২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০২ পূর্বাহ্ন, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, শনিবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
ঘোড়াঘাটে নাশকতার দুই মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৩০ নেতাকর্মী কারাগারে ঘোড়াঘাটে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ২০ রাত ১টার মধ্যে তীব্র ঝড়ের আশঙ্কা, হুঁশিয়ারি সংকেত পুড়ে ছাই আইসিইউ, অসংখ্য যন্ত্রপাতির ক্ষতি চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ রেকর্ড,হিট ওয়েভের সতর্কবার্তা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা রাজনৈতিক নয়: প্রধানমন্ত্রী ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট দেশে তিনদিনের হিট অ্যালার্ট জারি গাড়ি-বাড়ি নিয়ে শো-অফ, ভুয়া ভিসা বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি মামুন বানারীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের ফুলেল শুভেচ্ছায সিক্ত মেনন
ঝালকাঠির অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে বেধে নেয়া সেই মা সুস্থ, ছেলে টিটু’র করোনা পজেটিভ।

ঝালকাঠির অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে বেধে নেয়া সেই মা সুস্থ, ছেলে টিটু’র করোনা পজেটিভ।

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃকরোনাভাইরাসে আক্রান্ত মাকে বাঁচাতে ২০ কেজি ওজনের অক্সিজেন সিলিন্ডার শরীরে বেঁধে মোটরসাইকেলে করে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বরিশালের হাসপাতালে গিয়েছিলেন ঝালকাঠির তরুণ ব্যাংকার জিয়াউল হাসান টিটু। সেই মা এখন সুস্থ। কিন্তু ছেলে টিটু এখন করোনা পজিটিভ।

মায়ের সেবা করতে গিয়ে ছয় দিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে পড়েছিলেন জিয়াউল হাসান টিটু। রাতে করোনা ওয়ার্ডের মেঝেতে ঘুমাতে হয়েছিল তাঁকে। করোনা ওয়ার্ডে থাকার কারণে এবং মায়ের সেবা করায় টিটু করোনায় আক্রান্ত হয়। মা রেহেনা পারভীন, ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু ও ছোট ভাই রাকিব হাসান ইভান ২৩ এপ্রিল শনিবার সকালে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে অ্যান্টিজেন টেস্ট করান। মা ও ছোট ভাইয়ের প্রতিবেদন নেগেটিভ এলেও টিটুর করোনা ‘পজিটিভ’। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মুনীবুর রহমান জুয়েল ফোন করে টিটুকে এ খবর জানান।

টিটু বলেন, ‘আমার শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ নেই। কোনো সমস্যাও নেই। সুস্থই আছি, অক্সিজেন স্যাচুরেশনও ভালো। আমি সবার কাছে দোয়া চাই। তিনি আরও বলেন, ‘যতই বিপদ আসুক না কেন, আমার মা ও ছোট ভাই সুস্থ আছে, এতেই আমার আনন্দ।’

টিটু ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সূর্যপাশা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল হাকিম মোল্লা ও নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেহেনা পারভীনের মেজ ছেলে।

গত ৯ এপ্রিল রেহেনা পারভীনের করোনা শনাক্ত হলে বাড়িতে বসেই চিকিৎসা চলছিল। ১৭ এপ্রিল দুপুরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফোন দেওয়া হয়। তখন জানানো হয়, অ্যাম্বুলেন্স অন্য রোগী নিয়ে বরিশালে চলে গেছে। লকডাউনের মধ্যে কোনো গাড়ি যখন পাচ্ছিলেন না, তখন সংকটাপন্ন মায়ের জীবন বাঁচাতে মোটরসাইকেলে নিজের শরীরে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মায়ের মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান টিটু। পাশে আরেকটি মোটরসাইকেলে ছিলেন রেহেনা পারভীনের বড় ছেলে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান মিঠু ও ছোট ছেলে রাকিবুল হাসান ইভান।

আর এ দৃশ্য দেখতে পেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়কে থাকা চেকপোস্ট থেকে সেই করোনা রোগী বহন করা মোটরসাইকেলটিকে দ্রুত ও অবাধে যেতে দিয়েছে পুলিশ। ওই সময় পুলিশের এক সদস্য একটি ছবি তুলে তা ফেসবুকে পোস্ট করেন। এর পরেই ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ছয়দিন চিকিৎসা শেষে গতকাল শুক্রবার মাকে নিয়ে নলছিটির সূর্যপাশা গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন জিয়াউল হক টিটু। হাসপাতাল থেকে বের হয়েই মায়ের সঙ্গে ছবি তোলেন দুই ছেলে। মায়ের সুস্থতায় ছেলেরা জয়সূচক চিহ্ন দেখিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন। হাসপাতালের চিকিৎসক, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন দপ্তর থেকে তাঁদের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাঁরা।

জানা যায়, গত ১৭ থেকে ২২ এপ্রিল ছয় দিন ধরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন মায়ের সার্বক্ষণিক সেবাযত্ন করেছেন জিয়াউল হাসান টিটু ও তাঁর ছোট ভাই রাকিব হাসান ইভান। ঝুঁকি আছে জেনেও তাঁরা মায়ের সুস্থতার জন্য সেখানে অবস্থান নেন। এমনকি এই কাজে তাদের থামাতে পারেননি চিকিৎসক, নার্স ও স্বজনেরা।

ঝালকাঠি সদরের কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান টিটু বলেন, ‘শনিবার সকালে মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। সেখানে মাকে অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে ফলোআপ টেস্ট করানো হয়। এরপর আমরা দুই ভাইও টেস্ট করাই। দুজনের ফলাফল নেগেটিভ এলেও আমার পজিটিভ এসেছে।

টিটুর মা স্কুল শিক্ষিকা রেহেনা পারভীন বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। আমার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৮-৯৯ আছে। কিন্তু আমার যত্ন নিতে গিয়ে ছেলেটা (টিটু) করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ওকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019