০৪ মে ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন, ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, শনিবার, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
ঝালকাঠিতে পারিবারিক দ্বন্দ্বে সুজনকে পিটিয়ে হত্যা, বাবা ও ভাই গ্রেপ্তার ছেলের কবরে বেড়া দিতে গিয়ে মারা গেলেন বাবাও ভোলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৩০ বরিশাল সিটিতে ৫ বছর পর সরকারি বরাদ্দে উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন সিলেটে আগাম বন্যার আশঙ্কায়!! হাওরজুড়ে কৃষকের ব্যস্ততা চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও দর্শনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি অধ্যাপক এমএ গফুর ইন্তেকাল দর্শনায় পৌর উদ্যোগে সড়কে পানি ছিটানো উদ্যোগ তেঁতুলিয়ায় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত জীবননগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাগণের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত আগৈলঝাড়ায় বিএনপি’র আহ্বায়ক রেজা ও যুগ্ম আহ্বায়ক লাভলু ভাট্টির দল থেকে পদত্যাগ
বিদ্যাসাগরই নারীদের ঘোমটার আড়াল থেকে বের করে আসেন। আজকের ক্রাইম-নিউজ

বিদ্যাসাগরই নারীদের ঘোমটার আড়াল থেকে বের করে আসেন। আজকের ক্রাইম-নিউজ

সোহেল সানি

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। যিনি বাংলা বাঙালি মেয়েদের সামনে খুলে দেন এক নতুন পৃথিবীর দরজা। মেয়েদের ঘোমটার আড়ালের অন্ধকার থেকে বের করে আনেন আলোতে।
সেই সূত্রে বাংলা- ভারত উপমহাদেশে মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রধান পথ-প্রদর্শকও বিদ্যাসাগর। দুঃখ, লাঞ্চনা-বঞ্চনায় পীড়িত হলে অযথা অশ্রুপাত না করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার কথা বলতেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও ঈশ্বরচন্দ্র এই তিন নক্ষত্রই জন্মেছেন অবিভক্ত বাংলায়। বিশ্বাসও করতেন অবিভক্ত বাংলায়। দেশ বিভাগকে তাঁরা ‘বঙ্গমাতার’ অঙ্গচ্ছেদ মনে করতেন। তিন জনের জন্মস্থান সূত্রে পশ্চিম বাংলায়। রবীন্দ্রনাথ ও ঈশ্বরচন্দ্রের শশ্মান পরাধীন পশ্চিম বাংলায়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। কবি তখন বাকহারা। ১৯৭৬ সালে মৃত্যু হলে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।
নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বঙ্গবন্ধু পূর্ববাংলার নাম পূর্বপাকিস্তান রাখা হলে পাকিস্তানের গণপরিষদে তার প্রতিবাদ করেন এবং “বাংলাদেশ’ নাম রাখার দাবি জানান। যখন তাঁর প্রিয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর নেতৃত্বে পাকিস্তানে কেবল নয়, পূর্ববাংলার ক্ষমতায় আসীন আওয়ামী লীগ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের ‘ আমার সোনার বাংলা’-কে জাতীয় সঙ্গীতরূপে গ্রহণ করেন। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন” রচয়িতা শুধু নয়, গান্ধীজীর ‘মহাত্মা’ উপাধিও রবীন্দ্রনাথের দান।
রবীন্দ্রনাথ সঙ্গীতটি রচনা করেন বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ১৯০৬ সালে। তাঁর ও মহাত্মার কংগ্রেসের স্বদেশী আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ১৯১১ সালে পূর্ববাংলা ও পশ্চিম বাংলা আবার একীভূত হয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৪৭ সালে আবার বাংলা ভাগ হয়।
অখন্ড বাংলার দাবি জোরদার হতে থাকলে কংগ্রেসের বল্লভভাই প্যাটেলের চরমপন্থি উপদল ও চরমপন্থি হিন্দু মহাসভা হিন্দুদের লেলিয়ে দেয় মুসলমানদের ওপর আক্রমন করতে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়ে ব্যর্থ করে দেয়া হয় বাংলার সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর ভ্রাতা শরৎবসুর অখন্ড স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। জাতীয় রণসঙ্গীত তার “চল চল চল” সঙ্গীতটি। বাঙালী জাতীয়তাবাদের অন্যতম দিশারী নজরুলও অবিভক্ত বাংলাদেশে বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধু ছাত্রজীবনেই জয়বাংলা শব্দটিও আতস্থ করেন কবি নজরুলের মুখ থেকে।

“বিদ্যাসাগরের কীর্তি ”

স্বাধীন বাংলাদেশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এক রকম অবহেলিত। বাংলাদেশে তাঁর রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি মেলেনি। অথচ বিদ্যাসাগরই মাতৃভাষা বাংলায় প্রথম রচনা করেন ‘বর্ণমালা’ ও ‘কথামালা’।
‘বোধেদয়’ ও ‘বেতালপঞ্চবিশংতি’ তাঁর রচনা। বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এর মাধ্যমে। তিনি নারী মুক্তি আন্দোলনেরও প্রধান স্থপতি। সমগ্র রক্ষণশীল সমাজের ক্রোধ উপেক্ষা করে সতীদাহ প্রথা বিলোপ করাতে বাধ্য করেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে। ‘বিধবা বিবাহ আইন’ তাঁর তীব্র আন্দোলনের ফসল। বিদ্যাসাগরের মহান কীর্তির প্রতি স্বাধীন বাংলাদেশের শ্রদ্ধার পরিমাপ কতটুকু তা বলা মুশকিল। যদিও স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ভুমিকা বিদ্যাসাগরের নারী মুক্তির স্বপ্নপূরণের পথে ইতিবাচক ভুমিকায়ই অবতীর্ণ রয়েছেন। শেখ হাসিনার নারীর মর্যাদাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বপর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে অবদান অসামান্য ও বিরল।
ঈশ্বরচন্দ্রের যুগে মেয়েদের বিয়ে হতো শিশু বয়সেই। অনেক মেয়ে বিবাহ কি, তা বোঝার আগেই বিধবা হয়ে যেত। ওখানে শেষ নয়, মৃত স্বামীর সঙ্গে সহমরণে যেতে বাধ্য করা হতো বিধবাকে। হিন্দুরীতি প্রথার বাস্তবায়ন হতো চিতায় প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে মৃত স্বামীর সঙ্গে জীবিত বিধবা স্ত্রীকে ঝাঁপ দিতে হয়। নিষ্ঠুর এ মৃত্যুবরণ করতে হতো স্বেচ্ছায়। বিধবা সহমরণে রাজী না হলে বিধবাকে নিক্ষেপ করা হতো চিতার অগ্নিকুণ্ডে। স্বীয় হিন্দু ধর্মেরই অনুসারী হয়েও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ওই অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন বাংলা তথা ভারতে। ১৮৫৬ সালে বাধ্যবাধকতার মুখে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাশ করে ‘বিধবা বিবাহ আইন। বাংলার শান্তিপুরের তাঁতি মেয়েরা শাড়ির পাড়ে অক্ষর বুনে দিলেন ‘বেঁচে থাক বিদ্যাসাগর চিরজীবী হয়ে।’বিদ্যাসাগরের একমাত্র পুত্র বিয়ে করেন এক বিধবা কিশোরীকে। পুত্রের বিধবা বিবাহের খবরে খুশী হয়ে পত্রিকার পাতায় ঈশ্বরচন্দ্র লেখেন, ‘ছেলে আমার মুখ উজ্জ্বল করেছে।’ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রবর্তনকে তাঁর জীবনের সর্বপ্রধান কর্ম বলে মনে করতেন। ১৮৯১ সালে মহাপ্রয়াণে গমন করেন।১৮৫৬ সালের ১৬ জুলাই বিধবা বিবাহ আইন বিধিবদ্ধ হয় এবং ৭ ডিসেম্বর প্রথম বিধবা বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় তাঁর সম্মানে। বাল্যবিবাহ এবং বহু বিবাহের বিরুদ্ধেও অগ্রণী পুরুষ ভুমিকা রাখেন ঈশ্বরচন্দ্র। কথায়, কাজে, সমাজে ও ব্যক্তিজীবনে বিদ্যাসাগরের মতো এমন আদর্শনিষ্ঠ, দেশ ও মানবপ্রেমিক চরিত্র উনিশ শতকের জাগরণেও ছিল বিরল।
১৮২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কলকাতার মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাক্ষ্মণ পন্ডিতের ঘরে জন্ম নেয়া ঈশ্বরচন্দ্র ১৮৪১ – এ শিক্ষকতার জীবন বেছে নেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান পন্ডিতরূপে। বছর চারের মধ্যে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেন ছেলে-মেয়েদের জন্য ৫৫টি বিদ্যায়তন। উনিশ শতকের মধ্যভাগে বাংলার শুধু নয়, ভারতের সমাজ সংস্কারদের মধ্যমণি ছিলেন নিঃসন্দেহে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। নারী শিক্ষা প্রসারে সর্বপ্রধান সংগঠক ও প্রধান চিন্তানায়ক আবার রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী বিদ্যাসাগর।’ তিনি দয়ার সাগর বলেও বিখ্যাত। সর্বোপরি দয়া নয়, বিদ্যা নয়, বিদ্যাসাগরের চরিত্রে প্রধান গৌরব তাঁর অজেয় পৌরুষ,তাঁর অক্ষয় মনুষ্যত্ব।’

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019