরকিয়া সম্পর্ক চলিতে থাকে। ২০২২ সালে নিহত জুয়েল স্ত্রী সেলিনা পুনরায় বাংলাবান্ধা আসিয়া বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করিলে স্ত্রী আসামী সেলিনা আসামী নশিরুল আবার যোগাযোগ করে এবং তার বাসা সহ বিভিন্ন জায়গায় শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয়। একপর্যায়ে জুয়েল তাদের শারীরিক সম্পর্কের কথা জেনে যায়। ফলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আবার ঝামেলা শুরু হয়। ফলশ্রুতিতে আসামী নশিরুল ও পরকীয়া প্রেমিকা আসামী সেলিনা স্বামী জুয়েলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা আনুযায়ী ৭ সেপ্টেম্বর স্ত্রী সেলিনা ও তার পরকিয়া প্রেমিক নশিরুল হক জুয়েলকে কৌশলে রাতে জায়গীরজোত সীমান্তে মহানন্দা নদীর বালুর চড়ে নিয়ে যায়। পরিকল্পনা মোতাবেক জুয়েলকে ধারালো ছোরা ও লোহার রোড দিয়া জুয়েলকে মাথা ও মুখমন্ডল, গল ও হাতে উপর্যুপরি আঘাত করিয়া হত্যা করে লাশ বালুর নিচে চাপা দেয়। হত্যা কান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র নদীতে ফেলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরের দিন ৮ সেপ্টেম্বর সকালে আসামী সেলিনা আক্তার তার দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে বাংলাবান্ধাস্থ ভাড়া বাসা ছেড়ে বোদা থানায় বাবার বাড়ীতে চলে যায় এবং পরকিয়া প্রেমিক নশিরুল হক নিজ এলাকা ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যায়।
পরদিন স্থানীয় লোকজন রক্তের দাগ ও আলগা বালু দেখতে পেয়ে সন্দেহ হইলে বালু সড়াইলে মানুষের হাতের আঙ্গুল দেখতে পায়। তাৎক্ষণিক তেঁতুলিয়া মডেল থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু সড়াইয়া চাপা দেওয়া অবস্থায় অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে। লাশের গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গভীর ক্ষত চিহ্ন উভয় চোয়ালের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন, ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল ও তালুর মধ্যে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন উপরের চোয়ালের দাতের মাড়ি ভাঙ্গা এবং মাথা, মুখমন্ডল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক চিহ্ন ছিল। মাথার পিছনে গভীর ক্ষত চিহ্ন মগজ বাহির হয়ে যায়। লাশের দুই পা লাইলনের রশি দ্বারা বাঁধা ছিল। তেঁতুলিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত সহ অন্যান্য আইনগত কার্যক্রম শুরু করেন।