১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ অপরাহ্ন, ৯ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, শুক্রবার, ২৯শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৪৫ বছরে ১৫১ ছাত্র খু’ন, শা’স্তি পায়নি কেউই
১৯৭৪ সালের পর এ পর্যন্ত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খু’ন হয়েছেন ১৫১ জন শিক্ষার্থী। সর্বশেষ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার নি’হতের ঘটনা ঘটে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে শক্ত অবস্থান নেওয়া উচিত।
সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত খু’নের ঘটনা ঘটে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী খু’নের ঘটনা সেটিই ধ’রা পড়ে প্রথম। এ ঘটনার চার বছর পর শফিউল আলম প্রধানসহ অন্যান্য অ’ভিযুক্তরা আ’দালতে সাঁজা’প্রাপ্ত হন। কিন্তু পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তারা মুক্তি পান।
সবচেয়ে বেশি খু’নের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই। সেখানে খু’ন হয়েছেন অন্তত ৭৪ জন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতজন, ইস’লামী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) দুজন করে, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং হ’জরত শাহ’জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন করে শিক্ষার্থী নি’হতের ঘটনা ঘটেছে। এসব খু’নের ঘটনার কোনো অ’প’রাধীরই শা’স্তির মুখোমুখি হয়নি আজও। যে কটি মা’মলার রায় হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ আ’সামি লাপাত্তা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মন্জুরুল ইস’লাম বলেন, শিক্ষাঙ্গনে খু’নখা’রাপি বন্ধ করতে চাইলে সবার আগে আমাদের যেতে হবে মূলে। এখন যা চলে তা পথভ্রষ্ট রাজনীতি। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা মানুষের সেবা ও সমাজকল্যাণের যে আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতেন, তারা সেই আদর্শ হারিয়ে ফেলেছেন। এখন তাদের উদ্দেশ্য অর্থ ও প্রতিপত্তি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ও হয়ে গেছে রাজনীতির জায়গা। শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। উপাচার্যরা হন সরকারি দলের। সরকারি দলের শিক্ষকরাও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভূমিকা পালন করেন। আর প্রক্টর পালন করেন সরকারি পু’লিশ কর্মক’র্তার ভূমিকা। এদের আর রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠনের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য থাকে না। প্রশাসন আর পু’লিশ যদি আইনশৃঙ্খলার যথাযথ ভূমিকা রাখত তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো হ’ত্যাকা’ন্ডের ঘটনা ঘটত না।
সব ঘটনার হয়তো আর ছবি থাকে না। যেমন বুয়েট ক্যাম্পাসেরই সাবেকুন নাহার সনির কথা বেশি মনে থাকার কথা। ২০০২ সালে ছাত্রদলের দুই পক্ষের গোলাগু’লির মাঝে পড়ে নি’হত হন তিনি। এ ঘটনার ১৩ বছরেও পু’লিশ প্রধান অ’ভিযুক্ত মুকি ও টগরকে গ্রে’ফতার করতে পারেনি বলে অ’ভিযোগ করেছেন স্বজনরা। ২০১০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে শিবিরকর্মীদের হাতে খু’ন হন ছাত্রলীগকর্মী ফারুক। লা’শ পড়ে থাকে ম্যানহোলের ভিতরে। একই কায়দায় তিন বছর আগে লতিফ হলের ডাইনিংয়ের পাশের ড্রেনে পাওয়া যায় লিপুর লা’শ। আবার ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সং’ঘর্ষে ৯ বছর আগে নি’হত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক। ২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের নি’র্যাতনে অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ নি’হত হন। ছয় বছর পর অ’ভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রলীগকর্মীকে মৃ’ত্যুদ’ন্ড দিয়েছেন হাই কোর্ট। যদিও সেই রায় এখনো কার্যকর হয়নি বলে জানা গেছে।
এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে লা’শ পড়ে, র’ক্ত ঝরে কিন্তু শা’স্তি পায় না কেউই। মা’মলা হয়, আ’ট’কও হয় কিছুক্ষেত্রে, কিন্তু কিছুদিন পর সব ধামাচাপা পড়ে যায়। মা’মলা ঝুলে বছরের পর বছর, এক সময় সবাই সব কিছু ভুলেই যায়। এ অবস্থার পুনরাবৃত্তি হতে দেখা যায় দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী খু’নের ঘটনায়। বিশ্ববিদ্যালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের ১৩ মা’র্চ। ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের সং’ঘর্ষের সময় সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল করছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মঈন হোসাইন রাজু ও তার বন্ধুরা। সেই মিছিলে গু’লি করে স’ন্ত্রাসীরা। নি’হত হন রাজু। এ মা’মলায় এখনো চার্জশিট জমা দিতে পারেনি পু’লিশ। সেই রাজুর স্ম’রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে একটি ভাস্কর্য করা হয়েছে। কিন্তু এত বছরেও শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস বন্ধ হয়নি।