২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৩ অপরাহ্ন, ২২শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি, বৃহস্পতিবার, ৯ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রাক্তন স্বামীকে ভাড়াবাড়ির ঘরে খু’ন করে মৃ’তদেহের সঙ্গে রাত কা’টালেন বছর চল্লিশের এক নারী। ভোরের আলো ফুটতেই চুপচাপ চলে গেলেন নিজের বাড়িতে। এর পর স্নান-খাওয়াদাওয়া সেরে নিজের কর্মক্ষেত্র এয়ারপোর্টে চলে গেলেন। সারা দিন সেখানে কাজও করলেন। ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পেলেন না যে, কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি নিজের স্বামীকে খু’ন করে এসেছেন!
ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে ৫২ বছরের প্রৌঢ় প্রতুল চক্রবর্তীর খু’নের র’হস্যের কিনারা করতে গিয়ে এই তথ্য তাজ্জব করে দিয়েছে পু’লিশ ক’র্তাদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে গলায় ফাঁ’স দেওয়া অবস্থায় দেহ উ’দ্ধার হয় প্রতুলের। মাত্র চার দিন আগেই পানিহাটি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিনগর এলাকায় শ্যামল মজুম’দারের বাড়ির দোতলায় ঘর ভাড়া নেন প্রতুল।
নিজেকে তিনি গুরুগ্রামের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। বাড়ি মালিককে জানিয়েছিলেন, একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থায় উঁচু পদে কাজ করেন তিনি । সোদপুরে ওই সংস্থার একটি শাখা অফিস খোলা হবে। তাই কিছু দিন পানিহাটিতেই থাকবেন।
বাড়ির মালিক শ্যামল মজুম’দার শুক্রবার বলেন, ‘একাই থাকতেন ওই ব্যক্তি। হোম ডেলিভারিতে খাবার আসত।’ বৃহস্পতিবার খাবার দিতে এসেছিল ডেলিভারি বয়। বার বার ডা’কার পর প্রতুলের কোনও উত্তর না পাওয়ায় তিনি শ্যামলবাবুকে ডাকেন। এর পর তাঁরা ভেজানো দরজা ঠেলে ঢুকে দেখেন, প্রতুলের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে বিছানায়। গলায় শাড়ির ফাঁ’স।
ত’দন্তে নেমে প্রথমেই পু’লিশ আ’ট’ক করে শ্যামলকে। জানা যায় অমিতাভ রায়চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে শ্যামলের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতুলের। কিন্তু প্রথমেই হোঁচট খেতে হয় পু’লিশকে। এক ত’দন্তকারী বলেন, ‘নি’হত ব্যক্তির নাম এবং গুরুগ্রাম ছাড়া আমাদের কাছে কোনও তথ্য ছিল না।’ এমন একটা অবস্থায় সামান্য আলোর দেখা পান গোয়েন্দারা।
এক ত’দন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘মৃ’তের ঘরে তল্লা’শি চালাতে গিয়ে আম’রা মহিলাদের একটি রুমাল এবং বাগুইআটি এলাকার একটি হোটেলের বিল খুঁজে পাই।’
সেই ঠিকানায় গিয়ে পু’লিশ জানতে পারেন অদিতি চক্রবর্তীর কথা। জানা যায় প্রতুলের স্ত্রী’ অদিতি। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার পদস্থ কর্মী অদিতিকে এর পর জেরা শুরু করে পু’লিশ। ত’দন্তকারীরা অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন যে, খু’নের পেছনে কোনও মহিলার ভূমিকা আছে। শেষ পর্যন্ত রাতভর জেরায় খু’নের কথা স্বীকার করেন অদিতি। পু’লিশকে তিনি জানান, বছর দশেক আগে তাঁর সঙ্গে প্রতুলের বিয়ে হয়। প্রথম স্বামী মা’রা যাওয়ার পর প্রতুলকে বিয়ে করেন তিনি।
কিন্তু, বিয়ের পর থেকে বেশির ভাগ সময়ে প্রতুল গুরুগ্রামেই থাকতেন নিজের কর্মক্ষেত্রে। মাঝে মাঝে কাশীপুরে এসে অদিতির সঙ্গে থাকতেন। অদিতির প্রথম পক্ষের একটি ছেলে রয়েছে। এই পক্ষের রয়েছে একটি মেয়ে।
কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই প্রতুল তার উপর অ’ত্যাচার করতেন বলে অদিতির অ’ভিযোগ। সম্প্রতি তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে বলেও জানান অদিতি। প্রতুলের অ’ত্যাচারে অ’তিষ্ঠ হয়েই তাকে খু’ন করেছেন বলে ত’দন্তকারীদের জানিয়েছেন তিনি। বাজার থেকে প্রতুল প্রচুর ঋণ করেছিলেন অদিতির নাম করে।
এমনকি তার কাশীপুরের ঠিকানাও প্রতুল ব্যবহার করেন বলে অদিতির অ’ভিযোগ। দিন কয়েক আগে গুরুগ্রাম থেকে এসে বাগুইআটির একটি হোটেলে উঠে অদিতিকে ডেকে পাঠান প্রতুল। সেখানে তাদের মধ্যে টাকাপয়সা সংক্রান্ত কিছু কথা হয়। এর পরেই পানিহাটি এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানেও ডেকে পাঠান অদিতিকে। অদিতি সেখানে যান। তার পরেই রাতেই মত্ত প্রতুলকে খু’ন করেন বলে ত’দন্তকারীদের জানিয়েছেন অদিতি।
শুক্রবার অদিতিকে ব্যারাকপুর আ’দালতে তোলা হয়। বিচারক তাকে পাঁচ দিন পু’লিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি জোন (২) আনন্দ রায় বলেন, “আম’রা ওই মহিলাকে জেরা করছি। কেন তিনি খু’ন করলেন তা ত’দন্ত করা হচ্ছে।