২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শনিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের ক্রাইম ডেক্স:: শৈশবকাল থেকেই বেশ চাপা স্বভাবের ছিলেন আনিসুল করিম শিপন। নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতেন সবকিছু। বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবার চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল কর্মক্ষেত্রেও কোনো চাপে থাকলে তা কারও সঙ্গে শেয়ার করতেন না। ফলে কিছুটা মানসিক সমস্যা তার ওপর ভর করে। এই কর্মকর্তা সুচিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকার আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসা দেওয়ার পরিবর্তে ওই হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গাজীপুরের সন্তান ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্মকর্তা শিপনকে পিটিয়ে হত্যা করে। মঙ্গলবার গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে জানাজা শেষে তাকে সিটি করপোরেশন কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ হাজারো মানুষের চোখের জলে বিদায় নেন আনিসুল। জানাজায় অংশ নেন গাজীপুর জেলা পুলিশ ও মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আনিসুলের বাবা ফাইজুদ্দীন আহম্মেদ পুলিশ পরিদর্শক ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি কাপাসিয়া উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের আড়াল গ্রামে। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফাইজুদ্দীন মহানগরের বরুদা এলাকায় জমি কিনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বরুদার এই বাড়িতেই আনিসুলের কেটেছে শৈশব-কৈশোর।
জানাজায় অংশ নেওয়া মুসল্লিদের উদ্দেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার বড় ভাই বলেন- খুব চাপা স্বভাবের শিপন মানসিক চাপে থাকলেও কাউকে কিছু বলত না। সম্প্রতি তার কিছুটা মানসিক সমস্যা হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী ও আইজিপির কাছে তার হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন তিনি। বাবা ফাইজুদ্দীনও ছেলের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চান।
প্রতিবেশী চাচা মুক্তিযোদ্ধা এমএ কাশেম সাংবাদিকদের জানান, আনিসুল অত্যন্ত নম্র, ভদ্র, হাসিখুশি ও মিশুক প্রকৃতির ছিল। চাচা রফিকুল ইসলাম রতন এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার চান।
গাজীপুর শহরের রানী বিলাসমণি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০০ সালে এসএসসি ও কাজী আজিমউদ্দিন কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসি পাস করেন আনিসুল। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞানের (৩৩ ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। ৩১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হন আনিসুল। সর্বশেষ তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে ছিলেন। এর আগে তিনি পুলিশ সদর দপ্তর ও র্যাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০১১ সালে আনিসুল বিয়ে করেন। তার স্ত্রী শারমিন সুলতানাও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ দম্পতির সাফরান করিম নামের ছেলে রয়েছে।’