২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩২ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি : নিজের হাত কাটলেন বউমা স্বামী শ্বশুর শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে মেয়ের বাবা। তেঁতুলিয়ায় যৌতুক ও হত্যা চেষ্টায় করা শ্বশুরের মামলায় জেল খাটছেন জামাই। কিন্তু ঘটনাটি মিথ্যা বানোয়াট বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জামাই পরিবার ও এলাকাবাসী। তারা বলছেন, ওই গৃহবধু নিজে নিজেই ব্লেড দিয়ে নিজের হাত কেটে রক্তাক্ত করেছিলেন। পরে সে ঘটনায় যৌতুক, নির্যাতন ও হত্যা চেষ্টা অভিযোগ এনে তেঁতুলিয়া থানায় জামাইসহ ৫জনকে আসামি করে মামলা করেছেন শ্বশুর শাহাবুদ্দিন।
মামলার বিবরনীতে জানাযায়, তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের নাজিরাগছ গ্রামের আমান আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (২৮) সাথে বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের জামাদারগছ গ্রামের সাহাবুদ্দিনের মেয়ে শাবনুর (২৮) এর বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক কন্যা ও এক ছেলে রয়েছে। অভিযোগ, স্বামী ও তার পরিবার যৌতুকের লোভে শাবনুরের উপর নানান নির্যাতন চালিয়ে আসছে। গত ২০ আগস্ট সকালে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দুধের সাথে চেতনানাশক ঔষধ খাইয়ে শাবনুরকে প্রাননাশের লক্ষে মারধর করা হয়। স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান শাবনুরের হাতপা ধরে ধারালো ছোরা দিয়ে বাম হাতের কবজির ১ ইঞ্চি কেটে দেয়া হয় বলে শ্বশুরের অভিযোগ। এতে তার রগগুলো কেটে প্রচুর রক্তপাত ঘটে। স্বামীর পরিবারের লোকজন গুরুতর আহতাবস্থায় শাবনুরকে তেঁতুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে আসলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে রেফার্ড করা হয়। পরে রংপুর থেকেও তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। পরে তার স্বামী সৈয়দপুর থেকে বিমান যোগে ঢাকায় নিয়ে আল-মানার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় শাবনুরের বাবা সাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে মেয়ের জামাই মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান নামীয় আসামী করে ৫জনের বিরুদ্ধে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় ১১ (ক)/১১ (গ)/৩০ ধারায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩, তৎসহ ৩২৮ পেনাল কোড-১৮৩০ এ মামলা করেন। এ মামলায় স্বামী মোস্তাফিজুর রহমানকে পঞ্চগড়ে রেলস্টেশন থেকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনাটির সত্যতা জানতে যাওয়া হয় নাজিরাগছ গ্রামে। ঘটনাস্থল ঘুরে কথা হয় এলাকাবাসির সাথে। সে সময় প্রায় দুই শতাধিক এলাকার লোকজনের জমায়েত হয় সেখানে। স্ত্রীকে মারধর ও হত্যা চেষ্টা বিষয়ে স্বামী মোস্তাফিজুরের রহমানের বিরুদ্ধে কথা বললে এলাকাবাসি ক্ষেপে যান।
এলাকাবাসী এ মামলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, মামলাটি মিথ্যা। মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরাপরাধ একটি ছেলেকে জেল খাটানো হচ্ছে। শাবনুর ও মোস্তাফিজুর দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে আলাদা এক বাড়িতে বসবাস করেন। ঘটনার সময় বাড়িতে কেউ ছিলো না।
জানা যায়, এর আগে মোস্তাফিজুর ও স্ত্রী শাবনুরকে নিয়ে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছিলেন। সেখানে বসবাসের সময় শাবনুর আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। সে ঘটনায় ভাড়া বাড়ি থেকে তাদের বের করে দেয়া হয়। বিষয়টি জানিয়েছেন ওই ভাড়া বাড়ির মালিক।
মোস্তাফিজুরের বাবা এনামুল ও মা মাসুদা খাতুন জানায়, মেয়েটিকে বউ করে আনার পর থেকেই তার মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখছিলাম। আমাদের সাথে এক সঙ্গে না থাকতে চাওয়ায় তাদেরকে আলাদা বাড়ি করে দেয়া হয়। ওই বাড়িতে এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে মোস্তাফিজুর বসবাস করছিল। ঘটনার দিন সকালেই মোস্তাফিজুর শালবাহান বাজারে দোকানে চলে যায়। সকাল ১০টার দিকে শাবনুরের হাত কাটার বিষয়টি জানতে পারি। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে তেঁতুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রেফার্ড করলে আমরা টাকা জোগার করে দ্রুত রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শাবনুরকে রংপুর থেকে বিমানে ঢাকায় নিয়ে যাই। পরে ঢাকায় চিকিৎসা চলাকালিন অবস্থায় আরও টাকার প্রয়োজন হলে ছেলেটি (শাবনুরের স্বামী) বাড়িতে টাকার জন্য ট্রেনে আসার সময় পঞ্চগড় রেলস্টেশনে নামলে সেখান থেকে মোস্তাফিজুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মোস্তাফিজুরের বড় ভাই মাহবুব জানান, আমাকেসহ ৫জনকে আসামী করা হয়েছে। ঘটনার খবর শুনে দ্রুত মোস্তাফিজুরের বাড়িতে যাই, সেখান থেকে ভাইয়ের বউ শাবনুরকে আহতাবস্থায় দেখে তেঁতুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাই। তার চিকিৎসার খরচ সংগ্রহ করে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য ভর্তি করি। তারপরেও মামলার আসামী হলাম! আদালত থেকে মোস্তাফিজুর বাদ দিয়ে আমার বাবা,মা,আমার বোন ও আমি জামিনে আছি।
নাজিরাগছ গ্রামের দোকানদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সকালে আমার দোকান থেকে মোস্তাফিজুরের বউ (স্ত্রী) ব্লেড কিনে নিয়ে আসে। সে সময় মোস্তাফিজুর শালবাহান বাজারে তার দোকান খুলে দোকানদারী করছিলেন। সাজু ও মফিজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, ঘটনাটি মেয়েটি নিজে হাত কেটে দিয়েছে। কিন্তু মামলাটি মিথ্যা ঘটনা দিয়ে সাজানো। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছেন এলাকাবাসী।
শনিবার বিকেলে শাবনুরের বাবা সাহাবুদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, এজাহারে যা লেখা হয়েছে সেটাই ঠিক। এ জন্য মেয়েকে নির্যাতনের বিচার চাইতে সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সাঈদ চৌধুরী জানান, এ সংক্রান্ত ঘটনায় মেয়েটির বাবা সাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে তেঁতুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এজাহার দিলে মামলা রুজু করা হয়। মামলার তদন্ত চলছে।