২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন, ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে প্রেমিকের হাতে তুলে দেন স্ত্রী, অতঃপর.. দুমকিতে মাহফিল কমিটি নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১৪ বরিশালে তীব্র গরম ও তাপদাহে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের মাঝে খাবার স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেঃ রেকর্ড, বানারীপাড়ায় বৃষ্টি কামনায় ইস্তিসকার নামাজ আদায় দর্শনায় তৃষ্ণার্থ পথচারীদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ,স্যালাইন এবং শরবত পানি বিতরণ ঘোড়াঘাটে সড়ক দুর্ঘটনায় চালক- হেলপার নিহত ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রতীক পেয়ে ভোটের মাঠে প্রার্থীরা সুন্দরগঞ্জে যুবলীগ নেতা আজমের উপর দুর্বৃত্তদের হামলা চুয়াডাঙ্গায় রাতে বাবাকে নিতে আসতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলের মুত্যু, দু’ বন্ধু মারাত্নক জখম
সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে মাকে পিটিয়ে ঘরছাড়া করল ১০ সন্তান

সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে মাকে পিটিয়ে ঘরছাড়া করল ১০ সন্তান

আজকের ক্রাইম ডেক্স : সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে মাকে মারধরের পর ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সন্তানদের বিরুদ্ধে। ৮২ বছরের হতভাগ্য ১০ সন্তানের মা ফরিদা বেগম এখন ঘুরছেন রাস্তায় রাস্তায়। ঘরবাড়ি আর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হারিয়ে এখন দিশাহারা তিনি। মাদারীপুর সদর উপজেলার পৌর পেয়ারপুর গ্রামের এ ঘটনায় তোলপাড় পুরো এলাকা।

জানা যায়, স্বামী কলম গড়িয়া মারা গেছেন ৩৫ বছর আগে। এর পর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চার ছেলেকেই করেছেন প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে বড় ছেলে দেলোয়ার গড়িয়া কাঁচামাল ব্যবসায়ী, মেজ ছেলে কামাল টিটিসিতে চাকরি করেন, এর পর সেজ ছেলে হেমায়েত পল্লী চিকিৎসক, আর ছোট ছেলে কাজল গড়িয়া এলজিইডিতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া ৬ মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন সম্ভ্রান্ত পরিবারে। অথচ ফরিদার কপালে নেই সুখের দেখা।

এই ১০ সন্তানের বিরুদ্ধেই ফরিদার অভিযোগ। তবে এই অভিযোগের তীর সবচেয়ে বেশি বড় ছেলে দেলোয়ার, আর ছোট ছেলে কাজলের ওপর। ফরিদা বেগম জানান, স্বামীর দান করা ও রেখে যাওয়া ৬৭ শতাংশ ফসলি জমি বিক্রি করে সন্তানদের মানুষ করেছেন। আর বাড়ির ৪৫ শতাংশ জমি বিভিন্ন সময়ে কারণে-অকারণে লিখে নিয়ে গেছে সন্তানরা। দলিলে লাখ লাখ টাকা জমির মূল্য দেখালেও ফরিদাকে দেওয়া হয়নি একটি টাকাও।

সম্প্রতি সব কিছু লিখে নেওয়ার পর মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছোট ছেলে কাজল গড়িয়ার বিরুদ্ধে। এমন অবস্থায় বড় ছেলে দেলোয়ার তার মাকে বিষ খেয়ে মরে যেতে বলেছে। এর পর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন হতভাগ্য এই মা।

ছোট ছেলে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার পর আশ্রয় নিয়েছিলেন বড় মেয়ে সুফিয়া বেগমের বাড়িতে। সম্পত্তির ভাগ কম হওয়ায় বড় মেয়েও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মাকে দেখভাল করবেন না। আর অন্য ছেলেদের মুখেও একই কথা।

তবে মাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়া আর জোর করে সব সম্পত্তি লিখে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। ফরিদার ১০ সন্তানের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীও। দোষীদের বিচারের পাশাপাশি ফরিদার সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তাদের। সরকারিভাবে আইনগত সহায়তার পাশাপাশি ফরিদা বেগমের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

ফরিদা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, একটু সুখের আশা করেছিলাম সন্তানদের কাছে। এখন সেই সুখ কপালে নেই। স্বামীর রেখে যাওয়া ও আমার সব সম্পত্তি ছেলেরা কৌশলে লিখে নিয়ে গেছে। আমার এখন কিছুই নেই। বড় ছেলে ও ছোট ছেলে এ ঘটনার জন্য বেশি দায়ী।

আমি আমার সব সম্পত্তি ফেরত চাই। আমি বৃদ্ধ বয়সে একটু শান্তি চাই। ফরিদা বেগমের বড় মেয়ে সুফিয়া বেগম বলেন, আমাদের বোনদের অল্প সম্পত্তি দিয়েছে মা। এজন্য মাকে আমরা কেউই বাড়িতে রাখব না। ছেলেদের সম্পত্তি বেশি দিয়েছে, তাদের কাছে মা থাকুক।

ফরিদা বেগমের ছোট ছেলে কাজল গড়িয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমার মায়ের মাথায় একটু সমস্যা আছে। তাই মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা বলে। আমি মাকে মারধর করিনি আর জোর করে সম্পত্তিও লিখে নিইনি। মা আমার নামে মিথ্যে কথা বলছে। আমার মা, ভাইদের একই সম্পত্তি বারবার লিখে দেওয়ায় সমস্যা হয়েছে। আমাদের ভাইদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়েছে।

ফরিদা বেগমের সেজো ছেলে হেমায়েত গড়িয়া বলেন, ছোট ভাই কাজল গড়িয়া বেশি সম্পত্তি লিখে নেওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ভাইবোন সবাইকে সম্পত্তি সমান ভাগ করে দিলে মায়ের এই অবস্থা হতো না। আমার মাকে আমি বলেছি— আমার ঘরে থাকতে ও খাবার খেতে, কিন্তু মা আমাকে সম্পত্তি কম দেওয়ায় সে নিজেই আমার ঘরে থাকবে না।

ফরিদা বেগমের বড় ছেলে দেলোয়ার গড়িয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমি জোর করে সম্পত্তি লিখে নেয়নি। মা তার ১০ ছেলেমেয়েকে সম্পত্তি স্বেচ্ছায় লিখে দিয়েছে। মাকে আমি খাবার দেই না এ কথা ঠিক না। মা আমার নামে যে অভিযোগ দিয়েছে তা সঠিক নয়।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, অসহায় ফরিদার পাশে দাঁড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে প্রশাসন। আইনগত সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতাও করা হবে। এছাড়া জোর করে সম্পত্তি লিখে নিলে সেটি ফেরত আনার ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019