২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:০৫ অপরাহ্ন, ২৮শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, বৃহস্পতিবার, ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সাইফুল ইসলাম, বাবুগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ
প্রেমের ব্যর্থতা—তারপর মানসিক ভারসাম্য হারানো। টানা ১২ বছর ধরে পায়ে শিকল বেঁধে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বরিশালের বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা ইউনিয়নের যুবক সাইদুল ইসলাম মামুন। অসহায় পরিবার, দারিদ্র্য—কিছুই তার ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারেনি। অবশেষে পাশে দাঁড়ালেন বাবুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আহমেদ।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে মামুনের মায়ের হাতে চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থ ও আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেন ইউএনও। এ সময় তিনি মামুনের চিকিৎসার পূর্ণ দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন। উপস্থিত ছিলেন বাবুগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম।
ইউএনও ফারুক আহমেদ বলেন, মামুনকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে যা যা প্রয়োজন, উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করবে। উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, একসময় বাবুগঞ্জ সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন মামুন। সহপাঠী সখি আক্তার নামে এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পারিবারিক বাধায় সম্পর্ক ভেঙে গেলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মামুন। ধীরে ধীরে হারাতে থাকেন মানসিক ভারসাম্য।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় পরিবারের সদস্যরা তাকে ঘরের ভেতর শিকলবন্দী করে রাখেন। বাবা দিনমজুর মোসলেম বেপারী, মা সোনাবান বেগম—দু’জনই আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেননি।
জানা গেছে, মানসিক রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা-সুবিধার অভাব, সচেতনতার ঘাটতি এবং দারিদ্র্য—সব মিলেই দীর্ঘ ১২ বছর ধরে শিকলবন্দী থাকতে হয়েছে মামুনকে।
চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণে ইউএনওর উদ্যোগে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তার পরিবার ও এলাকাবাসী।
মামুনের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ১২ বছর পর মনে হচ্ছে আল্লাহ আমার ছেলেরে বাঁচাইবার রাস্তা পাইয়া দিলেন। ইউএনও স্যারের জন্য দোয়া করি।
এলাকাবাসী জানায়, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সামাজিক লজ্জা ও উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবের কারণে বহু পরিবার এমন পরিস্থিতিতে পড়েন। প্রশাসনের এমন মানবিক উদ্যোগ নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে তারা মন্তব্য করেন।
মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ—দুটোর মিলিত নজির স্থাপন করলেন ইউএনও ফারুক আহমেদ। স্থানীয়রা বলছেন, এমন প্রশাসক থাকলে শিকল নয়, চিকিৎসাই হবে অসহায় দুঃস্থ রোগীর জন্য সমাধান।