২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০২ পূর্বাহ্ন, ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অনলাইন ডেস্ক:: স্বামী জীবিত থাকতে ও তাকে মৃত দেখিয়ে বিধবাভাতা উত্তোলন করছেন স্ত্রী। এভাবেই ২০১৬ সাল থেকে চলছে সরকারি টাকা আত্মসাৎ এর ঘটনা।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ১০ নং কোটাকোল ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে। ওই ভুয়া ভাতাভোগী প্রতি মাসে পাঁচশত টাকা করে পান। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মেম্বর শাহানারা বেগম অভিযোগ করেন, ১২ হাজার টাকা নিয়ে আমিরোন বিবির নামে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বর মোঃ মুজিবর মোল্লা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও অভিযোগে জানা গেছে, ১০ নং কোটাকোল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বড়দিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. জাহের শেখ (৬৫) এর স্ত্রী আমিরোন বিবি।
লোহাগড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিস ২০১৭ সালের ২০ আগষ্ট আমিরোন বিবির নামে বিধবা ভাতার কার্ড ইস্যু করেন। কার্ড নং- ২৭৯/১৭। ওই কার্ডের বিপরীতে সোনালী ব্যাংক মহাজন শাখার হিসাব নং-০১০১১৬৪৯। অভিযোগ রয়েছে, আমিরোন বিবি বিধবা ভাতার সরকারি টাকা তুললেও তার স্বামী এখনো জীবিত। ভাতা বইতে দেখা যায় ২০১৬ সালের জুলাই থেকে টাকা তোলা হয়েছে।
গত ২০ জুন কোটাকোল ইউপির ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর শাহানারা বেগম সহ বড়দিয়া এলাকার হিমু খান, মিলন খানসহ কয়েকজনে জেলা প্রশাসক ও লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন।
ওই অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, কোটাকোল ইউনিয়নের ৭ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মেম্বর মুজিবর রহমান স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় বড়দিয়া গ্রামের মো. জাহের শেখের স্ত্রীর নামে নামে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। ব্যাংক থেকে ভাতার টাকা উত্তোলনের পর মেম্বর এবং ওই নারী টাকা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন।
অবশ্য এর আগে আমিরোন বিবি স্বামী জীবিত থাকতেও বিধবাভাতার টাকা উত্তোলন করছেন মর্মে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন একই এলাকার মো. লিকু মোল্লা। ওই অভিযোগে মহিলা মেম্মরকে দায়ি করা হয়।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, অভিযোগের প্রেক্ষিতে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি তদন্তের জন্য লোহাগড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। স্বারক নং-১১জুন-৪৪২।
ভাতাভোগী আমিরোন বিবি বলেন, ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বর মোঃ মুজিবর মোল্লা ১২ হাজার টাকা নিয়ে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেছে।
স্বামী বেঁচে থাকতেও কেনো আমাকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিলেন প্রশ্নের জবাবে মেম্বর মো. মুজিবর মোল্যা বলেন, তোমরা গরীব মানুষ, ওই কার্ড করে দিছি তা সমস্যা কি। তোমরা খাও। আমিরোন বিবি কখনো কখনো বলছেন কার্ড করবার সময় মহিলা ও পুরুষ দুজন মেম্বরই ছিল।
এ বিষয়টি নিয়ে ইউএনও স্যারের নিকট আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী মো. লিকু মোল্লা। মো. লিকু মোল্লার স্ত্রী রিনা বেগম গত দুবারের ইউপি নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ছিলেন। সামনে নির্বাচন তাই তারা আমাকে নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করছেন।
৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বর মো. মুজিবর মোল্লা ভাতাভোগী আমিরোন বিবির স্বামী জাহের শেখ এখনো জীবিত স্বীকার করে বলেন, আমি কার্ড করে দিতে কোন টাকা নেইনি। কখনো আবার বলছেন, আমিরোনের ওই কার্ড আমি করিনি।
ওই এলাকার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক লোকে অভিযোগ করেন, কোটাকোল ইউনিয়নে বিধবা বা বয়স্ক ভাতার অনেক ভুয়া কার্ড রয়েছে। চেয়ারম্যান ওই সব ভুয়া কার্ডের ব্যাপারে অবগত থাকলেও নিজে সুবিধা নিয়ে চুপ থাকেন।
কোটকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মারিয়া হোসেন বলেন, ভুয়া ভাতা কার্ডের বিষয়টি শুনেছি। সাধারণত মেম্বররাই ওই সব কার্ড করে দেয়। আমি এসব ব্যাপারে কারো কাছ থেকেই কোন সুবিধা নেই না।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্তের জন্য সমাজসেবা অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি।
লোহাগড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. শামীম রেজা বলেন, ভাতা বই জব্দ করেছি। তদন্ত চলছে।