২১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
অনলাইন ডেস্ক
প্রথমবারের মতো মানবদেহের রক্তে প্লাস্টিকের কণার দূষণ পাওয়া গেছে। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রায় আশি শতাংশের রক্তে প্লাস্টিকের খুদে কণার উপস্থিতি রয়েছে।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে। এসব ক্ষুদে কণা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি কোনো অঙ্গে তা জমা হয়েও থাকতে পারে। যদিও স্বাস্থ্যের তার প্রভাবের বিষয়টি এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি।
পরীক্ষাগারে দেখা গেছে, প্লাস্টিকের কণার কারণে মানব শরীরের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গবেষকেরা। বায়ু দূষণের কারণে মানুষের শরীরে কোটি কোটি বস্তুকণা প্রবেশ করছে। যা বহু মানুষের মৃত্যুর কারণে পরিণত হয়েছে।
পরিবেশে বিপুল প্ল্যাস্টিকের বর্জ্য জমা হচ্ছে। এছাড়া প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা পৃথিবী নামের এই গ্রহকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে যাচ্ছে। মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া থেকে সাগরের অতল গভীরও এই দূষণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, খাদ্য, পানি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে দূষিত খুদে কণা মানবদেহে ঢুকছে। এবার অজ্ঞাতনামা ২২ রক্তদাতার নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের সবাই সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান। কিন্তু ২২ জনের মধ্যে ১৭ জনের নমুনায় প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে।
তাদের অর্ধেকের নমুনায় পিইটি প্লাস্টিক মিলেছে। সাধারণত খাবার পানির বোতলে এই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। এক-চতুর্থাংশের রক্তের নমুনায় ছিল পলিস্টারাইন। এই প্লাস্টিক দিয়ে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের মোড়ক তৈরি করা হয়।
নেদারল্যান্ডসের ভিরিজি ইউনিভার্সিটেইটের ইকোটক্সিকোলজিস্ট অধ্যাপক ডিক ভেথাক বলেন, আমাদের রক্তে পলিমার কণা থাকার প্রথম আভাস দিয়েছে এই গবেষণা। এটি একটি যুগান্তকারী গবেষণা ফল। এখন গবেষণার পরিধি বাড়াতে হবে। রক্তের আরও বেশি নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। মানবদেহে কী পরিমাণ পলিমার কণা রয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, রক্তে প্লাস্টিক কণা পাওয়ার খবর অবশ্যই উদ্বেগজনক। কারণ এসব রক্তের মধ্যে আছে, তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে।
নতুন এই গবেষণাটি ইনভায়রন্টমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল নামের সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষায় ০ দশমিক ০০০৭ মিলিমিটারের মতো ছোট কণাও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আর প্লাস্টিক কণা শনাক্তে বিদ্যমান আধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। দূষণ এড়াতে স্টিল সিরিঞ্জের সুঁচ ও গ্লাস টিউব ব্যবহার করা হয়েছে।
দূষণ এড়াতে ব্ল্যাংক স্যাম্পল ব্যবহার করে প্লাস্টিক কণার পটভূমির স্তর জানতে পরীক্ষা করা হয়েছে। ডিক ভেথাক বলেন, এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, মানবদেহে কী ঘটছে? এসব দূষিত কণা কি শরীরে থেকে যাচ্ছে? ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার বা মস্তিষ্ক সুরক্ষা পর্দা অতিক্রম করে এগুলো কি কোনো কোনো অঙ্গে জমা হচ্ছে? এগুলো কী বড় কোনো রোগের কারণ হতে পারে?