১০ মে ২০২৪, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, ১লা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি, শুক্রবার, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
নার্সারি গড়ে সফল উদ্যোক্তা মমতাজ আক্তার

নার্সারি গড়ে সফল উদ্যোক্তা মমতাজ আক্তার

শহীদুল ইসলাম শহীদ,সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় মমতাজ আক্তারকে। বিয়ের পর পুরোদস্তুর গৃহিনী বনে যান তিনি। তবে লেখাপড়ার পাট না চুকিয়ে স্থানীয় একটি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে বর্তমানে তিনি স্নাতক পড়ছেন। নিজেকে শুধু গৃহিণী হিসেবে নয়, সফল উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই নিজেকে দক্ষ করে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষিত মমতাজ স্বামী-সংসার আর লেখাপড়া সামাল দিয়ে বাড়ির পাশে ১৫ শতক খালি জমিতে নার্সারি গড়ে তোলেন। সেখানে বিভিন্ন জাতের ফলদ ও বনজ গাছের চারা উৎপাদন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে সেখানে বিভিন্ন শাকসবজি উৎপাদন করে এখন সফল উদ্যোক্তা তিনি। নার্সারি গড়ে তুলে নিজে আর্থিকভাবে সফল হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি করেছেন অনেকের কর্মসংস্থান।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের দ‚র্গাপুর গ্রামের কৃষক বেলাল মিয়ার স্ত্রী মমতাজ আক্তার। স¤প্রতি আলাপকালে উঠে আসে তাঁর সফলতার কথা। তিনি জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি ২০১৯ সালে উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গাছগাছালির চারা উৎপাদন ও শাকসবজি চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে সেখান থেকে মাত্র ত্রিশ হাজার টাকা প্রণোদনা নিয়ে স্বামীর পৈত্রিক ১৫ শতক জমিতে বিভিন্ন জাতের গাছের চারা উৎপাদন শুরু করেন। এ কাজে তাঁর স্বামীও তাঁকে সহায়তা করেন।

আয় বাড়াতে বছরখানেক পর বাড়ে বাগানের পরিধি। আরও প্রায় ২ একর জমিতে শুরু করেন বারোমাসি বেগুন, মরিচ, পেঁপেসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন। একই সঙ্গে চলে বিভিন্ন জাতের ফলের কলম চারা উৎপাদন। এতে করে নিজেদের খাবার বাদে শাকসবজি বিক্রি করে তাঁর মাসিক আয় বাড়ে। তাতে স্বামীসহ মমতাজের সংসার চলে। তাঁকে অনুসরণ করে এখন এ গ্রামে আরও কয়েকজন গাছের চারা উৎপাদন ও শাকসবজি চাষ শুরু করেন।

মমতাজ আক্তার বলেন, আমি পুরোদস্তুর গৃহিনী ছিলাম। কিছু একটা করার প্রবল ইচ্ছা থেকে স্বামীর পরামর্শ নিয়ে ২০১৯ সালে নার্সারি শুরু করি। ধীরে ধীরে সফলতা পেয়েছি। বর্তমানে ২ একর জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির উন্নতমানের চারা রয়েছে আমার নার্সারিতে। নার্সারিতে নিয়মিত ১০ জনসহ আরও ৩০-৩৫ জন অস্থায়ী শ্রমিক কাজ করছেন। এখান থেকে বছরে কয়েক লাখ টাকার চারা বিক্রি হয়। আমার নার্সারির চারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা এসে নিয়ে যান। নার্সারিতে কাজ করা শ্রমিকরাও এখান থেকে রোজগার করে স্বচ্ছল হয়েছেন।

এখন আবার শুরু করেছেন গরু-ছাগল ও হাঁস পালন। এবারও মমতাজ যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে গবাদিপশু পালন বিষয়ে একমাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন গরু মোটাতাজাকরণ। খামার থেকে বেশ কয়েকটি গরু বিক্রির পর এখনও তার খামারে আরও ৮-১০টি বিদেশি জাতের গরু রয়েছে। এর পাশাপাশি ছাগল ও হাঁসের খামারও গড়ে তুলেছেন তিনি। অপরদিকে, গরুর খামারের গোবর দিয়ে তিনি ভার্মিকম্পোষ্ট সার উৎপাদন করছেন। মমতাজের তৈরী ভার্মিকম্পোষ্ট সার স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ব‍্যাপক সাড়া ফেলেছে। মেসার্স আলিফ সম্মিলিত কৃষি খামার নামে এই ভার্মিকম্পোষ্ট সারের ব্রান্ডিংও করেছেন তিনি। এই। সবমিলিয়ে খামার থেকে এখন তার মাসিক আয় লাখ টাকা।

মমতাজ আক্তারের স্বামী বেলাল মিয়া বলেন, নারীদের আত্মনির্ভরশীল হতে নিজের ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের প্রয়োজন। সঠিক পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে কোনো কিছুর উদ্যোগ গ্রহন করলে তাতে সফল হওয়া সম্ভব। আমি নিজেও একজন কৃষক। আমি তাকে যথাযথ পরামর্শ দিয়েছি, সবরকম সহযোগিতা করেছি। একসময় আমাদের সংসারে অভাব-অনটন থাকলেও এখন আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি।

নার্সারি গড়ে সফল উদ্যোক্তা মমতাজ আক্তার

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019