২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শনিবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের ক্রাইম ডেক্স: এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন, ভর্তি ফি, সেশন ফি এবং বোর্ড পরীক্ষার ফরম পূরণ ফিসহ যাবতীয় আয় ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নীতিমালা তৈরি করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে এখন থেকে আর নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সব ধরনের ফি ও বেতনের অর্থ আদায় করতে হবে। কোনোভাবে আর শিক্ষার্থীদের কাছে নগদ অর্থ আদায় করা যাবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার এ খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক গোলাম ফারুকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের মাসিক টিউশন ফি ও বেতন নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। নগদ অর্থ আদায় করতে পারবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এ জন্য সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকে হিসাব চালু করতে হবে। এমপিওভুক্ত স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি এবং কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির নেতৃত্বে তিনজন সিনিয়র শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি অর্থ কমিটি গঠন করতে হবে। কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষকের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট বেতন ও ফি আদায় কমিটি সব ধরসের ফি ও বেতন আদায় সম্পর্কিত মাসিক প্রতিবেদন কমিটি বরাবর দাখিল করবে।
বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষক প্রতি মাসের শুরুতে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য রিকুইজিশন (আবেদন) দিবেন, রিকুইজিশনের সাথে পূর্ববর্তী মাসের বিল ভাউচারসহ হিসাব বিবরণী দাখিল করতে হবে। অর্থ কমিটি যাচাই-বাছাই করে সে অর্থ ছাড় করবে। গভর্নিং বডির কাছে উপস্থাপনের জন্য সব বিল ভাউচার সংরক্ষণ করতে হবে।
এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের তিনজন শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি গঠন করতে হবে। অডিট কমিটি পরের বছরের ৩১ জানুয়ারি মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি এবং মাউশিকে জমা দিবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্থ কমিটির সভাপতি ও অপর একজন সদস্যের যৌথ স্বাক্ষরে কলেজের হিসাব পরিচালিত হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সরকারি শহীদ আকবর আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাসের সমন্বয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এ সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেন। বৃহস্পতিবার সেটি শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের নীতিমালা চূড়ান্ত করতে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে খসড়া নীতিমালা তুলে ধরা হয়। শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বাস্তবভিত্তিক বিষয়গুলো চূড়ান্ত করে কিছু কিছু বিষয় বাতিল করা হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এ নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে সকলকে দ্রুত কাজ শেষ করার সুপারিশ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি। সেখানে এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্বচ্ছতা রয়েছে। ইচ্ছেমতো শিক্ষার্থীদের কাছে নানা ধরনের ফি আদায় করা হয়ে থাকে। এ মাধ্যমে এটি বন্ধ হবে।
তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়নে দুটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার মধ্যে একটি বাস্তবায়নে নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার ও কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের প্রভাবে যেন তা চাপা না পড়ে সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সজাগ থাকতে হবে। তবে সরকারের এ ভালো উদ্যোগ সুফল বয়ে আনবে। শিক্ষার্থীরাও এর সুফল পাবে। নতুবা শিক্ষার্থীরা নতুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও মন্তব্য করে এই শিক্ষাবিদ।