০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, মঙ্গলবার, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অনলাইন ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকার বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) প্রচার করেছে বিবিসি হিন্দি। হিন্দিতে প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি, তাদের নিরাপত্তা ও ভারত–বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন নাহিদ। আসুন জেনে নিই সাক্ষাৎকারটিতে কী কী প্রশ্ন ছিল এবং কী উত্তর দিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা।
প্রশ্ন: ভারত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়ে বারবার কথা বলছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
নাহিদ ইসলাম: এখানকার সংখ্যালঘুরা আমাদের নাগরিক। তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। এ নিয়ে ভারতের কিছু বলার দরকার নেই। বরং ভারতের কথা বলা উচিত, গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা নিয়ে। এমনকি, বাংলাদেশের বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারত কী ধরনের সাহায্য করতে পারে- এ সংক্রান্ত প্রশ্নও করা যায় এখন। এ বিষয়ে কথা বলা প্রয়োজন।
আরও বলতে চাই, ভারতীয় গণমাধ্যম আমাদের সরকারকে নিয়ে ভুল সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। ভারতের উচিত, এ বিষয়ে একটা সীমা টানা। আমরা চাই, তথ্যের ভিত্তিতে আলোচনা হোক ও সম্পর্ক উন্নয়নের প্রশ্নেও আলোচনা হোক।
প্রশ্ন: আপনি বলেছেন, জুলাই-আগস্টে এখানে যা হয়েছে সে বিষয়ে ভারতের অবস্থান পরিষ্কার করা, এর মধ্য দিয়ে আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন?
নাহিদ ইসলাম: জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগ যে গণহত্যা ঘটিয়েছে, সেটাকে ভারত কীভাবে দেখে, ভারত এখনো তা স্পষ্ট করেনি। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে। কিন্তু ভারত এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। উল্টো যার ওপরে এই ঘটনার দায় বর্তায়, তাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত।
প্রশ্ন: তার মানে কি ভারত বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এড়িয়ে যাচ্ছে?
নাহিদ ইসলাম: যে ব্যক্তি তার স্বজনকে হারিয়েছে, ভারত যদি তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয় তাহলে বাংলাদেশের জনগণ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নেবে। আমি চাই, ভারত আমাদের সহায়তা করুক, যাতে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
প্রশ্ন: আগস্টের সহিংসতার সময় ভারত সব পক্ষকে সংযত থাকার কথা বলেছিল। সংখ্যালঘুদের অনেক সংগঠন বলেছে, গত তিন মাসে সংখ্যালঘুদের ওপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। আমরাও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তার প্রমাণ পেয়েছি। তারা বলছে, প্রশাসনের ওপর তারা আস্থা রাখতে পারছে না। বিষয়টি কি আপনি জানেন? যদি জানেন, তাহলে কীভাবে দেখছেন?
নাহিদ ইসলাম: এখানে যা কিছু হয়েছে, তা আমাদের নজরে রয়েছে। মানুষের যে ভোগান্তি হয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা জানি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হতো, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো।
দুর্গাপূজার কথাই ধরেন। বলা হচ্ছিল, আরও সহিংসতা হবে। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করেছি, শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদ্যাপিত হয়েছে। আমাদের সরকার সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কথা বলেছে, আশ্বস্ত করেছে। তারাও এতে আশ্বস্ত হয়েছেন।
প্রশ্ন: সংখ্যালঘুরা বলছে, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নাহিদ ইসলাম: আমি তো বলবো, অন্য কোনো সরকার সংখ্যালঘুদের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেনি, যা আমরা গত তিন মাসে করেছি। আগের সরকারগুলো এ বিষয়ে শুধু রাজনৈতিক ফায়দা নিয়েছে। তাদের ওপর থেকে সংখ্যালঘুদের আস্থা কমে গিয়েছিল। আমাদের এসব ঠিক করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু তাদের কিছু বিষয় আছে, যার তাৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের সময় দিতে হবে।
প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর কিছু উগ্র ও কট্টরপন্থি সংগঠনের তৎপরতা বাড়তে পারে। এ কারণে শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতের নিরাপত্তারও সমস্যা হতে পারে।
নাহিদ ইসলাম: বাংলাদেশের মানুষ কখনো কোনো সহিংসতা বা উগ্রবাদী সংগঠনকে সমর্থন করে না। বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক সরকার চায়। আপনি যা বলছেন, সেটা আওয়ামী লীগের প্রচার করা মিথ্যা বয়ান। তারা বলতো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর তৎপরতা বেড়ে যাবে। এসব বলে বলে তারা এত বছর বাংলাদেশ শাসন করেছে। ভারতও এই ন্যারেটিভ সমর্থন করে।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারে থাক বা না থাক, সেটার প্রভাব কেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে পড়বে? এর মানে হলো, ভারত এ দেশের মানুষের সঙ্গে নয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিল। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে এ প্রশ্ন উঠত না। যেমন আমরা এটা দেখি না ভারতে কে ক্ষমতায় বিজেপি না কংগ্রেস। সে রকমই এখানেও এটাই হওয়া উচিত– আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে না নেই সে প্রশ্ন থাকা উচিত নয়।
প্রশ্ন: ভারত সরকার বলছে, ভারত–বাংলাদেশের মধ্যে সড়ক, নৌ বা রেল যোগাযোগের প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে এগুলো থেকে কে সুবিধা পাবে, আওয়ামী লীগ নাকি বাংলাদেশের জনগণ?
নাহিদ ইসলাম: আমি শুধু এটাই বলব, বিষয়গুলো আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না দেখাই উচিত। আমরা দুই দেশ একে অপরকে সঙ্গ দিলে উভয়ের কল্যাণকর কাজ করা সম্ভব। আমরা কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করিনি। কোনো প্রকল্পও বন্ধ করিনি। সবকিছু আগের মতোই চলছে।
প্রশ্ন: এমন কথা বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে বিনিয়োগ পর্যালোচনা করছে। সেই পর্যালোচনা কি এখনো চলছে, নাকি শেষ হয়েছে? আপনার কি মনে হয়, দুই দেশ এখন আবার নতুন করে আলোচনা শুরু করতে পারে?
নাহিদ ইসলাম: হ্যাঁ, আমরা প্রকল্পগুলোর সমীক্ষা করছি। তবে শুধু ভারতের নয়, সব দেশের সঙ্গে থাকা প্রতিটি প্রকল্পর সমীক্ষা চলছে। আমরা এটা দেখার চেষ্টা করছি যে এই প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কি না কিংবা প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়, এমন কিছু আছে কি না।