২১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩০ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি: দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার বলিভদ্রপুর এম এম দাখিল মাদ্রাসার চতুর্থশ্রেনীর কর্মচারি (একজন আয়া ও একজন নিরাপত্তা কর্মি ) নিয়োগের অনিয়ম নিয়ে এলাকায় চরম আকার ধারণ করেছে।
এলাকাবাসি ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১৬ই জুন ২০২৩ ইং তারিখে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় মাদ্রাসার জন্য নিরাপত্তা কর্মী ও একজন আয়া পদে নিয়োগের জন্য আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। উক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আয়া পদে ৯টি এবং নিরাপত্তা কর্মী পদে ১০টি আবেদন জমা পড়ে। এ বিষয়ে উক্ত মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোফাজ্জল হোসেন প্রার্থীদের আবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
উক্ত নিয়োগকে কেন্দ্রকরে যারযার প্রার্থীদের পক্ষে প্রভাবশালীদের নিয়ে সর্বোচ্চ অর্থের প্রলোভনসহ নিয়োগ চুড়ান্ত করতে দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন। আবার অনেকেই নাকি স্থানীয় সাংসদের নিকটহতে সবুজ সংকেত বা সমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টা চেষ্ঠায় ও মগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাতে মাননীয় সাংসদ মহদয় ও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।
আয়া প্রার্থীদের পক্ষে স্থানীয় কিছু লোকজন বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে উপজেলার সরকার দলীয় নেতাদের নিকট দফায় দফায় বৈঠক করার জন্য ধর্না দিচ্ছেন। টার্গেট একটায় প্রার্থীর পক্ষে জোরালো সমর্থন আদায়। এবিষয় এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা সমালোচনা এখন তুঙ্গে দাঁড়িয়েছে। এলাকার চায়ের দোকানে ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে অর্থনৈতিক বিষয়ে আলোচনা উঠে আসায় সাধারণ জনগনের মাঝে একটি বিরুপ ধারনায় রুপ নিচ্ছে। এরই মাঝে আবার কেউ কেউ উপজেলা নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে মুনাফা লাভের চেষ্টাও করছেন অনেকেই। অন্যদিকে শোনা যাচ্ছে মাদ্রাসার শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির কিছু সদস্য গোপনে তাদের পছন্দের প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে মাননীয় সাংসদ ও উপজেলা নেতাদের নিকট সমর্থন আদায়ের লক্ষে লোক পাঠাচ্ছেন। সর্বোপরি দেখা যাচ্ছে মাদ্রাসার আয়া নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ নিয়ে অনেক নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মাঝে শোনা যাচ্ছে, আয়া নিয়োগ পাবার জন্য কোনো কোনো প্রার্থীর পক্ষ হতে অবৈধ অর্থের ঝনঝনানি। কেউ কেউ নাকি তাদের প্রার্থীকে নিয়োগ নিশ্চিত করতে মোটা অংকের টাকাও দিয়েছে তাঁদের বিশ্বস্থ নিয়োগ প্রদানকারী কর্তা ব্যক্তির নিকট। একজন জনৈক প্রার্থীর পক্ষ মাদ্রাসার শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির নিকট নিয়োগ পাবার জন্য সমর্থন ও দোয়া চাইতে গেলে, মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক তাকে স্পষ্ট ভাবে বলেন, মাদ্রাসায় চাকুরী তোমাকে দেওয়া যাবেনা। তুমি মাদ্রাসার সামনে চা বিস্কুট ও পিয়াজুর দোকান দাও। ইহাতেই তোমার দিন চলে যাবে। এ কথা শোনার পর এলাকার সচেতন মহল বিশ্বয় প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে “এ কথা নিয়োগ প্রদানকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ আবেদনকারীকে কেমন করে বলতে পারেন? তাছাড়া এমন কথা বলার কারনই বা কি?
এবিষয়ে মাদ্রাসার দু’একজন সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ওই প্রার্থীনিকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য যদি স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান বা আর কেউ বলেন, তবে আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবো। প্রয়োজনবোধে তাঁরা আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলেও জানিয়েছেন। তাঁরা আরো জানিয়েছেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ আমরা যাঁকে খূসি তাঁকেই নিয়োগ দিব। আমাদের মাদ্রাসার নিয়োগে হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার কারোর নেই।
অন্য দিকে আয়াপদে আবেদনকারী এক প্রার্থীনির অবিভাবকের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, যদি আমার মেয়ের নিয়োগ না পাই তবে আমার বড় সর্বনাস হয়ে যাবে। নিয়োগটি পাওয়ার জন্য আমি এযাবৎ কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছি। কাকে টাকা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন।
অন্য দিকে একজন নিরাপত্তা কর্মী প্রার্থীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমি মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ মুরাদ চৌধুরীর নিকট আমার নিয়োগের বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি আমাকে বলেন, যে প্রার্থী সর্বোচ্চ বেশি টাকা দিবেন তাঁকেই নিয়োগ দিবো। মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুরাদ চৌধুরীর সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, আমরা একজন প্রার্থীকে নির্ধারণ করে রেখেছি আর কাউকে রাখিনি, সে যদি বলে আমি চাকুরি করবোনা তবে তার দেওয়া টাকা আমরা ফেরত দিব।
এ সব বিষয় নিয়ে মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মাওঃ মোঃ আঃ সাত্তার সাহেবের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমি এই নিয়োগের বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাইনা।কারন আমি এখানে অসহায়। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সহ কয়েকজন সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন, আমি সুপারিন্ডেন্ট মাত্র।
সকল দিক বিবেচনা করে এলাকার সর্বস্থরের সচেতন মহল উক্ত বলিভদ্রপুর মাদ্রাসায় ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগের অনিয়ম ও দূর্নীতি বিষয়টি সরেজমিন তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বোর্ড ও প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।