২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি ॥ বরগুনার বেতাগীতে টেন্ডারের শিডিউল বিক্রির আগেই প্রায় অর্ধকোটি টাকার কাজ পছন্দের ঠিকাদারের কাছে বণ্টন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এরই মধ্যে ওই ঠিকাদার কাজও শুরু করেছেন।
গত ১৫ দিন ধরে চলছে এসব কাজ। দরপত্র আহ্বান করার পর কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে এত বড় কাজ কীভাবে গোপনে একজন ঠিকাদার শুরু করতে পারেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ঠিকাদারেরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলামের স্বাক্ষরে গত ৯ জানুয়ারি ০২ / ২০২১-২০২২ নম্বর ই-টেন্ডার নোটিশ প্রচার করা হয়।
নোটিশটি একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকায় ও একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। ওই নোটিশে ১ ও ২ নম্বর প্যাকেজে বিবিচিনি ইউনিয়নের বেগম লুৎফুন্নেছা মেমোরিয়াল ব্রিট স্কুলের সীমানাপ্রাচীর এবং স্কুলের ভেতরে আরসিসি রাস্তা নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৮ লাখ টাকা।
ওই দুটি প্যাকেজের শিডিউল বিক্রির শেষ সময় উল্লেখ করা হয়েছে বুধবার বিকেল ৫টা। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা। ই-টেন্ডার পদ্ধতি হওয়ায় সারা দেশ থেকেই অনলাইনে টেন্ডার শিডিউল ক্রয় ও জমা দেওয়ার কথা। সেই হিসাবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ অবস্থায় হঠাৎ করেই মো. জাকির নামের একজন ঠিকাদার লোকজন নিয়ে ১৫ দিন আগে ওই স্কুলের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
দরপত্রে অংশগ্রহণ ছাড়া এভাবে হঠাৎ করে কাজ শুরু করায় হতবাক হয়ে পড়েন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ঠিকাদার জানান, টেন্ডার নোটিশ প্রচার করার পর টেন্ডারে অংশগ্রহণ ছাড়াই কাজ শুরু করা নজিরবিহীন। প্রায় অর্ধকোটি টাকার কাজ এভাবে করার কোনো নিয়ম নেই। ঠিকাদাররা আরও জানান, টেন্ডারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচিত হলে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা যেমন সাশ্রয় হতো, তেমনি একজন ভালো মানের ঠিকাদারের হাতেই কাজটি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এক ঠিকাদার বলেন, নোটিশ পাওয়ার পর টেন্ডার শিডিউল নিয়ে দরপত্রে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু দরপত্রে অংশ নেওয়ার আগেই কাজ শুরু হয়ে গেছে জেনে হতবাক হয়েছি।
এ ধরনের কথা কখনো শুনিনি। সরেজমিন বেগম লুৎফুন্নেছা মেমোরিয়াল ব্রিট স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। এরই মধ্যে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য স্কুলের চারপাশে কলাম ঢালাই ও মাটি কাটার কাজ চলছে। সেখানে সাত-আটজন শ্রমিক কাজ করছেন।
এ বিষয়ে শ্রমিকেরা বলেন, ঠিকাদার জাকির এ কাজ করছেন। ঠিকাদার মো. জাকির বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাকে কাজ করতে বলেছে, তাই আমি কাজ করছি। আমি নিজেও দরপত্র ক্রয় করেছি। পরে যে কাজ পাবে, তার সঙ্গে সমন্বয় করে নিব। ব্রিট সেন্টারের ইনচার্জ মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিভাবে এই প্রতিষ্ঠানের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। এরপর রাস্তার কাজ শুরু হবে। ১৫ দিন আগে এ কাজ শুরু হয়।
এ কাজের টেন্ডার এখনো সম্পন্ন হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, ওইখানে এখন কে কাজ করে সেটা আমার দেখার বিষয় না। টেন্ডার সম্পন্ন হওয়ার পর আমি ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেব। ব্যক্তিগতভাবে কেউ হয়তো এ কাজ করতে পারে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী এস কে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কাজটি আমার দপ্তরের না। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’