২১ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৪৯ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় বরগুনার শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রবিউল হত্যা মামলায় নিরপরাধদের জড়ানোর অভিযোগে বাবুগঞ্জে বিএনপি’র একাংশের সংবাদ সম্মেলন বাবুগঞ্জের ছাত্রদল নেতার খুনিদের গ্রেপ্তার পরবর্তী দৃষ্টান্ত ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ চুয়াডাঙ্গায় ৩ তক্ষকসহ গ্রেফতার ১জন বাবুগঞ্জ এলজিইডি’র এলসিএস কমিউনিটি অর্গানাইজার সানজিদার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ও হয়রানির অভিযোগ জোটের চাপ নাকি অভ্যন্তরীণ কোন্দল? বরিশাল -৩ আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। ভোটারদের মাঝে ‘ভিআইপি চমক’-এর গুঞ্জন বাবুগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এর ৫০ বছর পূর্তীতে ঝালকাঠি জেলা জাসাসের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাংলাবান্ধায় ভারসাম্যহীন নারী গণধর্ষণেন শিকার চার ধর্ষক আটক বাবুগঞ্জে ছাত্রদল নেতা হত্যাকাণ্ড: ২১ জনের নামে মামলা!
১৩২ বছরের ঐতিহ্য আজ ধ্বংসপ্রায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে বাহিরদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান

১৩২ বছরের ঐতিহ্য আজ ধ্বংসপ্রায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে বাহিরদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলেবাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার অন্যতম প্রাচীন এই বিদ্যালয়টি ১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বীকৃতি লাভ করে।১৩২ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বাহিরদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলছে ভয় ও ঝুঁকির মধ্যে শিক্ষাদান। কিন্তু দীর্ঘ পথচলার পরও এ বিদ্যালয়টি কোন নতুন ভবনের মুখ দেখেনি। জরাজীর্ণ ভবনে ৯০০ শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষেই দেয়ালজুড়ে বড় বড় ফাটল, পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদ ও বিম থেকে রড বেরিয়ে এসেছে, অনেক জায়গায় রডে জং ধরে ঝুলে আছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষে। দেয়ালের নিচে ভেজা মেঝেতে বসে পাঠ নিতে হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।
শিক্ষার্থী মারুফা জানায়, এই ভাঙা বিল্ডিংয়ে ক্লাস করতে তাদের খুব ভয় লাগে। প্রায়ই পলেস্তারা খুলে পড়ে এবং বালি-ধুলো গায়ে ও চোখে এসে পড়ে। এতে পড়াশোনায় সমস্যা হয়।
আরেক শিক্ষার্থী সাকিব বলে, বৃষ্টি হলেই ক্লাসরুমে পানি পড়ে, বই-খাতা ভিজে যায়। এভাবে ঝুঁকির মধ্যে থেকে পড়া-শোনা করতে খুব ভয় লাগে।
বিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট পাঁচটি ভবন থাকলেও তার মধ্যে চারটি বহু আগেই ফায়ার সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। ভবনগুলোর ছাদ ও দেয়াল প্রায় ভেঙে পড়ার মতো অবস্থায়। নেই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞানাগার বা নামাজের নির্ধারিত স্থান। মেয়েদের জন্য নেই কোন কমনরুম।
এই স্কুলে নেই কোন অফিস সহকারী, ফলে শিক্ষকরা একদিকে ক্লাস নিচ্ছেন, অন্যদিকে অফিসের কাজ সামলাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ শেখ জানান, তিনি নিজেও এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। বহুবার আবেদন করেও আজ পর্যন্ত কোনো সুফল মেলেনি। শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যেই প্রতিদিন ক্লাস করাতে হচ্ছে, যা খুবই হতাশা ও আতঙ্কজনক।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ ফরহাদ হোসেন বলেন, তিনি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন এবং দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিদ্যালয়ের অবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দ্রুত ভবন বরাদ্দসহ সার্বিক পরিবর্তনে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দেন।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, তিনি বিদ্যালয়টি নিজে পরিদর্শন করেছেন। ভবনগুলোর অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং করুণ বলেই মনে হয়েছে তার কাছে। তিনি বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন এবং আশ্বস্ত করেন যে খুব দ্রুতই এই সমস্যা সমাধান হবে।
ঐতিহ্য, সাফল্য ও গৌরব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ বিদ্যালয়টি আজ জরাজীর্ণ অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছে। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে স্কুলে আসে, অভিভাবকরাও সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিকল্প না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে ঝুঁকির মধ্যেই সন্তানকে পাঠাচ্ছেন স্কুলে।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন—একটি টেকসই ভবন নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা দ্রুত নিশ্চিত করা হোক। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপদ, সুষ্ঠু ও উন্নত পাঠশালা গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি।

*

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019