০৮ মে ২০২৪, ০৮:১৩ অপরাহ্ন, ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, বুধবার, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
ভোটকেন্দ্রে টাকাসহ ইউপি চেয়ারম্যান আটক সিলেটে বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনায় সকাল থেকে চলছে ভোট গ্রহণ চুয়াডাঙ্গায় নিজ ইচ্ছায় ৩৭ বছর পর অবসরে যাওয়া ঈমামকে রাজকীয় বিদায় দর্শনায় উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশের নিরাপত্তা ব্রিফিং মাহমুদ হাসান রনি, ঘোড়াঘাটে কোটি টাকা নিয়ে কর্মকর্তা উধাও খাদ্য গুদাম সিলগালা রহমতপুরে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের স্কুল প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত ঘোড়াঘাটে সরঞ্জামসহ ট্রান্সফরমার চোর চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার বরিশাল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে  মনোনীত অফিসার-ফোর্সদের ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন: ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন শাহজালাল (র.) ওরস উপলক্ষে ঐতিহাসিক লাকড়ি তোড়া উৎসব অনুষ্ঠিত
কি কারণে হিজলা থানার শিশু আরাফাত হত্যা রহস্য উদঘাটন করলেন নাঈমুল হক এডিসি”

কি কারণে হিজলা থানার শিশু আরাফাত হত্যা রহস্য উদঘাটন করলেন নাঈমুল হক এডিসি”

বি এম মনির হোসেন
স্টাফ রিপোর্টার

আবারো একটি নৃশংস,লোমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর শিশু আরাফাত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করল বরিশাল জেলা পুলিশ । সময় মাত্র ২০ ঘন্টা । গত ১১ মে ইফতারের কিছুটা সময় পূর্বে আনুমানিক সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ ৬ বছরের এক শিশুর রক্তাক্ত কাপড় বিহীন অবস্থায় লাশ তার বাড়ির পাশে সুপারি বাগানে একটি কাঠাল গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলার রহস্য উদঘাটন এবং প্রকৃত আসামিকে আইনের আওতায় আনার জন্য ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ নাঈমুল হক। মুলাদী থানায় এরকম একটি মামলা মাত্র ১২ ঘন্টার ভিতরে রহস্য উদঘাটন এবং মূল আসামীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ সহ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করিয়েছিলেন, তাই পুলিশ সুপার কে আশ্বস্ত করেন যে অবশ্যই এই মামলার রহস্য উদঘাটন করাজাবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাাইমুল হকেের সাথে ছিলেন মুলাদী সহকারী পুলিশ সুপার( সার্কেল )আনিসুল করিম, হিজলা থানার অফিসার ইনচার্জ অসীম কুমার সিকদার এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইলিয়াস তালুকদার ইন্সপেক্টর ( তদন্ত)।
ভিকটিমকে মৃত্যুর পূর্বে একজন ব্যক্তির সাথে যেতে দেখা গিয়েছিল তাই আরো তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সাব্বিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে।এই ছোট্ট একটি তথ্য থেকে কাজ শুরু করেন। হঠাৎ করে একটি জিনিস অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ নাইমুল হকের মাথায় আটকে গেল। ভিকটিমের পুরো গায়ে কাদা মাটি মাখা ছিল এবং তার গায়ে কোন কাপড় ছিলনা সাব্বিরের কথায় এই তথ্যটি পাওয়া যাচ্ছিল না তখন সাব্বিরকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে চুপ হয়ে গেল। বুঝতে পারলেন সে কিছু লুকাচ্ছে। তানজিল কে বের করে আবারো সাব্বিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। এবার একটু শক্ত অবস্থানে বসলেন। আবারো সেই পুরনো পদ্ধতি অবলম্বন করলেন সাব্বিরকে বল্লেন একজন সাক্ষী পাওয়া গেছে যে কিনা দেখেছে যে তুমি তাকে খুন করেছ।সাক্ষি দিয়ে গিয়েছে এবং তাকে হত্যার শাস্তি বল্লেন এতে কিছুটা কাজ হল। সাব্বির কান্না শুরু করলো। বলল স্যার আমি সত্য কথা বলব যদি আপনি আমাকে বাঁচান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ নাঈমুল হক তাকে বল্লেন মানুষতো ভুল করতেই পারে । হয়তো তুমি তাকে খুন করতে চাও নি কিন্তু কোন একটা কারণে সে মারা গিয়েছে । তুমি সত্যি কথাটি বল তোমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করব । তারপর সাব্বির ধীরে ধীরে জানালো ঘটনার দিন সে ভিকটিমকে চারটার দিকে খেলা করার জন্য ডেকে নিয়ে যায় সুপারি বাগানে। ওরা দুজন খেলা করছিল ।একপর্যায়ে সে ভিকটিমের কাছে তার পাইপ টি ফেরত চায়। ভিকটিমকে পাইপ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন সে তাকে একটি থাপ্পর মারে। ভিকটিমকে তাকে শালার ব্যাটা বলে গালি দেয় । তখন সে রাগ হয়ে লাথি মারে । ভিকটিম গাছের সাথে মাথা লেগে নাক ফেটে রক্ত বের হতে শুরু করে । জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । তখন তাকে কোলে করে নিয়ে পার্শ্ববর্তী ছোট্ট একটি কাদামাটিতে ভরা খালে ফেলে দেয়। নড়াচড়া করছে না দেখে সে ভয় পেয়ে যায়। ভাবে সে মরে গিয়েছে । তখন সে তাকে কুলে করে একটি কাঁঠাল গাছের নিচে নিয়ে সুপারি গাছের বাইল সংগ্রহ করে ভিকটিমের গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেয় এবং তাকে গাছের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে দেয় ওই মুহূর্তে ভিকটিম নড়াচড়া শুরু করলে সে ভয় পেয়ে যায়। সে ভাবে অনেক আগেই মরে গিয়েছে তাহলে আবার নড়াচড়া করছে কেন। তখন সে ওখান থেকে তার বাড়ি চলে যায় । আমার কাছে তার কথা ততটা গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি । কারণ সে কিভাবে একা মেরে গাছে ঝুলিয়ে দিতে পারে ?একা একা এটা অসম্ভব মনে হচ্ছিল! তাকে বল্লাম চলো আমরা ঘটনাস্থলে যাই । তুমি আমাদেরকে দেখাবে কিভাবে কি করেছিল । ইফতারের ১ ঘন্টা আগে আমরা তাকে নিয়ে আবারো ঘটনাস্থলে যাই এবং সে পুরো ঘটনায টি আমাদেরকে অভিনয় করে দেখায় । কিভাবে সে তাকে লাথি মেরেছিল ,কিভাবে তাকে খালে ফেলেছিল। এবং সর্বশেষ কিভাবে ছোট্ট একটি কাঁঠাল গাছে ভিকটিমকে একা একা ঝুলে রেখেছিল সে আমাদেরকে অভিনয় করে দেখায় । তখন আমরা নিশ্চিত হই যে সে একাই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে।তারপরও আরও কয়েকবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং সর্বশেষে আমরা নিশ্চিত হই যে সে ঘটনাটি একাই ঘটিয়েছে।আমরা বুঝতে পারি খুন করার উদ্দেশ্য আসলে তার ছিল না । কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘটনাটি খুনই হয়ে যায়। ভিকটিমের গায়ের কাপড় কোথায় গেল জিজ্ঞেস করলে সে বলে সে যখন ভিকটিমকে কাঁঠাল গাছের সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছিল তখন ভিকটিমের গা থেকে প্যান্টি খুলে পড়ে যায়। ভিকটিমের গায় আগে থেকেই কোন জামা ছিল না । ভিকটিমের দাদী ও সেটি নিশ্চিত করেছে । সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আসামি সাব্বিরের মাকেও যখন জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন সে জানায় যে তার ছেলে অনেক মিথ্যা কথা বলে এবং এই ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে। অবশেষে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করতে পেরে স্বস্তি পেলেন। আইনে একটি কথা আছে ” প্রয়োজনে ১০০ অপরাধী ছাড়া পেলেও ১জন নিরপরাধ যেন শাস্তি না পায়” মোোঃ নাইমুল হক বলেন বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরে খুব ভালো লাগলো কারণ তা না হলে আমাদের ছোটখাট ভুলে তানজিল অথবা রাকিব এই মামলায় জড়িয়ে যেতে পারত। আমাদের দেশে কিশোর অপরাধ অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমাদের সমাজের প্রতিটি বাবা-মাকে এই বিষয়ে আরো সতর্ক হতে হবে। আমাদের বাচ্চাদের সবসময় খোঁজখবর রাখতে হবে – কি করে ,কোথায় যায়, কি দেখে সব বিষয়ে আরো মনোযোগী হতে হবে। এই মামলার রহস্য উদঘাটনে সবাই বদ্ধপরিকর ছিলেন
সবার পেশাদারিত্বের কারণেই আবারো মামলা হবার 20 ঘন্টার ভেতরে মামলার রহস্য উদঘাটন, প্রকৃত আসামী গ্রেফতার এবং ১৬৪ ধারায় আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করাতে সক্ষম হয়েছে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019