১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নিউজ ডেস্ক::বরিশাল শহরে আবাসিক হোটেলে শুধু পতিতাবৃত্তি নয়, এখন প্রেমিক-প্রেমিকার অভিসারে যাওয়ার নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। এ খবর পুলিশ অবহিত হওয়ায় এই সব প্রেমিক-প্রেমিকাদের আটকে অতিউৎসাহী ভুমিকায় আবাসিক হোটেলে সোর্স নিয়োগ করে রেখেছে। আটকের পরে মোটা অংকের লেনদেনে মুক্তি দেওয়ার উপায় হিসেবে একটি বিশেষ ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে। সম্ভবত এরুপ অভিযোগের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে গির্জা মহল্লা এলাকার ইসলামিয়া আবাসিক হোটেল থেকে ফাহাদ হোসেন সোহানসহ কলেজ পড়ুয়া তার গার্লফ্রেন্ডের মুক্তির রফাদফায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাতে কোতয়ালি পুলিশ তাদের আটক করে।
খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে- আটক সোহান নগরীর পরিচিত মুখ এবং শিল্পপতি রাইভিউল কবির স্বপনের পুত্র। সাগরদী ধানগবেষণা এলাকায় সোহান নামকরণে একটি ইটভাটা রয়েছে। এই তরুণের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। মাদকসেবন এলাকায় তরুণীদের উত্যক্ত করাসহ কিশোর সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে সখ্যতা রেখে বেশ হম্বিতম্বি দেখিয়ে চলায় স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। বাবা আর্থিকভাবে ধনবান হওয়ায় কেউ আগ বাড়িয়ে প্রতিবাদ করার সাহস নেয় না। তাছাড়া বাবার আস্কারা পেয়েই সে এত বেপরোয়া বলে শোনা যায়।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়- প্রায়শই অভিজাত পরিবারের এই তরুণ সদস্য নতুন নতুন তরুণীকে নিয়ে মনরঞ্জনে আবাসিক হোটেলে আশ্রয় নেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ইসলামিয়া কলেজ পড়–য়া এক সুর্দশনা তরুণীকে নিয়ে হোটেলের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। কিছুক্ষণ পরেই কোতয়ালি থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহাবুব সঙ্গীয় ফোর্স সমেত ওই হোটেলে উপস্থিত হন।
সূত্র জানায়- হোটেলে কর্মরত বয়দের মাধ্যমে পুলিশের কাছে এই খবর পৌঁছে যায়। এসময় হোটেলের বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি করে সোহানকে ওই তরুণীসহ আটক করে। সেই সাথে আরও দুটি কক্ষ থেকে অনুরুপ দুই যুবক ও দুই তরুণীকে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের এই আচারণে হোটেল কর্তৃপক্ষ কিছুটা বুমেরাং হয়ে যায়। শর্ত অনুযায়ী তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাঙ্খিত ব্যক্তি বাদে অপর কাউকে আটক করার কথা নয়। কিন্তু পুলিশ তা মানেনি। হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে পুলিশের এক ধরনের সমঝোতা রয়েছে নারী ব্যবসা সুচারুভাবে চালিয়ে যাওয়ার। মাসিক অর্থ বাবদ বিশেষ কিছু ব্যক্তিদের ধরিয়ে সহায়তার করার মাধ্যমেই এই সুবিধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
থানার একটি সূত্র জানায়- সোহানকে থানা হেফাজতে আনার পরেই শুরু হয় তদ্বির। থানার ভেতরে ও বাইরে সোহানের পক্ষে একাধিক ব্যক্তি অবস্থান নিয়ে অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা এসআই মাহাবুবের সাথে এক ধরনের সমঝোতায় উপনীত হয়। গভীর রাতে তাদের ছেড়ে দেওয়ার শর্তে মোটা অংকের টাকাও গ্রহণ করে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে এসআই মাহাবুব দফায় দফায় এনিয়ে বৈঠক করে তাদের মুক্তির পন্থা বের করে। এক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আটকদের পক্ষে সাফাই গেয়ে নানা তথ্য দিয়ে ঘোরের মধ্যে রাখা হয়। ফলে ঘটনার পেছনের কাহিনী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত হতে না পারায় আইনের সহজ ধারা বসিয়ে মামলা দেওয়া দেওয়া হয়।
সেই ছকেই বিতর্ক এড়াতে সোহানকে রাতে মুক্তি না দিয়ে একটি বিশেষ ধারায় আদালতে সোপর্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিপরিতে তার সাথে আটক ওই তরুণীকে কলেজ পড়ুয়া হিসেবে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনে। শহরের একটি কলেজ পড়ুয়া ওই তরুণীর পক্ষে তার পরিবারকে সহায়তা দিতে সোহানের পরিবার আর্থিক যোগান দেয় বলে জানা গেছে। একই সাথে অপর দুই তরুণীকে একই কায়দায় মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে। মুক্তির প্রশ্নে এমন বিবেচনার কথা জানলেন কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম। এসআই মাহাবুব হোটেল থেকে নেমে আসার পর এ বিষয়ে মিডিয়াকর্মীদের তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা অজুহাতে রহস্যময় আচারণে কালক্ষেপন শুরু করেন। অথচ সোহানকে নিয়ে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাকে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য অনুযায়ী ওসি ও সেকেন্ড অফিসারের রুমে ক্ষণে-ক্ষণে মাহাবুব যাতায়াত করে সোহান প্রসঙ্গে একটি সুরহা আনতে সক্ষম হন।
একাধিক সূত্র জানায়- এ ধরনের কপোত কপোতিদের আটক করলেই পুলিশের রাতের বাণিজ্য জমে ওঠে। টাকাও নেয়, আদালতে চালানও দেয়। ভেতরে খবর থেকে যায় অজানা। জানা গেছে- ইসলামিয়া হোটেলের ঘটনাটিও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
সাথে বিতর্ক এবং উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের আড়াল করতেই এই কৌশল নেওয়া হয় বলে পুলিশের মধ্যে থেকেই এ তথ্য জানা গেছে। যে কারণে কাউকে আটক করলে পুলিশ তাৎক্ষণিক তা স্বীকার করে নিজেদের অবস্থান স্বচ্ছতা দেখায়। কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেওয়া হয়েছিল তার উত্তর সহসাই মেলে না। এভাবেই চলছে বরিশালে আবাসিক হোটেলের নারীদের পুঁজি করে মাঠ পুলিশের বাণিজ্য!