১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৭ অপরাহ্ন, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
গাড়ি-বাড়ি নিয়ে শো-অফ, ভুয়া ভিসা বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি মামুন বানারীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের ফুলেল শুভেচ্ছায সিক্ত মেনন বানারীপাড়ায় তহশিলদার ও সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ যুবকের আত্নহত্যা, বাড়িতে খালু শ্বশুরের ঘুষি, সালিশে মেম্বারের দেওয়া থাপ্পড় না কি স্ত্রীর ওপর অভিমান বাবুগঞ্জে আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত চুয়াডাঙ্গায় ৫’শ পেঁপে গাছ কেটে দেয়ার প্রতিবাদে কৃষকজোটের মানববন্ধন ও সমাবেশ বাবুগঞ্জে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন গাবখান সেতুর টৌলপ্লাজায় ভয়াভয় দূর্ঘটনায় দায়ী ঘাতক ট্রাকচালক ও সহযোগী আটক মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা গলায় তিল থাকা নারীদের যেসব গুণ থাকে
দেশবাসীর প্রতি ঐক্যের ডাক বাইডেনের। আজকের ক্রাইম-নিউজ

দেশবাসীর প্রতি ঐক্যের ডাক বাইডেনের। আজকের ক্রাইম-নিউজ

অনলাইন ডেস্ক
নজিরবিহীন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘আমার সমস্ত সত্তাজুড়ে একটাই আকুতি, আমরা ঐক্যবদ্ধ হব। আমি পুরো যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে আমার সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই। বিশ্বকে আমরা আমদের শক্তি দিয়ে নয়, নেতৃত্ব প্রদান করব উদাহরণ সৃষ্টি করে।’

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে আজ বুধবার সমাগম ঘটেছিল মার্কিন রাষ্ট্রনেতাদের। সেনা সদস্য ও নানা স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান ইতিহাসের নায়ক জো বাইডেন তাঁর আবেগ মাখা বক্তৃতা দেন। অভিষেক বক্তব্যে বাইডেন বলেছেন প্রত্যাশা ও প্রতিশ্রুতির কথা। গত চার বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্ব মার্কিন যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে, তা থেকে বেরিয়ে আশাবাদের কথা বলেছেন জো বাইডেন।

পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দফা ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন। তাঁকে শপথ পাঠ করান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট ফ্রন্টে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত সিনেটর এমি ক্লোবুচার প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘আজ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র উঠে দাঁড়ানোর সময়। সব গ্লানি মুছে সব সময়ের মতো যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেওয়ার দিন আজ।’

শপথ অনুষ্ঠানের চেয়ারপারসন রিপাবলিকান সিনেটর রয় ব্লান্ট তাঁর বক্তব্যে গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর হামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তাঁর আহ্বানে শপথ অনুষ্ঠানে সমবেত সবাই দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। সিনেটর ব্লান্টের বক্তৃতা শেষে জো বাইডেন এগিয়ে গিয়ে তাঁকে ধন্যবাদ জানান।

করোনা বাস্তবতা ও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে মাস্ক পরে উপস্থিত আইনপ্রণেতা ও মার্কিন সরকারের বিচার বিভাগ, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সীমিত আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে এ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। বিখ্যাত মার্কিন সংগীত শিল্পী লেডি গাগা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এ সময় উপস্থিত রাষ্ট্রনেতারা দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতকে অভিবাদন জানান। এ সময় লেডি গাগার পরনে মার্কিন এয়ারফোর্সের মনোগ্রাম শোভা পাচ্ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম লাতিন বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসকে শপথবাক্য পাঠ করান। এর মধ্য দিয়ে মার্কিন ইতিহাসে প্রথম নারী,কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হলেন কমলা হ্যারিস। কমলা হ্যারিসের শপথ গ্রহণের সময় তাঁর স্বামী ডাও এমহফ বাইবেল ধরে রাখেন। এর পর বিখ্যাত শিল্পী জেনিফার লোপেজ যুক্তরাষ্ট্রের দেশাত্মবোধক গানের মূর্ছনায় আচ্ছন্ন করে রাখেন অভিষেক অনুষ্ঠানের কিছুটা সময়।

প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসকে স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৪৭ মিনিটে আহ্বান জানানো হয় প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে শপথ পাঠ করানোর জন্য। এ সময় পারিবারিক বাইবেল ধরে রাখেন বাইডেন স্ত্রী জিল বাইডেন। ৩৫ শব্দের শপথবাক্য উচ্চারণের পর প্রধান বিচারপতি অভিনন্দন জানান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। জো বাইডেনকে কিছু সময়ের জন্য আবেগাপ্লুত দেখা যায়। ৭৮ বছর বয়সী জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে তিন মিনিটের মধ্যে তাঁর আসনে বসেন কিছুক্ষণের জন্য। এ সময় বাইডেন কাঁদছিলেন।

সিনেটর এমি ক্লোবুচার সকাল ১১টা ৫১ মিনিটে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অভিষেক বক্তব্য রাখতে আহ্বান জানান। প্রধান বিচারপতি, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অন্যদের সম্বোধন করে জো বাইডেন তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র খুবই মূল্যবান। আজ গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে।’

বাইডেন তাঁর পূর্বসূরি উভয় দলের প্রেসিডেন্টদের অভিবাদন জানান। অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারকেও শুভেচ্ছা জানান জো বাইডেন। শারীরিক কারণে কার্টার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি।

জো বাইডেন করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতার কথা উল্লেখ করেন এবং শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীলতা, বর্ণ বিদ্বেষ ও সহিংসতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমার সমস্ত সত্তাজুড়ে একটাই আকুতি—আমরা ঐক্যবদ্ধ হব। আমি সব মার্কিনকে আমার সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই। আমরা আবারও যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের নেতৃত্বের আসনে নিয়ে যেতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস নানা সংঘাতের মধ্যে দিয়ে গেছে। আমরা সব সময় ঐক্যবদ্ধভাবে এসব উতরে গেছি। ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো শান্তি নেই।’

বাইডেন বলেন, ‘চলুন নতুন করে শুরু করি। আমরা একে অন্যকে শোনার, শ্রদ্ধা করা শুরু করি। চলমান ভাবমূর্তির চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনেক ভালো দেশ। মার্কিনরা জাতি হিসেবে শ্রেষ্ঠ—এ কথা আমাদের প্রমাণ করতে হবে।’

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসের অভিষেক মার্কিন সমাজ ও সাংস্কৃতিক মানসে পরিবর্তনের পরিচায়ক উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, ‘আজকের এ সময় সব সংকট মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মুহূর্ত। ঐক্যই এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র। যারা আমাকে ভোট দিয়েছে, আর যারা দেননি—সবার জন্যই সমান লড়াই চালিয়ে যাব।’

মার্কিন অর্থনৈতিক সংকটে দুর্দশাগ্রস্ত জনগণের কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমার কাছে সব বার্তাই আছে। আমরা আমদের হৃদয়কে সম্প্রসারিত করে নগর ও প্রান্তিক যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সব বৈষম্য দূর করতে পারব। আমদের সমনে চলার জন্য একে অন্যকে প্রয়োজন। এক জাতি হিসেবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এক হয়ে কঠিন এ সময়কে অতিক্রম করব।’

বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে বাইডেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আজ ও আগামী দিনের বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।’ এ সময় তিনি পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে একযোগে এগিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষত মহামারি মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। মহামারিতে নিহত লোকজনের স্মরণে সবাইকে নীরব প্রার্থনায় আহ্বান জানান জো বাইডেন। পরে কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মারা যাওয়া চার লাখের বেশি মানুষকে।

ক্যাপিটল হিলে গত ৬ জানুয়ারি হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘এমন ঘটেনি, এমন ঘটনা আর ঘটবে না আগামীতে; ঘটবে না আর কোনো কালেও।’

বক্তব্যের শেষ দিকে বাইডেন বলেন, ‘প্রিয় আমেরিকান বন্ধুরা, আমি আজ যেখানে শেষ করছি, সেখান থেকেই শুরু হচ্ছে। ঈশ্বর ও আপনাদের সবার সামনে পবিত্র শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি—আমি সব সময় আপনাদের সঙ্গেই থাকব।’ তিনি বলেন, ‘আমি সংবিধানকে রক্ষা করব। রক্ষা করব গণতন্ত্রকে। যুক্তরাষ্ট্রকে আমি আগলে রাখব। আর আমি আপনাদের সবাই, সবাইকে বলছি, ক্ষমতার কথা না ভেবে সম্ভাবনার কথা ভেবে আমি আপনাদের সেবা দিয়ে যাব। ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, জনস্বার্থই হবে মূল। আমরা সবাই মিলে কোনো শঙ্কা নয়, এক মার্কিন আশার গল্প রচনা করব; বিভাজন নয়, ঐক্যের গল্প লিখব; অন্ধকার নয়, লিখব আলোর গল্প। এমন এক গল্প, যা ভদ্রতা ও মর্যাদা, ভালোবাসা শুশ্রূষা ও শুভকামনার।’

স্থানীয় সময় ১২টা ১৩ মিনিটে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর বক্তৃতা শেষ করেন। ‘ঈশ্বর যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করুন, ঈশ্বর সবাইকে রক্ষা করুন’, বলে জো বাইডেন তাঁর অভিষেক বক্তৃতা শেষ করেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রথম টু্ইট

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রথম টুইটে বাইডেন লিখেছেন, ‘নষ্ট করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই। বিশেষ করে আমাদের যখন সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ কারণেই আজ (বুধবার) আমি ওভাল অফিসে যাচ্ছি কাজ শুরু করতে, বড় পদক্ষেপ নিয়ে মার্কিন পরিবারগুলোকে আশু স্বস্তি দিতে।’

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019