২১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ উপজেলার ভজনপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মসলিম উদ্দিনকে সাজানো নাটকে গ্রামের বাড়ি থেকে আটকের অভিযান পরিচালনা করে বিজিবি। এলাকাবাসীর প্রতিবাদে তোপের মুখে পড়ে বিজিবি সদস্যরা। এসময় বিজিবি সদস্যদের আটকে রাখে এলাবাসী সহ উত্তেজিত জনতা।
শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। মূহুর্তেই এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়লে চেয়ারম্যানের সমর্থকরা ঢাকা-বাংলাবান্ধা মহাসড় অবরোধ করে যান চলাচলও বন্ধ করে দেয়।
কয়েক ঘন্টা বিজিবিদের আটকে রাখার পর ১৮ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় বিকেলে তাদের ছেড়ে দেয় এলাকাবাসীর।
বিজিবি জানান অস্ত্র ও ফেন্সিডিল আছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চেয়ারম্যানের বাড়িতে অভিযানে পরিচালনা করে বিজিবি। অভিযানে পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এসময় এলাকাবাসীরা রাস্তায় ব্যারিকেট দিয়ে বিজিবি সদস্যদের আটকে দেয়।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে বেশ কয়েকটি গাড়ি নিয়ে বিজিবির কিছু সদস্য সীমান্তবর্তি ভাঙ্গীপাড়া গ্রামে চেয়ারম্যানের বাড়িতে প্রবেশ করে পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে। পরে ১০৭ বোতল ফেন্সিডিল ও বাড়ির সদস্যদের মোবাইল ফোন জব্দ করে
বিজিবি। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে চেয়ারম্যানের হাজার হাজার সমর্থক এসে বিজিবির সদস্যদের আটকে দেন। স্থানীয়দের অভিযোগ চেয়ারম্যান মসলিম ফেন্সিডিল তো দুরের কথা পান বিড়ি সিগারেটও সে খান না। ভারতীয় তিনটি চোরাই গরু আটকের পর চেয়ারম্যানের সাথে বিজিবির কয়েক দিন থেকে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। এই ঘটনার জের ধরে বিজিবি উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে তাকে গ্রেপ্তার করতে আসে। গ্রামবাসীরা এই সাজানো
ঘটনাটি বুঝতে পারলে বিজিবির গাড়ি আটকে দেয়। পুলিশের গাড়ি থেকে চেয়ারম্যানকে নামিয়ে নেয়ার পর বিজিবি সদস্যদেরকে আটক করে রাখে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিজিবি সদস্যদেরকে আটকে রাখা হয়।
পরে ১৮ ব্যাটলিয়ন লে. কর্ণেল জিয়াউল হক ঘটানাস্থলে আসেন। তিনি স্থানীয়দের সাথে কথা
বলেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বি, তেঁতুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রবীর কুমার রায়, উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক শাহাদৎ হোসেন রঞ্জু, সদস্য সচিব রেজাউল করিম শাহীন সহ অন্যান্য ইউপি চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিজিবি অধিনায়ক এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ঘটনা একটা ঘটতেই পারে। আমরা
তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরে আটকে থাকা বিজিবি সদস্যদেরকে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এব্যাপারে চেয়ারম্যান মসলিম উদ্দিন জানান, গত তিন দিন আগে কয়েকজন ইউপি সদস্য তিনটি ভারতীয় গরু আটক করে। ভূতিপুকুর
বিওপি সদস্যরা গরু তিনটিকে চাইলে আমরা না দিয়ে গরুগুলো খোয়ারে দেই। যেহেতু জন প্রতিনিধিরা আটক করেছে তাই গরুগুলোর মালিক বের হয় কিনা জানার জন্য কয়েকদিন খোয়ারে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ নিয়ে ১৮ বিজিবির সহকারি পরিচালক জামাল উদ্দিনের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। তাদের সঙ্গে আমার দুরত্ব তৈরী হয়।
এরই জের ধরে আজকে হঠাৎ কিছু বিজিবি সদস্য আমার বাড়ি ঘেরাও করে এবং সবাইকে বের হয়ে বাড়ি খালি করতে বলে। প্রায় ১৫ মিনিট পর আমাকে ডেকে আমার শুয়ার ঘরে প্রবেশ করে বলে আপনার ঘরে ফেন্সিডিল আছে। পরে একটি বস্তা দেখিয়ে বলে যে এই
বস্তায় ফেন্সিডিল আছে। পরে তারা আমাকে নিয়ে বিজিবির গাড়িতে উঠতে বলে। আমি তখন পুলিশের গাড়িতে উঠতে চাই। এসময় শত শত গ্রামবাসী এসে আমাকে পুলিশের
গাড়ি থেকে নামিয়ে নেয়।
এব্যাপারে ১৮ বিজিবির সহকারি পরিচালক
জামালউদ্দিন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৮ বিজিবির সহকারী অধিনায়ক মেজর
রিয়াদ মোর্শেদ সহ বিজিবির সদস্যরা চেয়ারমাানের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।
আমার সঙ্গে চেয়ারম্যানের সম্পর্কের টানাপোরেন নাই। গরু নিয়েও বিজিবির সাথে কোন ঘটনা নেই। তবে চেয়ারম্যানের বাড়িতে ১০৭ বোতল ফেন্সিডিল পাওয়া গেছে।
বিজিবি অধিনায়ক লে কর্ণেল জিয়াউল হক বলেন অস্ত্র ও ফেন্সিডিল আছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনার জন্য আমাদের সদস্যরা চেয়ারম্যানের বাড়িতে যায়।
চেয়ারম্যানকে আটক করলে স্থানীয় গ্রামবাসী রাস্তা ব্যারিকেট দেয়। যেহেতু পাবলিক
সেন্টিমেন্ট তার পক্ষে তাই আমরা মামলা করছিনা। জব্দকৃত ফেন্সিডিলগুলো থানায়
জমা দেয়া হবে।