২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন, ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের ক্রাইম ডেক্স : বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মোজাহিদিয়া কেরামতিয়া দাখিল মাদ্রাসা ভবন নির্মাণের ঠিকাদার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসার চারতলা ভবনের লিন্টন ঢালাইয়ে রড ব্যবহার করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অথচ ভবনটির চারতলা পর্যন্ত কাজ শেষের দিকে।
জানা যায়, ২০২০ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২ কোটি ৯৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বরাদ্দে কার্যাদেশ পায় মেসার্স লিটন ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ৩০ মে কাজ শুরু করে ১৮ মাসের মধ্যে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও চার বছর পার হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লিটন ট্রেডার্স ভবন নির্মাণ কাজ বিক্রয় করে দিয়েছে। সাবকন্টাকে ভবনটির ঠিকাদার হিসেবে নির্মাণ কাজ করছেন মাহাবুব রহমান নামের ঠিকাদার।
কাজের শুরু থেকেই চারতলা ভবনের দেয়াল এবং ফ্লোরে নিন্ম মানের ইট ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এছাড়াও চারতলা ভবনটি নির্মাণে লিন্টন ঢালাই দিয়েছে রড ছাড়াই। লিন্টন ঢালাইয়ে সিলারচান লাল বালু ব্যবহার করার কথা থাকলেও সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে লোকাল সাদা বালু।
অভিযোগের এখানেই শেষ নয়। এসব গুরুতর অনিয়মের পরে এবার চারতলা ভবনটির দরজা জানালা অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেয় মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকেরা। ওই ভবন নির্মাণ কাজের ঠিকাদার মাহবুব ঘটনাস্থলে আসলে তার উপস্থিতিতে মাদ্রাসার শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান জমাদ্দার লিন্টন ভেঙে পরীক্ষা করে দেখতে পায় কোনো রড ছাড়াই ঢালাই দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মোজাহিদিয়া কেরামতিয়া দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সুপার ও প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল গনি মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, কাজ শুরুর প্রথম থেকেই ঠিকাদার অনিয়ম করে আসছে। চার বছরেও ভবনটি নির্মাণ কাজ শেষ করেনি ঠিকাদার। শিক্ষার্থীদের নিয়ে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে আমাদের। ভবনের চারতলা পর্যন্ত নির্মাণ হলেও লিন্টন ঢালাইয়ে রড ব্যাবহার করেনি ঠিকাদার মাহবুব। বিষয়টি আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান জমাদ্দার বলেন, ‘কাজের অনিয়ম পেয়ে আমরা স্থানীয়দের সহায়তায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। পরে ঠিকাদার ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে রড ছাড়া ঢালাই দেওয়া লিন্টন ভেঙ্গে দেখি রড নেই। ঠিকাদার যদি লিন্টন ভেঙে দিয়ে নতুন করে ভবনের লিন্টন নির্মাণ কাজ শুরু না করে তাহলে আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব।
অভিযোগ প্রসঙ্গে নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসাইন বলেন, ‘এ মাদ্রাসার লিন্টন ঢালাইয়ের কাজ আমাদেরকে না জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রড ছাড়া ঢালাই দেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। এ অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ঠিকাদার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘কাজটি করতে গিয়ে আমাদের অনেক লস হয়েছে। শ্রমিকরা আমাকে না জানিয়েই রড ছাড়া লিন্টনগুলো ঢালাই দিয়েছে। লিন্টনগুলো ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে নির্মাণ করা হবে। দরজা-জানলা গুলো নিম্নমানের হলে পরিবর্তন করে এ কাজটি সিডিউল অনুযায়ী করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘১৯ মার্চ আমার কার্যালয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ডেকেছিলাম। মাদ্রাসা ভবনের লিন্টনে রড না দিয়ে ঢালাই দেওয়ার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছি এক সপ্তার মধ্যে ভেঙ্গে নতুন করে লিন্টন ঢালাই দেওয়ার জন্য। যদি তারা সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করে ঠিকেদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।