২১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শহীদুল ইসলাম শহীদ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
গাইবান্ধা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন কয়েক কোটি কোটি টাকার ৫২ একর ৪১ শতক জমি বেহাত হয়ে গেছে। এর মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এসব জমি এলাকার প্রভাবশালী ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভোগদখল করছেন। কিন্তু সরকারি জমি উদ্ধারে পরিষদের কোন পদ¶েপ নেই। তবে জেলা পরিষদ বলছে, বেহাত হওয়া জমি চিহ্নিত করে দখলদার দের তালিকা করা হয়েছে। তাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যে কোন সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জেলা পরিষদ কার্যালয় সুত্র জানায়, এক সময় গাইবান্ধা মহুকুমা রংপুর জেলা বোর্ডের অধীনে ছিলো ১৯৮৪ সালে গাইবান্ধা সতন্ত্র জেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৮৮ সালের ৮ আগষ্ট গাইবান্ধা জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিষদের মোট জায়গা ১ হাজার ৯৪৫ একর ৭২ শতক । এরমধ্যে সড়কে রয়েছে ১ হাজার ৬৫২ একর ৮৬ শতক, ডাঙ্গা ৪৭ একর ৫৯ শতক, শি¶া প্রতিষ্ঠান ২৯ একর ৭ শতক, নদী ১৯৬ একর ৮ শতক, পুকুর ১৯ একর ৪৫ শতক এবং ইন্দারা ৬৬ শতক।
পরিষদের করা দখলদারদের তালিকায় উল্লেখ করা হয়, পরিষদের মোট জায়গার মধ্যে প্রায় ৫২ একর ৪১ শতক বেহাত হয়ে গেছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১০ একর, পলাশবাড়ীতে ২ একর ৬০ শতক, গোবিন্দগঞ্জে ১৩ একর ২৬ শতক, সাঘাটায় ৩ একর ৭৯ শতক, সাদুল্লাপুরে ৯ একর ৩০ শতক, সুন্দরগঞ্জে ১৩ একর ৪১ শতক এবং ফুলছড়িতে ৫০ শতক।
তালিকায় বলা হয়, ১৯৮৮ সালের আগে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ বৃহত্তর রংপুর জেলা পরিষদের আওতায় ছিল। সেখান থেকে পরিষদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হতো। ওই সাল থেকেই পরিষদের জমি বেহাত হওয়া শুরু হয়। তবে ২০০৫ সাল থেকে বেহাত হওয়া বেড়ে যায়। কালক্রমে এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ একর ৪১ শতক জমি বেহাত হয়ে গেছে। এসব জমিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মালিকাধীন বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে জেলা পরিষদের ক্যাম্পাসে ৩৫ শতক জায়গায় গাইবান্ধা এলজিইডির একটি ভবন রয়েছে। এ ছাড়া ৩ একর ৪৪ শতক জমিতে গোবিন্দগঞ্জ থানা (পুলিশ ষ্টেশন), ৪৭ শতক জমিতে পলাশবাড়ী সহকারি কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, ৩৮ শতক জমিতে পলাশবাড়ী মহিলা কলেজ নির্মিত হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি শামসুল আলম শাহ বলেন, আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। এ বিষয়ে কিছু জানিনা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জেলা পরিষদ ও থানা দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই পুলিশ কার্যালয় থেকে জমিটি অধিগ্রহন করে নেওয়ার জন্য ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। এই মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এটির সমাধান করবেন।
দখল প্রসঙ্গে পলাশবাড়ী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এসএম ফয়েজ উদ্দিন বলেন, সিএস খতিয়ান মুলে জমিটি ছিল তৎকালীন রংপুর জেলা বোর্ডের। পরবর্তীতে ভুমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে আসে। এসএ খতিয়ান ছিল বাংলাদেশ সরকারের নামে। ১৯৬২ সালে এক নম্বর খাস খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত হয়। ১৯৮৯ সালে এই জমি উপজেলা ভূমি অফিসকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। এ হিসাবে ভূমি অফিস ব্যবহার করছে। জেলা পরিষদ সিএস খতিয়ান বলে জায়গাটি দাবি করছে। তিনি বলেন, যেহেতু বিআরএস খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রকাশ হয়নি, তাই রংপুর আঞ্চলিক সেটেলমেন্ট অফিসে আপত্তি দেওয়া হয়েছে। যাতে জমিটি ভূমি অফিসের নামে রেকর্ডভক্ত করা হয়।
একই বিষয় পলাশবাড়ী মহিলা কলেজের অধ্য¶ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, জেলা পরিষদের জমিটি কলেজের নামে ইজারা নেওয়া ছিল। পরবর্তীতে নবায়ন করা হয়নি। তবে নবায়ন করে নেওয়ার প্রস্তুতি হাতে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে অনেকে পরিষদের জমি নিজেদের নামে রের্কড করে নিয়েছেন বলেও তালিকায় উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে সাঘাটা উপজেলায় মোট ৩ একর ৭৯ শতক জমির মধ্যে ১ একর ৯৬ শতক বেহাত হয়ে যায়। উপজেলার বোনারপাড়া এলাকায় মনজুর চৌধুরী ও তার লোকজন এ জায়গা ভোগদখল করছেন। মনজুর চৌধুরী বলেন, আমার চাচা তৎকালীন রংপুর জেলা বোর্ডের মেম্বার ছিলেন। ওই সময় তিনি জায়গাটি লিজ নেন। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে আমাদের নামে রেকর্ড হয়। এই রেকর্ডমুলে আমরা ভোগদখল করছি। এ নিয়ে মামলা বিচারাধীন আছে।
গাইবান্ধা নাগরিক পরিষদের আহবায়ক আইনজীবি সিরাজুল ইসলামের অভিযোগ, পরিষদের কোন কোন কর্মকর্তার আমলে তদারকির অভাব ও কোন কোন কর্মকর্তার যোগসাজসে এসব সরকারি জমি বেহাত হয়েছে। তাদের সনাক্ত করতে হবে। জমি উদ্ধারেও তাদের জোরালো ভুমিকা নিতে হবে।
এসব বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, জমি উদ্ধারে পদ¶েপ নেওয়া হয়েছে। দখলদারদেরকে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হচ্ছে। উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কতিপয় দখলদার তিন একর ৭০ শতক জায়গা নিজের দাবি করে গাইবান্ধা জজ আদালতে চারটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। এ ছাড়া রেকর্ড সংশোধনের জন্য রংপুর সেটেলমেন্ট অফিস ও জজ আদালতে শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। যা বর্তমানে বিচারাধীন আছে।