২১ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১৯ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মাহতাব উদ্দিন আল মাহমুদ ঘোড়াঘাট,(দিনাজপুর)
প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৫৮ বছর পর ২০২৩ সালের নভেম্বরের ১৮ তারিখ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখন মেলেনি আধুনিক চিকিৎসা সেবা। তীব্র জনবল সংকটে মুখ থুবড়ে পড়ছে চিকিৎসা সেবা।
গত এক মাস ধরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীরদের দীর্ঘ লাইন। ডাক্তার তিন জন থাকলেও সময় ভাগ করে নিয়ে দিনজুরে ১ জন ও পুরো রাত ১ জন ডাক্তারই জরুরী বিভাগে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। বলা চলে পুরা বহির্বিভাগ মিলে একজন ডাক্তার।
চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার সোনারপাড়া গ্রামের মঈন উদ্দিন বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যে পরিস্থিতি দেখছি তাতে ইমারজেন্সি রোগী না নিয়ে আসাই ভালো। ঘণ্টার পর ঘন্টা রোগীকে নিয়ে অপেক্ষা করে রোগীর ঠিক সময়ে চিকিৎসা হচ্ছেনা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো বহির্বিভাগের প্রায় সব রোগীর চোখে মুখে হতাশার ছাপ।
আরও দেখা যায়, ৩১ শয্যার পুরাতন ভবনের নিচতলায় জরুরি বিভাগে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও দুর্ঘটনায় আহত রোগী এবং তাদের স্বজনরা সেখানে ভিড় করে আছেন। দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক এবং অন্য স্টাফরা তাদেরকে পর্যায়ক্রমে সেবাদান করছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি, এক্স রে ও আলট্রাসনোগ্রাম রুমের সামনেও অনেক ভিড়। উপর তলায় শয্যা সংকটে অনেকে মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। উপজেলার ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮শ ৪৮ জনের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্যে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেনো অপ্রতুল। অপারেশন থিয়েটার চলছে ভাড়া করে আনা এনেস্থেসিওলজিস্ট দিয়ে। প্রধান সহকারী ও স্টোর কিপার না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শাখা স্টোর ও হিসাব স্বাস্থ্য সহকারীকে দিয়ে চালানো হচ্ছে জোড়াতালি দিয়ে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ জহুরুল আলমের দেয়া তথ্যমতে, নবনির্মিত ভবনের কার্যক্রম চালু হলেও ৫০ শয্যার জনবল নিয়োগের অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মিলবে না ৫০ শয্যার আধুনিক চিকিৎসা সেবা।
বাধ্য হয়েই ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিতে হচ্ছে ৩১ শয্যার সেবা। প্রতিদিন গড়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বহির্বিভাগে সেবা নেন প্রায় ৬০০ জন, আন্তঃবিভাগে সেবা নেন ৫০ থেকে ৫৫ জন এবং ল্যাবে সেবা নেন গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন রোগী।
পরিসংখ্যানবিদ আরও বলেন, নানান সংকটের কারণে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ফলে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ শয্যারও সেবা দেওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুধুমাত্র ৩১ শয্যার জন্যই আবাসিক মেডিকেল অফিসার সহ মোট ৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।
এছাড়াও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে প্রধান সহকারী, স্টোর কিপারের পদও শুন্য আছে। বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্য সহকারীকে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই বিভাগের কাজ চালানো হচ্ছে। এমনকি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ধরনের মালামাল রাখার জন্যে নাই কোনো স্টোর রুমের ব্যবস্থা। তিনি আরও জানান, ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেখানে ৩১ শয্যার জন্যই প্রয়োজন ৭ জন ডাক্তার, সেখানে একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী) ও একজন মেডিকেল অফিসারকে দিয়েই চলছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।
ফলে মাত্র ২ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে স্বাস্থ্যসেবা। সব মিলিয়ে শুধুমাত্র ৩১ শয্যার জন্যই মোট ১২২ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৭৪ টি বাকি ৪৮ টি পদ শূন্য রয়েছে।
এছাড়াও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, জুনিয়র মেকানিক, এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ও ৩ জন ওয়ার্ড বয়, ২ জন আয়া, ২ জন বাবুর্চি থাকার কথা থাকলেও সবগুলো পদ শুন্য। তাছাড়া ৩ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৬ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ৪ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী ও একজন নিরাপত্তা কর্মীর পদও শূন্য রয়েছে।
জানতে চাইলে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. সোলায়মান মেহেদী হাসান বলেন, হাসপাতালটি ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন থাকলেও ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ৩১ শয্যার যে জনবলের কাঠামো থাকা দরকার সেখান থেকেও এখানে অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে।
বিশেষ করে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর যে পদ আছে যে জনবলের কাঠামো থাকার কথা সেখানে নাই বললেই চলে। যার ফলে হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম থেকে অন্যান্য যে প্রশাসনিক এবং হাসপাতালের যে সেবা কার্যক্রম সেটা ব্যাহত হচ্ছে।
আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার এবং কনসালট্যান্ট থাকার কথা তার মধ্যে ২ জন ডাক্তার ও একজন গাইনী কনসালট্যান্ট আছে। এ অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে এ হাসপাতালটি চালানো দুঃসাধ্য। আমি এ ব্যাপারে আমার উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি এবং প্রতিমাসে আমরা তাদেরকে চিঠির মাধ্যমে জানাচ্ছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই হয়তোবা এ সমস্যার সমাধান হবে।