০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন, ৮ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি, শনিবার, ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি, স্বরূপকাঠির আটঘর-কুড়িয়ানা থেকে ফিরে ॥
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা ইউপির সাবেক জননন্দিত চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখর কুমার শিকদার (৫৫) হত্যা মামলায় বর্তমান চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার (৪৫)সহ ১৮ জন আসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে থানা পুলিশ। সম্প্রতি বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ আসাদুজ্জামান পিরোজপুর আদালতে এ চার্জশীট দাখিল করেন। চার্জশীট ভূক্ত অপর আসামীরা হলেন ওই ইউনিয়নের বাস্তুকাঠী গ্রামের দুই সহোদর শংকর সরকার(৪৩) ও পঙ্কজ সরকার(৫১) , মাহামুদকাঠী গ্রামের মোঃ জহিরুল ইসলাম (৪৪),জিন্দাকাঠী গ্রামের মনি বড়াল (৪৪),সঙ্গীতকাঠী গ্রামের আমিনুল ওরফে বাকিবিল্লাহ্(২৫),আদাবাড়ি গ্রামের বুলু মন্ডল(৪৩),জিন্দাকাঠী গ্রামের শান্তি বড়াল(৫০), ব্রাক্ষ্মণকাঠী গ্রামের তাপস মজুমদার(৪৯),বাস্তুকাঠী গ্রামের সজিব মিত্র ওরফে মোডাই(৪৫),কুড়িয়ানা গ্রামের স্বাধীন হালদার(৩০),আদাবাড়ী গ্রামের বাবুল কৃষ্ণ হাওলাদার(৫৬),কঠুরাকাঠী গ্রামের মিলন পাইক (৪৫),ভদ্রাংক গ্রামের স্বপন মন্ডল(৫৩),কুড়িয়ানা গ্রাামের সঞ্চয় বিশ্বাস(৩৬),মুসলিম পাড়া গ্রামের জালিস মাহামুদ (২০),কুড়িয়ানা গ্রামের দিলীপ সিকদার বুল ু(৫৩) এবং ওই গ্রামের রুবেল হালদার (৩২)। মামলার অপর আসামী সুষ্ময় হালদারের (১৯) বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। মামলা সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা ইউপি নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী মিঠুন হালদারের সঙ্গে অল্প ব্যবধানে পরাজিত নৌকার দলীয় প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখর কুমার শিকদারের নির্বাচন ও এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যানারে অতিথির নামের সিরিয়াল নিয়েও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ওই ব্যানারে শেখরের নাম মিঠুনের ওপরে ছিল। এসব জের ধরে গত বছরের ৩০ জানুয়ারী সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুড়িয়ানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখর কুমার শিকদার যোগদান করতে যাওয়ার পথে কুড়িয়ানা বাজার এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যান মিঠুন হালদারের নেতৃত্বে আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার ওপর হামলা চালায়। এসময় তাকে পিটিয়ে, কিল-ঘুষি মেরে ও পদদলিত করে আহত করা হয়। তাকে রক্ষা করতে গেলে তার ছোট ভাই শংকর কুমার শিকদার,দোকানী গোকুল বেপারী ও সজল শিকদারকেও বেদম মারধর করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় শেখর কুমার শিকদারকে প্রথমে স্বরূপকাঠি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন রাতে নিহত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখর কুমার শিকদারের স্ত্রী মালা মন্ডল বাদী হয়ে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মিঠুন হালদারসহ ১৯ জনকে আসামী করে স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ ) থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই সময় এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে কুড়িয়ানা বাজারের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাসহ এলাকার সর্বস্তরের হাজার হাজার নারী-পুরুষ দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল,মানববন্ধন ও সমাবেশ এবং ঘাতকদের ছবিতে ফাঁসির দড়ি ঝুলানো পোষ্টারিং করে তাদের ফাঁসির দাবি জানান। তখন মিছিল-সমাবেশে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। ময়না তদন্ত শেষে দাহ না করে শেষ বিদায়ে হাজারো মানুষের চোখের জলে তাকে বাড়ির আঙিনায় সমাধিস্থ করা হয়। পর পর দুই বার ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালীণ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অবহেলিত জনপদ আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নকে বদলে দেওয়া শিখর শিকদারের কথা স্মরণ করে আজও এলাকার মানুষ অশ্রুসজল হন। ওই সময় সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে র্যাব ও পুলিশের অভিযানে মিঠুন হালদারসহ বেশ কয়েকজন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে আসামীরা জামিনে রয়েছেন। নিহত শেখর কুমার শিকদারের ছোট ভাই শংকর কুমার শিকদার অভিযোগ করেন আসামীরা জামিনে বের হয়ে নানা ভাবে হুমকি ধামকি দেওয়াসহ আদালতে মামলা খেয়ে ফেলার দম্ভোক্তি করছেন। ফলে তারা নিরাপত্তা ও মামলার ভব্যিষৎ নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন। এদিকে স্থানীয়রা অশ্রুসজল নয়নে আক্ষেপ করে বলেন,জনপ্রিয় তাদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখর কুমার শিকদারকে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ঘাতকরা এখন জামিনে বের হয়ে এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন,দম্ভোক্তি করছেন,ইউপি চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার ইউনিয়ন পরিষদে বহাল তবিয়্যতে দায়িত্ব পালণ করছেন! অথচ শেখর শিকদার সমাধিতে মাটির নিচে চিরতরে ঘুমিয়ে আছেন। যা দেখে তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়! মামলার বাদী মালা মন্ডল তার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বনি-আমিন বলেন,উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখর কুমার শিকদারের হত্যা মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। প্রসঙ্গত,শেখর শিকদারের বড় ভাই সমীরণ শিকদারও নব্বই দশকের শুরুর দিকে সর্বহারা সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন। ###