০৪ মে ২০২৪, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন, ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, শনিবার, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
ছেলের কবরে বেড়া দিতে গিয়ে মারা গেলেন বাবাও ভোলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৩০ বরিশাল সিটিতে ৫ বছর পর সরকারি বরাদ্দে উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন সিলেটে আগাম বন্যার আশঙ্কায়!! হাওরজুড়ে কৃষকের ব্যস্ততা চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও দর্শনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি অধ্যাপক এমএ গফুর ইন্তেকাল দর্শনায় পৌর উদ্যোগে সড়কে পানি ছিটানো উদ্যোগ তেঁতুলিয়ায় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত জীবননগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাগণের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত আগৈলঝাড়ায় বিএনপি’র আহ্বায়ক রেজা ও যুগ্ম আহ্বায়ক লাভলু ভাট্টির দল থেকে পদত্যাগ চুয়াডাঙ্গায় বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯ বাড়ি শেষ
বরিশালে অবশেষে সাদিক সফল নেতা। আজকের ক্রাইম নিউজ

বরিশালে অবশেষে সাদিক সফল নেতা। আজকের ক্রাইম নিউজ

নিউজ ডেস্ক:::নানান গুঞ্জন ও আলোচনা টপকে শেষান্তে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র হাতে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব অর্পন করা হয়েছে। অকেটা আচমকা এই ঘোষণা আসে রোববার বহুল কাঙ্খিত মহানগরের সম্মেলনের প্রথম পর্ব শেষে মধ্যহ্নভোজের সময়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি মহানগরের সভাপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর এবং সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র সেরনিয়বাত আব্দুল্লাহ’র নাম চ‚ড়ান্ত করে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা দিয়ে কৌতুহলের অবসান টানেন। সাদিক আব্দুল্লাহ পুর্বের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। একেএম জাহাঙ্গীর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকলেও এবার তিনি ছিলেন একেবারে আলোচনার বাইরে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সাদিক আব্দুল্লাহ এমন ঘোষণার আলোকেই জাহাঙ্গীরকে সভাপতি হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে।
গত বেশ কয়েকদিন ধরে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল নতুন নেতৃত্ব নিয়ে। বিভিন্নমুখী গুঞ্জন ও মহল বিশেষের অনুমান ছিল সভাপতি হিসেবে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এবং সাধারণ সম্পাদকের পদে সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র নাম অকেটাই চ‚ড়ান্ত। আবার কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করে সদর আসনের সাবেক সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজ অথবা পুর্ব কমিটির সভাপতি গোলাম আব্বাছ চৌধুরী দুলালের সম্ভবনাকেও গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বিশেষ করে বরিশাল আ’লীগের বিভাজন রাজনীতির অবসান টানতে একটি সমন্বয়ের আলোকে নতুন নেতৃত্ব আসা নিয়ে জোর আলোচনা ছিল। কিন্তু হিসেব নিকেশ পাল্টে যায় সম্মেলনের মধ্যহ্নভোজের সময়। অকেটা আচমকা ঘোষণা আসে নতুন নেতৃত্বের। সেখানে সাদিক আব্দুল্লাহ’কে সাধারণ সম্পাদক এবং সিনিয়র নেতা একে এম জাহাঙ্গীরকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করে অপুর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা দিয়ে ওবায়দুল কাদের ঐক্যের রাজনীতি ধরে রাখার তাগিদ দেন। অবশ্য সাদিক আব্দুল্লাহ সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে যেমন প্রত্যাশি ছিলেন তেমন তার বিপুল অনুসারীরাও আকাঙ্খা পুরণে মুখিয়ে ছিলেন। ফলশ্রুতিতে রোববারের সম্মেলন নিয়ে এক ধরনের আকস্মন সৃষ্টি করে নতুন নেতৃত্ব জানার অপেক্ষায়।

এই সম্মেলনকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে কীর্তনখোলার পশ্চিম তীর বরিশাল নগরী। দেয়ালে দেয়ালে ব্যানার-বিলাবোর্ড, হাজার হাজার কর্মী-সমর্থকদের মুহূমুহূ শ্লোগান, বিভিন্ন জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সকালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সম্মেলনস্থল পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। সেখানে উপস্থিত হন বিমানযোগে আসা দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের শুরু থেকে ঘোষণার পুর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যেমন উম্মাদনা তেমন চাপা উত্তেজনা ছাপিয়ে তুমুল আলোচনা ও কৌতুহলী হয়ে ওঠে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণার বিষয়টি।
এমন প্রশ্নের উত্তর মেলাতে বিশালাকায় সম্মেলনস্থলে বক্তদের উন্নয়ন ও রাজনীতির আলোচনা অপেক্ষা যেন একটি ঘোষণা শোনার আকাঙ্খায় আকস্মরণীয় করে তোলে মহানগর আ’লীগের এই আয়োজন।

বরিশাল রাজনীতির ইতিহাসে এই ধরনের আয়োজন এবং উৎসহ এটাই প্রথম বলে রাজনৈতিক বোদ্ধারা অভিমত পোষণ করেছেন। সম্মেলন শুরুর পূর্ব রাত থেকেই যেন ঈদের আমেজ বইছে বিভাগীয় এই শহরে। ছোট গণপরিহন শহর অভ্যন্তরে নেই বললেই চলে। বাণিজ্যিক দোকানপাট অনেকটাই বন্ধ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান সুদৃঢ় করার দৃশ্য বলে দেয় ক্ষমতাসীন দলীয় সহযোগী সংগঠনের এই আয়োজনকে ঘিরে প্রশাসনের গুরুত্ব। এরুপ আবহের মাঝে সম্মেলনের প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের দুপুর পৌঁনে দুইটায় মঞ্চে দাড়িয়ে আ’লীগের সাংগঠনিক ইতিহাস, রক্তঝরা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের আত্মত্যাগ, বরিশাল উন্নয়ন ও বিএনপির রাজনীতির সমালোচনার মধ্যদিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন। নাতিদীর্ঘ অর্ধঘণ্টার এই শীর্ষ নেতার বক্তব্যে যেমন ছিল আবেগ তেমন ছিল উৎসব্যাঞ্জক উক্তি। স্মরণ করিয়ে দেন দলীয় বিভেদ ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতে ঐক্যের গুরুত্ব। অনেকটা সাহিত্যিক ভঙ্গিমায় ওবায়দুুল কাদের দিক-নির্দেশনাময় বক্তব্য দিতে তার অতিথিতার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। এর আগে অন্তত ১২ জন বক্তা তাদের বক্তব্য রাখেন। এর মধ্যে রয়েছেন আ’লীগের কেন্দ্রীয় আমির হোসেন আমু, আব্দুর রহমান, বিপ্লব বড়ুয়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ মল্লিক এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুক শামীম, বাহাউদ্দিন নাসিম, গোলাম রাব্বানী চিনু, সাম্মী আক্তারসহ পটুয়াখালীর আফজাল হোসেন অন্যতম। অবশ্য অনুষ্ঠানস্থলে কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেন ও কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য উপস্থিত ছিলেন। অনেকটা সঞ্চালকের ভুমিকায় থাকা নগর আওয়ামী লীগ নেতা ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে অতিথিবৃন্দের তদারকি এবং মঞ্চে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে দেখা যায়। এসময় পদপ্রত্যাশি সাবেক এমপি জেবুন্নেছা আফরোজকেও মঞ্চে বেশ প্রাণবন্ত দেখা যায়।

সর্বশেষ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বকারী বরিশাল আওয়ামী লীগের মহানগরের বর্তমান সভাপতি গোলাম আব্বাছ চৌধুরী দুলাল সমাপনি বক্তব্য দিয়ে আয়োজনের প্রথম পর্যায়ের সমাপ্তি টানেন। সেই সাথে সম্মেলনকে ঘিরে চাপা উত্তেজনা অথবা শ্বাসরুদ্ধকর একটি পরিস্থিতির অবসান ঘটে। সমাপ্তির এই পর্বে একই সাথে দুটি কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তর মিলে যায়।
প্রথমমত মহানগরের সভাপতি পদপ্রত্যাশি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম আমন্ত্রিত তালিকায় না থাকায় সম্মেলনে তার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু তাকে অতিথির প্রথম সারির আসনে উপবিষ্ট থাকতে দেখা গেছে। দ্বিতীয়ত নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে কোন পন্থা অবলম্বন না করেই ঘোষণা দেওয়া হয়।

বেলা আড়াইটা নাগাদ অনুষ্ঠানমালার প্রথম পর্ব শেষে শুরু হয় মধ্যহ্নভোজের আয়োজন। বিভিন্ন সূত্র জানায়- অতিথি ও ডেলিগেটসহ কর্মী-সমর্থক মোট ৪০ হাজার মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়।

প্রত্যাশা অনুযায়ী এই বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থকদের সম্মেলনে অংশগ্রহণ ছিল বরিশাল আওয়ামী লীগ সু-সংগঠিত হওয়ার লক্ষ্যণীয় বিষয়টি। অনুষ্ঠানে কয়েকজন বক্তা এর পেছনে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র অবদান থাকার কথা উল্লেখ করে ভুয়াসী প্রশংসা করেন।

সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা উপজেলা বাস ট্রাকযোগে কর্মী-সমর্থকরা সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করে। নগরীর ত্রিশটি ওয়ার্ড থেকে আ’লীগ নেতৃবৃন্দের তদারকিতে সমরুপে কর্মী-সমর্থকরা ঢোল তবলা নিয়ে ভিন্ন এক সুর বাজিয়ে মাতিয়ে তোলে সড়কপথ। এসময় কিছুটা সংঘাতময় পরিস্থিতির অবতারণা ঘটে। বিভিন্ন স্থানে জাহিদ ফারুক শামীম ও সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র কর্মীদের মধ্যে দল ভারী করা নিয়ে টানাটানিতে উত্তেজনার খবর পাওয়া যায়। পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় কোন বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু গোটা সম্মেলনস্থল নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ও দায়িত্বশীল নেতারা সতর্ক এবং কৌশলের আশ্রয় নেওয়ায় সেখানে বিভেদ নন, যেন ঐক্যের বাতায়ন সৃষ্টি করেছিল।

দলের স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্র জানায়- দুপুর সাড়ে ৩টার পর সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের কার্যক্রম শুরুর পরে প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে কী না তা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়। সেক্ষেত্রে কণ্ঠ ভোটের বিষয়টিও আলোচনা ছিল। কারও কারও ধারনা ছিল- শেষ বিকেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে প্রধান অতিথি নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা দিতে পারেন। কিন্তু ওবায়দুল কাদের কোনরুপ বিতর্কে না গিয়ে অনেকটা হাসিরছলে নয়া নেতৃত্বের ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখেন। বিশেষ করে সাদিক আব্দুল্লাহ’র নেতৃত্ব পাওয়ার বিষয়টি চ‚ড়ান্ত হওয়ার পরপরই সম্মেলনস্থল গোটা বরিশালে এক ধরনের আনন্দের ধারা বয়ে যায়। তার অনুসারীরা তাৎক্ষণিক শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানিয়ে আতোষবাজি ফুটিয়ে আন্দন্দ প্রকাশ করেন। পক্ষান্তরে পদপ্রত্যাশি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ও সদর আসনের সাবেক সাংসদ জেবুন্নেছা আফরোজ নিশ্চিুপ থেকে নিজেদের বাসবভনমুখী হন। এই দুই নেতা নতুন নেতৃত্ব অথবা তাদের বঞ্চিত হওয়ার বিষয় নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। তাদের অনুসারী ও সমর্থকেরা হতাশ ও ভেঙে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

দলের সুশীল অংশ মনে করছে- কোনরুপ বিতর্ক বা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে নয়া নেতৃত্ব ঘোষণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড দুরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু বরিশালে বিভাজনের রাজনীতির গতিপথ কোন দিকে ধাবিত হতে সেই প্রশ্নটি এখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।’

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019