২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, বুধবার, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ঝালকাঠি প্রতিনিধি :ঝালকাঠি পৌর এলাকার বাসন্ডা নদীর পশ্চিম পাড় ভাঙ্গনের রোধে শহর রক্ষা স্থায়ী বেড়িবাধ নির্মাণের দাবিতে শুক্রবার সকাল ১১টায় পশ্চিম ঝালকাঠি সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহার বাড়ির সামনে এলাকার বাসিন্দারা সংবাদ সম্মেলন করে।
সাংবাদিকবীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঝলকাঠি জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম হিরু , প্রথম আলোর সাংবাদিক আসম মাহামুদুর রহমান পারভেজ ,মোঃ ফোরকান সিকদার সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এছাড়া বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিটার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন ঝালকাঠি পূর্বে বরিশাল জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১ এপ্রিল ১৮৭৫ সালে ঝালকাঠি পৌরসভার গোড়াপত্তন হয়। ১৮৮২ সালে ঝালকাঠিতে একটি পুলিশ থানা স্থাপন করা হয় মূল ঝালকাঠি আজ এই পশ্চিম ঝালকাঠিতে। নদী বন্দরের জন্য ঝালকাঠি সবসময় ইউরোপীয়দের আকর্ষণ করেছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ডাচ ও ফরাসিরা এখানে ব্যবসা কেন্দ্র খুলেছিল। বাণিজ্যিক গুরুত্বের জন্য ঝালকাঠিকে দ্বিতীয় কলকাতা বলা হত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরে ১৯৭২ সালের ১ জুলাই ঝালকাঠি থানাকে বরিশাল জেলার মহকুমায় উন্নীত করা হয়। পহেলা ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ঝালকাঠি থানাকে বরিশাল জেলা থেকে পৃথক করে পূর্ণাঙ্গ জেলায় পরিণত করা হয়।
সবুজ মাঠ গাছ-গাছালি, নদী-নালা, খাল-বিল, অপার সৌন্দর্যমন্ডিত পরিপাটি জেলা ঝালকাঠি। কবি কামিনী রায়ের জন্মস্হান বাসন্ডা নদী তীরে। এই বাসন্ডা নদী ঝালকাঠি শহরকে বিভক্ত করে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে সন্ধ্যা নদীর সাথে মিলিত হয়। জগের দিনে বড় বড় লঞ্চ এই নদী দিয়ে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতো। আজ নেই পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
ঝালকাঠির বাসন্ডা নদীর পূর্ব তীরের প্রাচীন নাম ছিল ‘মহারাজগঞ্জ’। এখানকার ভূ-স্বামী শ্রী কৈলাশ চন্দ্র এখানে জমিদারি বৈঠক সম্পাদন করতেন। বাসন্ডা নদী পশ্চিম তীরেই ছিলো মূল ঝালকাঠি।
কালের বিবর্তনে পূর্ব তীরে নামকরন হয় ঝালকাঠি। আজ সেই মূল ঝালকাঠি পৌরসভার ৬ ও ৭ ওয়ার্ড অন্তভূক্ত। সেই পশ্চিম ঝালকাঠি অধিবাসী আমরা। পৌর ট্যাক্স ও খাজনা দিলেও সরকারের এবং পৌরসভার সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পৌর মানচিত্র থেকে পৌরসভার ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ড হারিয়ে যাচ্ছে। এই দুটো ওয়ার্ড মানুষ বাসন্ডা নদীর তীরে বসবাস কওে। এই বাসন্ডা নদী এখন রাক্ষুসীরূপ নিয়েছে। গ্রাস করেছে ঘর বাড়ী, জায়গা জমি, পৌরসভার রাঙাঘাট ইতিমধ্যে গ্রাস করে নিয়েছে। ভাঙ্গনের মুখে প্রায় শতাধিক বাড়ী-ঘর, মাদ্রাসা ও বীর নিবাসসহ বং জায়গা জমি। খুলনা-ঢাকা আঞ্চলিক মহা সড়ক বাসন্ডা নদী থেকে ৫০ গজ দুরে রয়েছে।
এই বাসন্ডা নদী ভাঙ্গনের পৌর সড়ক নদীর গর্ভে বিহীন হয়ে গেছে। ফলে ৭ ও ৬ নং ওয়ার্ড অধিবাসীরা মানুষের বাড়ীর উপর দিয়ে চলাচাল করছে। বাসন্ডা নদীর ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ও পৌর কর্তৃপক্ষের নেই কোন মাথা ব্যথা নেই।
আপনারাও পৌরসভার অধিবাসী আজ আপনারা এসেছেন বাসন্ডা নদীর তীরে ‘বীর নিবাস” প্রাঙ্গনে নিজেনা চোখে দেখে যান ঝালকাঠি পৌরসভার ৬৩৭ নং ওয়ার্ডের আমরা অধিবাসী। আমাদের দুর্ভোগ কত চরমে উঠেছে। ওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ডে নদীর ভাঙ্গন, সড়কের দুরাবস্থা, বিদ্যুৎ সমস্যা, বিশুদ্ধ পানির সমস্যা। রয়েছে। এই সমস্ত সমস্যা সাধানের চিন্তা করেই বাসন্ডা নদীর পশ্চিম পাড়ে অধিবাসীদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘পশ্চিম
ঝালকাঠি বাঁচাও আন্দোলন পরিষদ।” আমরা পশ্চিম ঝালকাঠিতে বিদ্যুৎ সমস্যা, বিশুদ্ধ পানি সমস্যা, সড়ক ও ভাঙ্গন সমস্যা রয়েছে।’ এ সব সমস্যার মধ্যে আমরা সর্ব প্রথম ভাঙ্গন প্রতিরোধ ও সড়ক সংস্কার একান্ত প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সেই আলোকে বাসন্ডা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে বাসন্ডা নদীর পশ্চিম পাড় ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী বেরীবাঁধ নির্মান একান্ত প্রয়োজন।
আমাদের দুর্ভোগ স্ব-চক্ষে দেখার জন্য নদীর তীরে” বীর নিবাস” প্রাঙ্গনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। আমরা আশাকরি আমাদের কষ্ট দুঃখ বেদনা আপনাদের লেখায় প্রকাশিত হবে। আপনাদের লেখায় যদি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ও পৌর কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙ্গে।
আমাদের পিঠ ওয়ালে ঠেকে গেছে এ কথা আগেই বলেছি। আমাদের বাঁচার জন্য, আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি।
সম্মেলনে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষনা করেন পশ্চিম ঝালকাঠি বাঁঁচাও আন্দোলন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহা
১। বাসন্ডা নদীর পশ্চিম পাড় হলো মূল ঝালকাঠি (বর্তমান পশ্চিম ঝালকাঠি) ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী বেড়ীবাঁধ নির্মান করতে হবে। আমাদের দাবী বাস্তবায়নের জন্য আগামী শুক্রবার ২১ জুন সকাল ১১ বাসন্ডা নদীর পশ্চিম পাড়ে মানববন্ধন ও নৌপথ অবরোধ করা হবে।
২। দাবী বাস্তবায়ন না হলে ২৫ জুন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, পনি উন্নয়ন বোর্ড, মাননীয় এমপি মহোদয় জেলা প্রশাসক, ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের বরাবর পৃথক পৃথক ভাবে স্মারক লিপি পেশ।
৩। ২৭ জুন বৃহস্পতিবার ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয় অবরোধ,
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
৪। বাসন্ডা নদী পশ্চিম পাড়ে স্থায়ী বেড়িবাধ নির্মান করা না হলে ৬ জুলাই রোজ শুক্রবার বরিশাল- খুলনা- ঢাকা মহা আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করা হবে।
৫। দাবী পুরন না হলে ১১ জুলাই ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ে সামনে গন অনশন।
৬। সর্বশেষ দাবী বাস্তবায়ন না হলে একটি নিদিষ্ট তারিখে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও কার্যালয়ের সামনে আমরন অনশন করা হবে।