২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন, ২৮শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, বৃহস্পতিবার, ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মাহমুদ হাসান রনি
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ
চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদা বাজারে মদের আসরে মদপান করে দু’দিনের ব্যবধানে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন আরও ৩ জন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জামাল আল নাসের আলী ও এলাকাবাসি সাংবাদিকদের জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গর শঙ্করচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ডিঙ্গেদহ বাজার মোড়ে প্রতিদিনের ন্যায় ৮/১০ জন দিনমজুর বসে অ্যালকোহল পান করেন। রাতেই একে একে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে।এসময় গোপনে প্রত্যেক পরিবার বিভিন্ন স্থানে তাদের চিকিৎসা করায়। রবিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হলে তাদের আত্নীয় স্বজনদের কান্নাকাটির মাঝে প্রকৃত ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
নিহতরা হলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নফরকান্তি গ্রামের পূর্বপাড়ার ভ্যানচালক খেদের আলী (৪০), খেজুরা হাসপাতাল পাড়ার মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেলিম (৪০), পিরোজখালি স্কুলপাড়ার ভ্যানচালক মোহাম্মদ লালটু ওরফে রিপু (৩০), শংকরচন্দ্র মাঝেরপাড়ার শ্রমিক মোহাম্মদ শহীদ (৪৫), ডিঙ্গেদহ টাওয়ার পাড়ার মিল শ্রমিক মোহাম্মদ সামির (৫৫) এবং ডিঙ্গেদহ এশিয়া বিস্কুট ফ্যাক্টরি পাড়ার শ্রমিক সরদার মোহাম্মদ লালটু (৫২)।এছাড়া দিনমজুর আলিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বর্তমানে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীনসহ আরও দু’জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়রা বলেন, বৃহস্পতিবার মদপানে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শনিবার প্রথমে খেদের আলী ও সেলিমের মৃত্যু হয়। পরদিন রবিবার মারা যান বাকি চারজন। এর মধ্যে চারজনের পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে দ্রুত দাফনও সম্পন্ন করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ডিঙ্গেদহ বাজারে গোপনে দেশি মদ বিক্রি হয়ে আসছে। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই মদের পয়জনিংয়েই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে তারা দাবি করছেন।
এলাকাবাসিরা বলেন, ডিঙ্গেদহ সহ আশপাশের এলাকায় অনেক দিন ধরেই গোপনে মদ বিক্রি ও জুয়ার আসর বসে। দুর দুরান্ত এলাকা থেকে আসরে যোগ দেয় অনেকে।কেউ কিছু বললে হুমকি দেয়। শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দুলাল হোসেন দুলু বলেন ডিঙ্গেদহ বাজারে এক জায়গায় কয়েকজন একসঙ্গে মদপান করেন। আমার ওয়ার্ডের দু’জনসহ আরও কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলিম উদ্দিন বলেন, আমরা ভুট্টার গাড়ির লোড- আনলোডের কাজ করি। ওই দিন আমাদের সর্দার স্পিরিট পান করান। আমি অল্প পরিমাণে খেয়ে ছিলাম।তা পান করে আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি।চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আফরিনা ইসলাম বলেন, রবিবার বিকেলে লান্টু মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি দু’দিন আগে অ্যালকোহল পান করেছিলেন। আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ওয়ার্ডে পাঠাই। সন্ধ্যা ৭টা ৩২ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান জানিয়েছে, গত শনি ও রবিবার রাতে মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মৃত্যুর কারণ ও অ্যালকোহলের উৎস অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে।