১৪ মে ২০২৫, ০৯:২৯ অপরাহ্ন, ১৫ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি, বুধবার, ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মাহমুদ হাসান রনি চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় নিরীহ পল্টু হত্যা মামলার আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবীতে সর্বস্তরের জনগণের মানববন্ধবন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় দর্শনা রেল বাজার বটতলায় দর্শনা মুজিবনগর সড়কের পাশে শত শত মানুষ এই মানববন্ধনে উপস্থিত হয়। মানববন্ধনে এলাকার নারী, পুরুষ সাধারন মানুষ সহ সর্বস্তরের জনগণের একটাই দাবী পল্টু হত্যা মামলার আসামীদের ফাঁসি চাই।
এ সময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, দর্শনা আখ চাষি কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আঃ হান্নান, আঃ কাইয়ুম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দলোনের সমন্বয়ক তানভীর অনিক, নিহত পল্টুর মা সুরাতন নেছা, স্ত্রী শাবানা আক্তার ডালিম, বড় ছেলে রাতুল, ছোট ছেলে সাড়ে ৭ বছরের শিশু আরিয়ান, ভাতিজা ইমতিয়াজ আহমেদ রয়েল, ভাস্তি জান্নাতুল প্রমি সহ অনেকে।
এসময় নিহত পল্টুর মা বলেন, যারা দিনের বেলায় আমার ছেলেকে নির্মমভাবে খুন করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই। এতদিন পার হয়ে গেছে আমার ছেলে হত্যার বিচার পাইনি, এবার আমার ছেলের বিচার না হলে আমরা কোনভাবেই মেনে নেবো না।
নিহতের স্ত্রী বলেন, ঐ খুনি মান্নান, তোতারা আমার স্বামীকে দিনে-দুপুরে জনসম্মুখে খুন করে কালো টাকা আর ক্ষমতার দাপটে এতোদিন বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। এখন তারা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আত্মগোপনে আছে কিন্তু কালো টাকার পাহাড় গড়ে ঠিকই দিন পার করে যাচ্ছে। কিন্তু ৬ বছর হয়ে গেলো আমরা আজও খুনের বিচার পেলাম না। এবার আমরা বিচার চাই। খুনিদের অবিলম্বে ফাঁসি চাই।
নিহতের বড় ছেলে বলেন, আমার ছোট ভাই যখন আমার আম্মুর কাছে বলে চলো আব্বুর কবরে যায়, কবর খুঁড়ে আব্বুকে একটু দেখে আবার রেখে আসবো। কতদিন দেখি না আমার আব্বুকে। আপনারাই বলেন তখন আমার বা আমার আম্মুর কতটা কষ্ট হয়। আর তার জবাব দেওয়ার মতো কোন উত্তর থাকে না আমাদের। তাই আমাদের একটাই দাবি আমার আব্বুর খুনিদের কঠিন শাস্তি চাই।
নিহতের ছোট্ট ছেলে বলেন, আমার আব্বুকে যারা মেরেফেলেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর হয়ে গেলো আজ পর্যন্ত এই খুনের বিচার হলো না এটা আসলেই আমাদের কাম্য না। আর আজ পল্টু খুন হয়েছে কাল আমি খুন হবো না তার কোন নিশ্চয়তা আছে? নাই, কোন নিশ্চয়তা নাই। আবার তার সঠিক বিচার হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নাই। তবে এবার বিচার না হলে আমরা রাজ পথে থেকে কঠোর আন্দোলনে নামতে চাই। আর তার জন্য বিচার বিভাগকে দায় নিতে হবে। তাদের ব্যর্থতা শিকার করতে হবে। কেন এখনও পর্যন্ত কিছু ঘুষখোর সুবিধাবাদী মানুষের জন্য সাধারণ মানুষ বিচার বিভাগ কে দায়ী করবে? এটা কি তাহলে বিচার বিভাগের ব্যর্থতা? যদি তাই হয় তো আমারাও বলে দিতে চাই আগামীতে আমরা কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলনে নামতে চাই রাজপথে।
বক্তারা আরও বলেন, পল্টু হত্যা মামলার আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত রাজ পথে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুশিয়ারী দেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান।
মানববন্ধন শেষে যুবলীগ নেতা মান্নান ও তোতার কুশপুত্তলিক দাহ করেন বিক্ষুব্ধ জনগন।
উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে জনসম্মুখে ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রউফ এর ছেলে ও সাবেক কাউন্সিলর মঈন উদ্দিন মন্টুর ছোট ভাই নঈমদ্দিন আহম্মেদ পল্টু (৩৮) কে কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে এবং একই গ্রামের মৃত ফরজ আলীর ছেলে মনজুর আহমেদ (৪০) কে মারাত্মক ভাবে আহত করে। এ ঘটনায় পল্টুর ভাই মঈন উদ্দিন বাদী হয়ে গত ২৪ আগষ্ট-২০১৯ তারিখে দামুড়হুদা থানায় ৭জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আসামীরা হলেন, দর্শনা মোবারক পাড়ার আলী হোসেনের ছেলে আব্দুল মান্নান খাঁন (৪৭), কবির খালাসীর ছেলে শেখ আসলাম আলী তোতা (৪৮), দর্শনা পুরাতন বাজারের জিয়াউল হকের ছেলে দিপু রেজা (৪৬), মোবারকপাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সাইফুল ইসলাম ওরফে বাংলা (৪৬), বাদল খানের ছেলে মোঃ আলম (৪৮), ডাঃ শামসুল ইসলামের ছেলে মোঃ সোহেল (৪৫) ও ইমারত আলীর ছেলে আশিক (২৫) এ সাতজনকে আসামী করে এবং অজ্ঞাত আরো ১০/১২জনকে আসামী করে দামুড়হুদা থানায় মামলা করা হয়।