০৮ মে ২০২৪, ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, বুধবার, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শাকিব বিপ্লব, বরিশাল:: রাজনীতিতে বরিশাল থেকে উত্থ্যান পোড়খাওয়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক আবার নিজ এলাকায় ফিরছেন। স্থানীয়ভাবে সংগঠনকে শক্তিশালী এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সম্ভাবত শিগগিরই বরিশালের রাজনীতির মাঠে পূর্বরুপে ও নয়া আঙ্গিকে তাকে দেখা যেতে পারে। সেই সাথে লক্ষ্য থাকবে বরিশালের যে কোনো একটি আসন থেকে আগামী সংসদ প্রার্থী হওয়ার প্রাকপ্রস্তুতি। এর আগে চলতি মাসের যে কোনও সময় নানককে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার সম্ভাবনাও রয়েছে। বরিশাল রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি এবং দলের হাইকমান্ডের একটি অংশ মধ্যবয়সী এই নেতাকে নিয়ে এমন ভাবনা-চিন্তার আলোকেই এখন এনিয়ে গুঞ্জন ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত পৌঁছেছে। নানকও এ বিষয়ে আগ্রহী হওয়ায় সমর্থিতরা এখন প্রায়শই তার ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসায় যাতায়াত শুরু করেছেন। অবশ্য নানকের মুখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরিশাল রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন নিয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে হাবভাবে আলামত মিলেছে।
রাজধানী ঢাকার একাধিক সূত্র এমনটি আভাস দেওয়ার পাশাপাশি তার বরিশালের অনুসারীরা সহমত পোষণ করে বলছেন, নানক আবার মন্ত্রী হতে চলেছেন। দলের প্রেসিডিয়ামের এই প্রভাবশালী সদসকে শীঘ্রই একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের চেয়ারে দেখা যেতে পারে।
সূত্রগুলোর ভাষ্যমতে, শুধু মন্ত্রিত্ব নয়, বরিশালে দলের ভঙ্গুর নেতৃত্ব দূরীভূত করতে নানককে বরিশালের মাঠে নামিয়ে দলীয় নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই চমক দেখানোর সমসাময়িক ভাবনা-চিন্তা থেকেই এই গুঞ্জন আরও ডালপালা মেলছে। দলের একটি অংশের অভিমত, মূলত নগর আ’লীগের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বরিশাল সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ’র রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক ও সদর আসনের সাংসদ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের সাংগঠনিক নেতৃত্বের অদূরদর্শিতার সন্ধিক্ষণে সংগঠনের স্বার্থে নানককে ঢাকা থেকে ব্যাকফুটে বরিশালের রাজনীতির মাঠে ফিরিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনা তরান্বিত হয়ে ওঠে।
তবে নানক বরিশালের সাংগঠনিক কাঠামো ধরে রাখাসহ এবং জনস্রোত সৃষ্টিতে প্রায় ৫০ বছর পর নিজ এলাকার রাজনীতির চালকের আসনে বসলেও তিনি মন্ত্রিত্ব পাওয়ার শর্তজুড়ে দিয়েছেন দলের হাইকমান্ডের টেবিলে। যেকারণে মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পরই নানককে বরিশালের মাঠে দেখা যেতে পারে। আশির দশকে বরিশাল ছাত্র রাজনীতিতে তুখোড় নেতা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তরুণ নানক পর্যায়ক্রমে বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি যুবলীগ নেতা হিসেবে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। পদোন্নতি পেয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ঢাকা মোহাম্মদপুর-১৩ আসনে আ’লীগের দলীয় সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর এলজিইডি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান।
রাজনৈতিক অঙ্গনে কথা চালু রয়েছে যে, এই সময়কালে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শওকত হোসেন হিরন সিটি মেয়র থাকা অবস্থায় এই দুই নেতার পরিকল্পনায় বরিশালের রাজনৈতিক রুপ পাল্টে যায়। বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত বরিশালে আ’লীগের জনপ্রিয়তা যেমন বেড়েছিলো, তেমনই গোটা নগর হয়ে উঠেছিলো উন্নয়নে একটি আধুনিক মডেল শহর। এরপর থেকে বিভাজন আ’লীগের বরিশালের রাজনীতি নিয়ে নানক সবসময় নিজেকে সতর্ক দূরত্ব এবং বিতর্ক এড়িয়ে চলতেন। সেই নানকই এখন সময়ের প্রয়োজনে বরিশাল রাজনীতি নিয়ন্ত্রক হতে যাচ্ছেন। এই নেতাকে নিয়ে সম্ভাবনা যদি সত্য হয়, তাহলে বরিশাল আ’লীগের হালচিত্র পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
সেক্ষেত্রে স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা দেখছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। একদিকে নানক অন্যদিকে দুই নেতা মন্ত্রী শামীম ও সিটি মেয়র সাদিক তিন স্রোতধারার সৃষ্টির কথা আলোচনায় প্রাধান্য পেলেও বাস্তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যেতে পারে। এমন সম্ভাবনাকে সামনে রেখে দলের স্থানীয় একটি অংশের অভিমত হচ্ছে, নানক ও শামীমের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠতে পারে এবং দুজনকে একই স্রোতধারার রাজনীতির মঞ্চ থেকে সংগঠনকে নতুন আদলে সাজাতে পারে। দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক পূর্ব থেকেই মধুর। ফলে এই দুই নেতা এক মঞ্চে দাড়ালে সিটি মেয়র সাদিক বিরোধী একটি বৃহৎ বলয় আপনাআপনি সৃষ্টি হলে অবাক হওয়াটা অস্বাভাবিক হবে না।
ইতিমধ্যে বরিশালে রাজনীতিতে নানক ফিরছেন, এমন গুঞ্জন জোররুপ পাওয়ায় ঘরোয়া রাজনীতিতে নির্যাতিত ও নিস্ক্রিয় অনেক নেতা, এমনকি ছাত্র ও যুবলীগের একসময়ের ডাকসাইডের নেতারা প্রেসিডিয়াম এই সদস্যের বাসায় যাতায়াত বাড়িয়ে দিয়েছে বলে শোনা গেছে।
নানক সমর্থিত বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী এমন তথ্য দিয়ে বলছেন, ঢাকার মোহাম্মদপুরের তার বাসায় প্রায় বরিশাল নেতাকর্মীদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বরিশাল পরিস্থিতি নিয়ে সার্বিক যে আলোচনা শোনা যায়, তাতে এই নেতার বরিশালে প্রত্যাবর্তনের আভাস মেলে। দলের নীতি-নির্ধারকদের একটি অংশ সংগঠনের স্বার্থেই এমনটিই চাচ্ছে বলে ঢাকার সূত্রগুলোর দাবি। বর্তমান স্থানীয় রাজনীতিতে যারা রয়েছেন, তাদের বিতর্কিত কর্মকান্ডে সংগঠন যেমন বদনামের ঘরে বন্দী হয়ে পড়ছে, তদ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে একনায়তন্ত্র।
কথা উঠেছে, বরিশাল রাজনীতি আত্মীয়করণের বেড়াজালে বন্দী হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও দলীয় দুর্বৃত্তদের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না কোনো এক নেতার কারণে। ফলে প্রশাসনের মধ্যেও একধরনের অসন্তোস বিরাজ করছে। অপর এক নেতা মন্ত্রিত্বের জায়গায় সফল হলেও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং নেতৃত্বের কৌশলগত ব্যর্থতায় বিভাজনের রাজনীতিতে মাঠে কোণঠাসা হওয়ায় এখন বিকল্প নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন দিক থেকে উচ্চারিত হচ্ছে।
তাছাড়া বয়সের ভারে ও রোগাক্রান্তে নতজনু হয়ে পড়া জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র ওপর বাড়তি চাপ দিতে নেত্রীও নারাজ। এই বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের একটি শক্তিশালী অংশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও স্থানীয় নেতৃত্বের পরিবর্তনের তাগিদ দেওয়ায় নানক প্রসঙ্গটি সামনে চলে এসেছে।
পাশাপশি নানকও চাচ্ছেন বরিশাল রাজনীতিতে আবার হিরন আমলের জনপ্রিয়তা ফিরে আসুক। ফলে দুইয়ের অভিন্ন মতে বরিশাল রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ এখন সময় সাপেক্ষ মাত্র। এবিষয়ে অভিমত কী? এবং তার প্রত্যাবর্তন নিয়ে যে গুঞ্জন তার সত্যতা কতখানি তা জানতে বরিশালটাইমসের পক্ষ থেকে আজ দুপুরে জাহাঙ্গীর কবির নানকের সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে অপরপ্রান্ত থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
তবে তার বিশ্বস্ত এক রাজনৈতিক সহোচর শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বললেন, অপেক্ষা করুন, কিছুদিনের মধ্যেই নেত্রী শেখ হাসিনার নয়া চমকে বরিশাল রাজনীতির চালকের আসনে নানকের স্ট্যারিং ঘুরাচ্ছে দেখতে পাবেন।’