২১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৯ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের ক্রাইম ডেক্স
বরিশাল জেলার মুলাদী থানার বাটামারা ইউনিয়নে হাজি গ্রুপ ও আকন গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্ব নিয়ে ২০০১ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত হত্যা মামলা-২৮টি, আসামী ৩২৭ জন, ডাকাতি মামলা-৭টি, আসামী ৩৮ জন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা-১২০টি, আসামী ৩২৩ জন, অপহরন মামলা-২২টি, আসামী ৭১ জন, মারামারিসহ অন্যান্য ঘটনায় মামলা-৭৫৭টি, আসামী ৩,৬৭৭ জন। উল্লিখিত সময়ে মোট মামলার সংখ্যা-৯৩৪টি এবং আসামীর সংখ্যা ৪,৪৩৯ জন। এছাড়াও উল্লিখিত সময়ের পূর্বেও দু‘পক্ষের বিরোধের কারণে আরো অনেক হত্যাকন্ডসহ অন্যান্য ঘটনা সংঘটিত হওয়ার প্রেক্ষিতে অসংখ্য মামলা রুজু হয়েছে। অসংখ্য মামলায় এলাকার অনেক লোক আসামী হওয়ার কারনে বাটামারা ইউনিয়নটি অপরাধীদের অভয়ারণ্য ও অশান্ত এলাকা হিসেবে পরিচিতি পায়। ইতোমধ্যেই উল্লিখিত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও দু’পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ৬ (ছয়) বার জেলা পুলিশের উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিং সভা করাসহ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করে জোড়ালো পুলিশি অভিযান অব্যাহত রাখা হয়। যার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের হাজী গ্রুপ ও আকন গ্রুপের বিরোধ নিষ্পত্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জেলা পুলিশের পাশাপাশি এলাকাবাসির উদ্যোগে উভয় গ্রুপ সহাবস্থান নিশ্চিত ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একমত পোষন করেন।
যার প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের লোকজনের বিরোধপূর্ণ এলাকায় সহাবস্থান নিশ্চিত ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় অদ্য ২২-০৭-২০২৩ খ্রি. তারিখ ১৫.০০ ঘটিকায় বরিশাল জেলার মুলাদী থানাধীন ১নং বাটামারা ইউনিয়নের জাগরণী স্কুল মাঠে বরিশাল জেলা পুলিশের উদ্যোগে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্প্রীতি সমাবেশ জনাব মাহাবুবুর রহমান, অফিসার ইনচার্জ, মুলাদী থানা, বরিশাল এর সভাপতিত্বে উক্ত সম্প্রীতি সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। উক্ত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে জনাব ওয়াহিদুল ইসলাম, বিপিএম, পুলিশ সুপার, বরিশাল; প্রধান আলোচক হিসেবে জনাব মোঃ মাসুদ আলম, বিপিএম (বার), পিপিএম, পুলিশ সুপার, মাদারীপুর; জনাব মোঃ মাহবুবুল আলম, পুলিশ সুপার, শরীয়তপুর। তাছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাটামারা ইউনিয়নের কৃতি সন্তান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান; বাটামারা ইউনিয়নের কৃতি সন্তান জনাব বেলাল হোসেন তারা মিয়া, বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ সাতক্ষীরা; টুমচর সাকিনের কৃতি সন্তান এ.কে.এম ইমরানুর রহমান, বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ঝালকাঠি; টুমচর সাকিনের কৃতি সন্তান জনাব মহাসিন উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোপালগঞ্জ উপজেলা সদর; জনাব মোঃ তারিকুল হাসান মিঠু, উপজেলা চেয়ারম্যান মুলাদী; জনাব মোহাম্মদ কামরুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), মাদারীপুর; জনাব মোঃ শাহ্জাহান হোসেন, পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), বরিশাল; জনাব মোহাম্মদ বদিউজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শরীয়তপুর; জনাব বকুল চন্দ্র কবিরাজ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মুলাদী উপজেলা বরিশাল; জনাব মতিউর রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, মুলাদী সার্কেল বরিশাল; জনাব মোঃ আসলাম সিকদার, অফিসার ইনচার্জ, গোসাইরহাট থানা, শরীয়তপুর; জনাব মোঃ আফজাল হোসেন, অফিসার ইনচার্জ, গৌরনদী থানা, বরিশাল; অফিসার ইনচার্জ কালকিনি থানা, মাদারীপুর; মুলাদী প্রেসক্লাবের সভাপতি, জনাব সুমন রাড়ী; বাটামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সালাউদ্দিন অশ্রু; সফিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, হিমু মুন্সী; টুমচর সাকিনের এ্যাডভোকেট মোঃ দুদুমিয়া ও অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম পলাশ; বাটামারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, কমর উদ্দিন; মুলাদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, কাজী মাইনুল আহসান সবুজ; বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব হারুন অর রশিদ, সভাপতি মুলাদী উপজেলা জাতীয় পার্টিসহ আরো গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এই সম্প্রীতি সামাবেশে বিরোধীয় দু’পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তিনামা সম্পাদিত হয়। উক্ত সম্প্রীতি সমাবেশে সবাই একমত পোষণ করেন যে, এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এলাকার শান্তি ফিরে আনার লক্ষ্যে যে চুক্তিনামা হয়েছে উক্ত চুক্তিনামা অনুযায়ী সকল পক্ষ একত্রিত হয়ে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে সকলে মিলেমিশে উন্নয়মূলক কাজ করবে। অতীতের সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে নতুনভাবে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করর জন্য সবাই একমত পোষন করেন। প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথিগণ এলাকার শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিভিন্ন দিক-নির্দেশানামূলক বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিরোধীয় দু’গ্রুপের লোকজনসহ অনুমান ১০০০/১২০০ জন উপস্থিত ছিলেন। গত ১৯-০৭-২০২৩ খ্রি. তারিখ বাটামারা এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ হতে বরিশাল জেলা পুলিশকে ২৫ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ কর্তৃক বরিশাল জেলা পুলিশকে রেজিস্ট্রি করে দেয়া জমিতে বাটামারা পুলিশ ফাঁড়ি, মুলাদী, বরিশাল স্থাপনের লক্ষ্যে পুলিশ সুপার, বরিশাল ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং একটি ফলজ গাছের চারা রোপন করেন। পরবর্তীতে এলাকায় শান্তির লক্ষ্যে মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। পুলিশ সুপার, বরিশাল এলাকায় ভবিষ্যতে যাতে পুনরায় শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্ন না ঘটে সে লক্ষ্যে বিরোধীয় দু’ই পক্ষকে কঠোর নিদের্শনা দেয়ার পাশাপাশি উপস্থিত সুধীজনদের প্রতি সহযোগিতা প্রদানের জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।
ধন্যবাদান্তে
ওয়াহিদুল ইসলাম, বিপিএম
পুলিশ সুপার, বরিশাল।