২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:২১ অপরাহ্ন, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনে ছিল না কোনো আনন্দ। তবুও পালন করেছেন মেয়ের জন্মদিন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মেয়ে দেখল বিছানায়ই শুয়ে থাকা বৃদ্ধ মা-বাবার নিথর দেহ। পাশেই রয়েছে ঘুমের ওষুধের খালি স্ট্রিপ। আর রয়েছে সুইসাইড নোট। লেখা ‘ইচ্ছামৃত্যু’। এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে স্তব্ধ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হরিদেবপুর থানা এলাকার জেমস লং সরণি।
নিজেদের ফ্ল্যাটেই আত্মঘাতী হয়েছেন ৭০ বছরের প্রদ্যুৎ লাহিড়ি ও তার স্ত্রী প্রণতি লাহিড়ি। দুজনের দেহ ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানান, অতিরিক্ত সংখ্যক ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাদের।
ভারতীয় গণমাধ্যমকে, হরিদেবপুরের এই দম্পতির অর্থের অভাব ছিল না। শুধু অভাব ছিল দেখাশোনা ও শুশ্রূষার। সুইসাইড নোটেই তা স্পষ্ট। তাতে বাংলায় লেখা, তাদের একমাত্র মেয়ে থাকেন ৯০ কিলোমিটার দূরে থাকেন। দেখাশোনার অসুবিধা রয়েছে। তার স্থাবর ও অস্থাবর যাবতীয় সম্পত্তি মেয়েই পাবেন। মেয়ের প্রতি তাদের কোনো অভিযোগ নেই। একটি খাতা ও একটি ডায়েরির ছেঁড়া পাতায় এই সুইসাইড নোট লেখা। নিচে বৃদ্ধ দম্পতির সই।
পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, জেমস লং সরণির একটি চারতলা আবাসনের দোতলার তিন কামরার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ছিলেন লাহিড়ি দম্পতি। মেয়ে মধুমিতা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের স্কুলশিক্ষিকা। কর্মসূত্রে অনেক সময়ই জয়নগরে থাকতেন। আবার কখনও মা-বাবার কাছে। শনিবার তার জন্মদিন ছিল। জেমস লং সরণির বাড়িতেই ছিলেন তিনি। জন্মদিন পালনে রাতে কেক কাটা হয়। এরপর ঘুমোতে যান। মেয়ে মধুমিতা নিজের ঘরে ছিলেন। তিনি বুঝতেও পারেননি কখন তার মা-বাবা একসঙ্গে সুইসাইড নোট লেখার পর ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন। সকালে উঠে মা-বাবাকে ডাকতে গিয়ে মেয়ে দেখেন, দরজা খোলা রয়েছে। মা-বাবার নিথর দেহ দেখে চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। পরে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও ঘটনাস্থলে তদন্তে যান। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তারা যে আত্মঘাতী হয়েছেন, সেই ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জেনেছে, বৃদ্ধ দম্পতি বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তাদের মেয়ের সংসারেও অশান্তি চলছিল। তার ওপর মেয়ে বহুদূরে চাকরি করতে যান। করোনা পরিস্থিতিতেও মাঝেমধ্যে যেতে হত স্কুলে। তাই মা-বাবাকে সেভাবে দেখাশোনা করতে পারতেন না মেয়ে মধুমিতাও। অন্য কেউ বিশেষ দেখার ছিল না। এ ছাড়াও মেয়ের ডিভোর্স ঘিরেও চিন্তিত, বিমর্ষ ছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। তাদের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছিল। শুশ্রূষা পাচ্ছেন না বলে আক্ষেপও ছিল তাদের। পুলিশ জানিয়েছে পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে। আত্মঘাতী দম্পতির মেয়ে মধুমিতা ও অন্য আত্মীয়দেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন।