০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন, ৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, বুধবার, ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
হারুনসহ তিন অতিরিক্ত আইজিপিকে বাধ্যতামূলক অবসর দর্শনায় কেরুজ টেন্ডার বাক্স ভাঙচুরের মামলা,আসামী ২০/২৫ জন কালকিনিতে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ১০০০ পিচ শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ। ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী ঝড় হবে হ্যারিকেন মিল্টন দুর্গাপূজা হলো সাম্যের প্রতীক ও মৈত্রীর প্রতীক- উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা হাসানাত আব্দুল্লাহসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা মোরেলগঞ্জে ৩ দিনব্যাপী স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী অসুস্থ এম. এ মান্নান সিলেট ওসমানী হাসপাতালে দর্শনায় আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির ব্যাংকের ৪৮ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান সুন্দরবনের উপকূলীয় মোরেলগঞ্জে ব্রিজের অভাবে চরম দুর্ভোগে ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ
কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হবে না- জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান

কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হবে না- জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান

1

মোঃ মনির হোসেন ঝালকাঠি :ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেছেন, ‘আমি আপনাদেরকে নিশ্চয়তা দিতে চাই, আমার কাছে কোনো রকম কোনো অন্যায় প্রশ্রয় পাবে না। যতদিন এখানে থাকি, সেটা যদি আমি ১০দিনও থাকি। কিন্তু অন্যায়ের সাথে আপোষ করে আমাকে এখানে বেশিদিন থাকতে হবে, এমন মানষিকতা আমার নেই।’

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), ঝালকাঠির যৌথ আয়োজনে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ২৮ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় উক্ত সভা।

‘কর্তৃপক্ষের সকল দ্বার, খুলে দেবে তথ্য অধিকার’ এই শ্লোগান এবং ‘রাষ্ট্রের মূলধারায় তথ্য অধিকারের সংযুক্তি এবং সরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ’ এই প্রতিপাদ্যের উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০২৪ উদযাপন করা হয়।

সভায় জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্র-জনতা আন্দোলন করেছেন, রক্ত দিয়েছেন, ৭শতাধিক মানুষ জীবন দিয়েছেন। এই সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। তথ্য অধিকার আইন ও তথ্যের উম্মুক্ততার মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।’

দিবসটি উপলক্ষ্যে সভায় জাতীয় তথ্য বাতায়নের অন্তর্ভুক্ত ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের ওয়েবপোর্টালের(http://www.jhalakathi.gov.bd/) অধীনে মোট ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের পোর্টালের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ওয়েবপোর্টালের মাধ্যমে জনগণের প্রয়োজনীয় তথ্যের সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য হালনাগাদসহ জনসচেতনার লক্ষ্যে সভায় জেলা তথ্য বাতায়ন হালনাগাদের বিষয়ে সনাকের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের নিকট ৫টি সুপারিশ করা হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) অনুপ্রেরণায় গঠিত ঝালকাঠির সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) পক্ষ থেকে উক্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। ‘ওয়েবপোর্টাল পর্যবেক্ষণ-২০২৪’ শিরোনামে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবি’র এরিয়া কোঅর্ডিনেটর মিজানুর রহমান। প্রতিবেদনে জেলা তথ্য বাতায়নের অধীন ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের পোর্টালের সর্বসাধারনের জন্য প্রয়োজনীয় ৭টি বিষয়ের হালনাগাদের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। নোটিশ বোর্ড, খবর, অফিস প্রধানের তথ্য, কর্মকর্তা/কর্মচারীর তথ্য, সেবাসমূহের তথ্য, তথ্য প্রদানকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিও) ও যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য- এসকল সাধারণ তথ্যগুলো পর্যবেক্ষনের আওতাভুক্ত হয়েছে।

৬৩টি ওয়েবপোর্টাল যাচাই করে মাত্র ৫টি ওয়েবপোর্টালে শতভাগ হালনাগাদ তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ৬৩টির মধ্যে ৪টি ওয়েবপোর্টালে উল্লিখিত বিষয়সমূহে কোনো ধরনের তথ্য পাওয়া যায়নি অর্থাৎ হালনাগাদের হার ০%। উল্লিখিত ৭টি বিষয়ে ৬৩টির মধ্যে ২৬টি ওয়েবপোর্টালে ৫০% এর কম তথ্য হালনাগাদ আছে। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী তথ্য প্রদানকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিও) সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া গিয়েছে ৬৩টির মধ্যে ২৩টি ওয়েবপোর্টালে। অফিস প্রধানের তথ্য ও কর্মকর্তা/কর্মচারীর তথ্য যথাক্রমে ৩৬টি ও ৫৭টি ওয়েবপোর্টালে হালনাগাদ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানের সিটিজেন চার্টার/সেবা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে মাত্র ৫০টি ওয়েবপোর্টালে। ওয়েবপোর্টালের হোমপেজে বিদ্যমান নোটিশ বোর্ড ও খবর অংশটির হালনাগাদ করার হার তুলনামুলকভাবে কম। ৬৩টি ওয়েবপোর্টালের মধ্যে ৩৬টিতে ‘নোটিশ বোর্ড’ এবং মাত্র ১১টিতে ‘খবর’ অংশের ব্যবহার লক্ষ্য করা গিয়েছে।

ওয়েবপোর্টালগুলোর হালনাগাদ তথ্য নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং শতভাগ হালনাগাদের সময়-সীমা নির্ধারণ করার আহ্বান জানানোর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক সভায় আশ^স্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আগামী ১৫দিনের মধ্যে জেলার সকল সরকারী দপ্তরের ওয়েবপোর্টাল আপডেটে করতে নির্দেশ প্রদান করে চিঠি দেয়া হবে এবং আগামী জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। আশা করি আগামী ১৫দিনের মধ্যে ৯৯ভাগ ওয়েবপোর্টাল আপডেট করা হবে।’
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কোনো কিছু লুকানোর বিষয় নাই, আমরা লুকানোর মত কোন কাজ করিনা, করবোও না। সুতরাং যেকেউ তথ্য চাইলে তথ্য পাবেন নি:সন্দেহে। টিআইবি-সনাক আজকে যে বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে এজন্য আমি তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। আমরা তথ্য অধিকার আইনের বাস্তবায়নে আন্তরিক এবং ভবিষ্যতে আমরা আরও বাস্তবায়ন করবো।’

এর আগে সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি সত্যবান গুপ্ত বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইনে প্রতিটি দপ্তরে তথ্য প্রদানকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক। তথ্য প্রদানকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম, পদবি, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি জানাতে হয়। কেউ যদি তথ্য জানতে চায়, তাহলে নির্দিষ্ট কর্মদিবসের বাইরে যাওয়া যায় না এবং আইনের ব্যত্যয় করলে, নিয়মের ব্যত্যয় করলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিপদে পরেন। আবার তথ্য চাইতে গিয়ে সাংবাদিকসহ অনেকে হেনস্থার স্বীকার হয়েছেন, যা আমাদের কাম্য নয়। অন্যদিকে আইন অনুযায়ি সব তথ্য যেমন জানতে চাওয়া যায় না এবং তথ্য চাওয়ার জন্য প্রক্রিয়া অনুযায়ী নির্ধারিত ফরমে আবেদনের মাধ্যমে তথ্য জানতে চাইতে হবে। সকল তথ্য যদি সকলের জানা থাকে তাহলে দুর্নীতির স্বীকার হতে হয়না।’

পরে দিবসটি উপলক্ষে টিআইবি থেকে প্রকাশিত ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ঝালকাঠির সদস্য শিমুল সুলতানা হেপী। সার্বজনীন তথ্য অধিকার, প্রবেশগম্যতা ও জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ধারণাপত্রের উল্লেখিত টিআইবির ১৩দফা সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন তিনি।
এছাড়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয় উপস্থাপন করেন জেলা তথ্য কর্মকর্তা মো. আহসান কবীর। তিনি তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগ বিষয়ক কয়েকটি ভিডিওচিত্রের (টিভিসি) মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেন।

সভায় পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায় বলেন, ‘আমরা কিন্তু জানিইনা যে, তথ্য পাওয়া আামাদের অধিকার। আমাদের সৌভাগ্যের বিষয় যে, আমাদের একটি তথ্য অধিকার আইন রয়েছে। এবিষয়টা আমাদের সকলের জানা উচিত। ওয়েবপোর্টাল পর্যবেক্ষণের জন্য আমি সনাক-টিআইবিকে ধন্যবাদ জানাই। এখানে আমাদের দপ্তরের যে তথ্যগুলো হালনাগাদ নেই, যেটা আমাদের সিভিল সার্জন মহোদয়ও তার দপ্তরের কথা বলেছেনে যে, পয়েন্ট কম পেয়েছেন। আমি মনে করি এই যে পয়েন্ট কম পেয়েছি, এটা আমার জন্য ভালো। কারণ, কোথায় কোথায় ঘাটতি রয়েছে, সেটা টিআইবি কয়েকটি নির্দেশকের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছেন। এটি আমার কাজটিকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। আমি খুব শীঘ্রই আমার দপ্তরের সকল তথ্য হালনাগাদ করবো। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের সামনে তাদের সেবাসমূহের তালিকাসম্বলিত সিটিজেন চার্টার টানিয়ে দেয়া উচিত। এবং আমি আজ সকালেই আমাদের প্রত্যেকটি থানার সামনে সিটিজেন চার্টার টানানো আছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। কারণ মানুষ থানায় এসে ঐ থানায় কি কি সেবা সে পেতে পারে, তার মূল্য কত, তা যেন বুঝতে পারে। যখন স্বচ্ছতা থাকবে, তখন মানুষের মধ্যে আস্থা থাকবে। মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না, ঠিক তদ্রুপ তথ্য প্রবাহ ছাড়া সুশাসন সম্ভব নয়।’

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. আবিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. জহিরুল ইসলাম, ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সভাপতি খলিলুর রহমান, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আজমীর হোসেন তালুকদার, সাংবাদিক অলক সাহা, সনাক সদস্য মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কাওছার হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুজা মন্ডল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলামসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ, স্বেচ্ছাসেবকগন, সনাক-ইয়েস-এসিজি সদস্যবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। এছাড়া দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019