২১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৪ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জলিলুর রহমান স্টাফ রিপোর্টার
মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে, বরগুনার তালতলী উপজেলার পিছিয়ে পরা এ অঞ্চলের আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের।
বিলুপ্ত প্রায় মাতৃভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।
২১শে ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫ টায় তালতলী ছাতনপাড়া বৌদ্ধ বিহার মাঠে ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাখাইন মাতৃভাষা কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়। এই প্রথম ভাষা দিবসে নিজেদের ভাষায় তারা তাদের সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান করে আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায় ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজবি-উল-কবির, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ সেলিম মিঞা, তালতলী সরকারি কলেজের অধ্যাপক রাবিন্দ্র নাথ,তালতলী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল চন্দ্র, ছাতন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক,মোঃ আবু সিদ্দিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মু. তৌফিকুজ্জামান তনু, সহ সভাপতি কামরুল আহসান, দুলি বেগম ও তৈফিক এলিচ প্রমুখ।
এ সময়ে বক্তারা বলেন।
অনেক ভাষার অনেক শব্দ সংরক্ষনের অভাবে হারিয়ে গেছে। যা কখনো হয়ত উদ্ধার করা যাবেনা। ভাষার জন্য বুকের রক্ত দেয়া কোন রাষ্ট্রর জন্য সুখককর বিষয় নয় এটা অনেকটা কষ্টের। তবে দেরীতে হলেও এ জনগোষ্ঠীর ইতিহাস ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
জন্মের পর বাবা-মা ও স্বজনদের মুখে শুনে শুনে রাখাইন ভাষায় কথা বলতে শিখতো শিশুরা । বাংলায় লেখাপড়া শিখলেও নিজস্ব সংস্কৃতি শেখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ না থাকায় মাতৃভাষায় কথা বলতে পারলেও লিখতে
পারতোনা। এখন এই স্কুলের মাধ্যমেই তারা তাদের মাতৃভাষায় লিখতে ও পড়তে পারবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে দেশে বসবাসকারী সকল জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রয়োজন। রাখাইনদের নিজস্ব ভাষা শিক্ষার উদ্যোগটি এখন সময়োপযোগীে।
উল্লেখ্য। মিয়ানমারের উপভাষা রাখাইন ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত এ জাতিগোষ্ঠীর জন্য শুরু থেকেই মাতৃভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় বিকল্প হিসেবে বাংলা ভাষাতেই লেখাপড়া করতে হতো। ফলে মাতৃভাষায় কথা বলতে পারলেও তারা নিজেদের ভাষা পড়তে এবং লিখতে পাড়েনা ।
ক্ষয়িষ্ণু এ সম্প্রদায়ের ৩০৯ জন শিশু কিশোররা
বর্তমানে বিদ্যালয়গামী। মায়ের ভাষা যেভাবে মুখে বলছে সেটা পড়তে ও লিখতে পারতোনা । ফলে শিশু শিক্ষার্থীসহ সকলের মাঝে ভাষাগত চর্চা টিকিয়ে রাখতে অস্তিত্ব সংকটে পরেছিল
রাখাইনরা। যথাযথ চর্চা, মাতৃভাষায় শিক্ষা সংকট এবং সংরক্ষনের অভাবে সংকটের মুখে পরেছিল তালতলীর ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা।
ক্ষয়িষ্ণু এ জাতিসত্রার নতুন প্রজন্ম মাতৃভাষা মুখে ব্যবহার করলেও লিখতে বা পড়তে পরতেনা। যথাযথ পৃষ্টপোষকতা না পেয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম’র জন্য মাতৃভাষা সংরক্ষন ও প্রচলন নিয়ে শংকিত ছিল এ জাতিগোষ্ঠী।
ভাগ্য বিতারিত হয়ে ১৭৮২ সালে মায়ানমারের অরাকান প্রদেশ থেকে বরগুনার জনমানবহীন, জংগলাকীর্ন তালতলীতে এসে বসতি স্থাপন করে নৃ-জনগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়। পরে বিভিন্ন দলে বিভিক্ত হয়ে বরগুনার তালতলী পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়ার উপকূলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়ে তোলে বসতি। রাজকীয় জীবন ধারায় অভ্যাস্ত এ জাতিগোষ্ঠী হিংস্র জীবজন্তু পরিপূর্ণ জঙ্গল পরিস্কার করে গড়ে তোলে আবাদি জমি।
ধীরে ধীরে এদের পাশেই গড়ে ওঠে বাঙালি বসতি। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারায়, ভাষাগত দুরত্বের কারনে দিন দিন পিছিয়ে পড়ে রাষ্ট্র সমাজ ব্যবস্থা থেকে। হয়ে পড়ে অনাগ্রসর জাতি। ভূমি বিরোধসহ নানা ঝামেলায় জড়িয়ে এ জাতিগোষ্ঠীর অনেকে।
তালতলীতে প্রায় ১২টি পাড়ার ৬০০টির মত পরিবার বসবাস করে। ####
তারিখঃ ২২-০২-২০২০