২১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৯ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তানজিল জামান জয়, কলাপাড়াঃ মুজিব শতবর্ষের গৃহহীন ভূমিহীনদের তালিকার সঙ্গে ৪২ বিত্তবানদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ৭৬ একর খাস জমি দলিল করে দেয়ার ঘটনায় কলাপাড়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরের নামে কলাপাড়া থানায় মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কলাপাড়ার উপজেলা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক মামলাটি করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সই স্ক্যানিং করে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির এমন অপকর্ম করায় মামলাটি করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, মুজিব শতবর্ষের গৃহহীন ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতক খাস জমি সহ সেমিপাকা একটি ঘর প্রদানের লক্ষ্যে ২৮ মার্চ, ২৪ এপ্রিল ও ১৯ মে তিনটি স্মারকে ১৯৫ টি বন্দোবস্ত কেসের কবুলিয়াত রেজিস্ট্র কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সার্ভেয়ার মোঃ হুমায়ুন কবিরকে ক্ষমতা প্রদানপূর্বক তার স্বাক্ষর সত্যায়ন করে খেপুপাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করা হয়।
কিন্তু সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির অফিসের মূল ফরোয়ার্ডিং গোপন করে নিজের তৈরি স্ক্যান করা ফরোয়ার্ডিং দিয়ে তিন দফায় আরও ৪২টি বিত্তবান, কথিত ভূমিহীনের নাম অন্তর্ভূক্ত করে
তাঁদের নামে ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাস জমির দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন। এ বছরের ১৯ এপ্রিল ২২টির স্থলে ৩১টি, ২৪ এপ্রিল ১২০টির স্থলে ১৩২টি এবং ১৯ মে ৫৩টির স্থলে ৭৪টি কবুলিয়াত দলিল রেজিস্ট্রি করে নেয় সার্ভেয়ার হুমায়ুন। এই অতিরিক্ত ৪২টি দলিলে সর্বোচ্চ তিন একর থেকে নিচে এক একর করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেখানো হয়েছে। ৬০ এর দশক থেকে ২০০২-২০০৩ দশকের তালিকার কেস নম্বর থেকে ৪২ টি নামে এই পরিমান খাস জমি মুজিবশতবর্ষের তালিকায় ঢুকিয়ে রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে। কবুলিয়াতের দুই শতক লেখা জায়গায় হাতের লেখায় কাটা ছেঁড়া করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরের মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে।
তাকে অফিসেও পাওয়া যায়নি। তাকে চাকরি থেকেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তবে এ ঘটনার সঙ্গে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের
যোগসাজশ থাকতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। কারণ মুজিববর্ষের সকল কবুলিয়াত রেজিস্ট্রিতে দুই শতক খাস জমি দেয়ার কথা লেখা থাকলেও কীভাবে একে একে ৪২টি কবুলিয়াত রেজিস্ট্রি করা হয়েছে সর্বোচ্চ তিন একর খাস জমির। ওই অফিসের এক স্টাফের নামেও বন্দোবস্ত দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। বর্তমানে এই ৭২ একর খাস জমির মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
সার্ভেয়ারের এমন জালিয়াতির ঘটনায় আর কে কে জড়িত তা এখন অফিস পাড়ায় মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। সাব রেজিস্টার রেহেনা পারভিন বলেন, ‘যেহেতু ভূমিহীন গৃহহীনদের দলিল ছিল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সই ছিল। সার্ভেয়ার তাড়াহুড়া করে নামজারির কথা বলেছে। তাই সরল বিশ^াসে প্রত্যেক পাতা দেখিনি। এখন তো দেখি এই অবস্থা।’ তবে ওই ৪২টি কবুলিয়ত দলিল বাতিল করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে। কলাপাড়া থানার ওসি মোঃ জসীম জানান, মামলাটি একজন এসআইকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।