২১ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক ইমরান জামান কাজল।
অদ্য ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ, ০৩ মাঘ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, বুধবার দুপুর ০১.০৫ ঘটিকায় কেএমপি’র সদর দপ্তরস্থ পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা মহোদয় কর্তৃক খানজাহান আলী থানা পুলিশ কর্তৃক ক্লু-লেস হত্যা মমলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকান্ডে জড়িত ০৮ (আট) জন আসামী গ্রেফতার এবং ভিকটিমের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ইজিবাইকের অংশ বিশেষ উদ্ধার সংক্রান্তে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং করেন।
কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মহোদয় বলেন, “খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর।
আমরা বিগত কয়েক মাস থেকেই অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, জঙ্গী, মাদক ব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামী, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ও ভূমিদস্যুসহ সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তিশালী যারা নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে তাদের গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি।
গত আগস্ট ২০২৩ খ্রি: থেকে ইতোমধ্যেই আমরা ১৮ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৩২ রাউন্ড গুলি, ২৫ টি চোরাই মোটরসাইকেল, ককটেল, গান পাউডার, স্বল্প সময়ে ক্লু-লেস হত্যা মমলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ আসামী গ্রেফতার, চোরাই স্বর্ণালঙ্কার ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি বক্তব্যে বলেন, “গত ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ অর্থাৎ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একদিন আগে রাত্র অনুমান ০৯.০০ঘটিকার সময় খানজাহান আলী থানাধীন আটরা পশ্চিম পাড়া নতুন রেল লাইনের পূর্ব পাশে জনৈক সাইফুল ইসলামের সরিষা ক্ষেত হইতে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় খানজাহান আলী থানা পুলিশ অজ্ঞাত একটি মৃত দেহ উদ্ধার করে।
অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে খানজাহান আলী থানা পুলিশ লাশটির সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি লোকমুখে শুনে রুপসা মাস্টার পাড়া এলাকা থেকে রাণী বেগম নামক একজন মহিলা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসে অজ্ঞাতনামা লাশটি তার স্বামী মোঃ আবুল কালাম আজাদ (৫৬) বলে সনাক্ত করে।
পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিচয় মোঃ আবুল কালাম আজাদ(৫৬), পিতা-মৃত ইসহাক মোল্লা, মাতা-কুলসুম বেগম, সাং-দত্তের পশুরি বুনিয়া, পোস্ট- বাটিখালঘাটা, থানা-কাঠালিয়া, জেলা-ঝালকাঠি, এ/পি সাং-রুপসা মাষ্টারপাড়া, খেয়াউদ্দিন ডাক্তারের বাড়ীর ভাড়াটিয়া, থানা-খুলনা সদর, খুলনা মহানগরী বলে জানা যায়।
এই ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী রাণী বেগম খানজাহান আলী থানায় এসে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে এজাহার দায়ের করলে বাদীর এজাহারের ভিত্তিতে অফিসার ইনচার্জ খানজাহান আলী থানার মামলা নং-০২, তারিখ-০৮/০১/২০২৪, ধারা-৩০২/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড রুজু করে।
পরবর্তীতে খানজাহান আলী থানার একটি চৌকস তদন্ত দলের নেতৃত্বে এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ও পারিপার্শ্বিক পর্যালোচনায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামীদের গ্রফতার করা হয়।
উল্লেখ্য যে, এই মামলার মূল আসামী ভিকটিমের ইজিবাইকটি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ ভিকটিম মোঃ আবুল কালাম আজাদকে ফলো করে আসছিলো এবং অন্যান্য আসামীদের যোগসাজসে তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন অর্থাৎ ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ ভিকটিমকে রুপসা ঘাট থেকে রিজার্ভ ভাড়া করে আটরা-আফিল গেট এলাকায় নিয়ে যায়।
সেখানে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক অবস্থানরত অপরাপর আসামীরা ভিকটিমের ইজিবাইকে উঠে প্রধান আসামী মনির হাওলাদার তার স্ত্রীকে আনার কথা বলে মশিয়ালি নামক স্থানে নিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে আসামীরা বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে ইজিবাইক চালক ভিকটিম মোঃ আবুল কালাম আজাদকে থামায় এবং হঠাৎ তাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ী থেকে ফেলে দিয়ে অন্ধকারের ভিতর প্রধান আসামী মনির হাওলাদারসহ আসামী মোঃ রনি শেখ, জাহাঙ্গীর হোসেন, ফোরকান হোসেন @ তোহান, রিয়াদ লস্কর @ রিয়াদ ও সৈয়দ মোহন হোসেন @ মোহন মিলে এই হত্যাযজ্ঞে শামিল হয়।
তোহান ও রিয়াদ মাফলার দিয়ে ভিকটিমের নাক-মুখে প্যাচ দেয় এবং রনি শেখ ও জাহাঙ্গীর হোসেন ভিকটিমের হাত ধরে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করে।
তৎপরে মনির হাওলাদার ভিকটিমের শ্বাসরোধ করে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করে হাত-পা বেঁধে সরিষা ক্ষেতে ফেলে দিয়ে ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে এই ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি অন্য কোথাও বিক্রি করলেও ধরা পড়বে বিধায় ইজিবাইকটির যন্ত্রাংশ পার্ট পার্ট করে খুলে মালিক সেজে আসামী সৈয়দ মোহন হোসেন @ মোহন গ্রেফতারকৃত অন্য আসামী মোঃ জাহিদুল ইসলাম @ জাহিদ এর নিকট বিক্রি করে।
পরবর্তীতে সে মোঃ আলামিন কাজী @ আলামিন এর নিকট ইজিবাইকটির যন্ত্রাংশ বিক্রয় করে। অত্র মামলাটির তদন্তকালে জানা যায় যে, মৃত আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘদিন যাবৎ অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো।
পরবর্তীতে সে ইজিবাইকটি ভাড়া নিয়ে চালিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালাতো। সে অত্যন্ত দরিদ্র হওয়ায় মানবিক দায়িত্ব বোধ থেকে আমারা খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ উক্ত মৃত ব্যক্তির পরিবারের পাশে দাঁড়াবো।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে সাধ্য অনুযায়ী মানবিক ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে।
সেই প্রেক্ষিতে কেএমপি’র পক্ষ থেকে আমরা নিহত ভিকটিমের স্ত্রী রাণী বেগমকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য একটি সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ প্রদান করছি।”
অত্র মামলার বাদী ও ভিকটিমের স্ত্রী রাণী বেগম মহানগরী পুলিশের নিকট হতে ০১ টি সেলাই মেশিন ও নগদ অর্থ পাওয়ায় এবং নতুনভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এছাড়াও, ভিকটিমের স্ত্রী এই হত্যা মামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল আসামি গ্রেফতার হওয়ায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
এ সময় কেএমপি’র ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস অ্যান্ড সাপ্লাই) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত জনাব এম এম শাকিলুজ্জামান; অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) জনাব সোনালী সেন, পিপিএম-সেবা; সহকারী পুলিশ কমিশনার (স্টাফ অফিসার টু পিসি) জনাব ইমদাদুল হক; সহকারী পুলিশ কমিশনার (দৌলতপুর জোন) জনাব মোঃ আবুল বাশার; খানজাহান আলী থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মমতাজুল হক এবং পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত জনাব পলাশ কুমার দাস-সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।