২১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১২ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় বরগুনার শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রবিউল হত্যা মামলায় নিরপরাধদের জড়ানোর অভিযোগে বাবুগঞ্জে বিএনপি’র একাংশের সংবাদ সম্মেলন বাবুগঞ্জের ছাত্রদল নেতার খুনিদের গ্রেপ্তার পরবর্তী দৃষ্টান্ত ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ চুয়াডাঙ্গায় ৩ তক্ষকসহ গ্রেফতার ১জন বাবুগঞ্জ এলজিইডি’র এলসিএস কমিউনিটি অর্গানাইজার সানজিদার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ও হয়রানির অভিযোগ জোটের চাপ নাকি অভ্যন্তরীণ কোন্দল? বরিশাল -৩ আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। ভোটারদের মাঝে ‘ভিআইপি চমক’-এর গুঞ্জন বাবুগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এর ৫০ বছর পূর্তীতে ঝালকাঠি জেলা জাসাসের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাংলাবান্ধায় ভারসাম্যহীন নারী গণধর্ষণেন শিকার চার ধর্ষক আটক বাবুগঞ্জে ছাত্রদল নেতা হত্যাকাণ্ড: ২১ জনের নামে মামলা!
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে হরিণ ধরার ফাঁদের বিনিময়ে মিলবে টাকা! হরিণ শিকারের হিড়িক শিকার প্রতিরোধে অভিনব সিদ্ধান্ত ঘোষণা

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে হরিণ ধরার ফাঁদের বিনিময়ে মিলবে টাকা! হরিণ শিকারের হিড়িক শিকার প্রতিরোধে অভিনব সিদ্ধান্ত ঘোষণা

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে:বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে হরিণ শিকারের হিড়িক পড়েছে। ফাঁদ পেতে আর বিষটোপ দিয়ে হরিণ শিকার করা হচ্ছে। শিকারিচক্র রীতিমতো হরিণ শিকারে মেতে উঠেছে। শিকারিদের বিকল্প পেশায় ফেরানোর দাবি। পূর্ব সুন্দরবনে হরিণ ধরার এক কেজি নাইলনের জালের বিনিময়ে মিলবে দুই হাজার টাকা। হরিণ শিকার প্রতিরোধে সুন্দরবন বিভাগ এমন অভিনব সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। বন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবন থেকে হরিণ পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনে হরিণ শিকার বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্ব বনবিভাগে নবাগত ডিএফও গত ৩০ এপ্রিল দায়িত্বভার গ্রহণের পরে সুন্দরবনে হরিণধরার জালের ফাঁদ উদ্ধারে অভিনব ঘোষণা দিয়েছেন। কেউ নাইলনের জালের ফাঁদ জমা দিলে প্রতি কেজি ফাঁদের বিনিময়ে তাকে দুই হাজার টাকা নগদ পুরস্কার দেওয়া হবে। হরিণ শিকারীরা নাইলনের দড়ি দিয়ে এক ধরনের ফাঁদ তৈরী করে । ঐ ফাঁদ সুন্দরবনের গহীনে পেতে বসে থাকে শিকারীরা। হরিণ দৌড়ে যাওয়ার সময় পেতে রাখা ফাঁদে আটকা পড়ে।পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ এবং পশ্চিম সুন্দরবনে সংঘবদ্ধ চক্র নির্বিচারে হরিণ শিকার করে চামড়া ও মাংস বিক্রি করছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় ও বন বিভাগের কিছু অসৎ কর্মচারীর সহায়তায় শিকারিরা নিয়মিত হরিণ শিকার করছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। কোস্ট গার্ড ও বনরক্ষীদের হাতে দু-চারটি হরিণ পাচারের ঘটনা ধরা পড়লেও শিকারিরা পার পেয়ে যাচ্ছে।

বাগেরহাটের মোংলার কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে শিকারি চক্রের কাছ থেকে হরিণের ৪২৩ কেজি মাংস, হরিণ ধরার ৮০টি ফাঁদ এবং সাতজন শিকারিকে আটক করা হয়েছে। বন বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের নিয়মিত অভিযানেও শিকারিদের তৎপরতা কমানো যাচ্ছে না।নুসন্ধানে জানা গেছে, পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলার সোনাতলা, পানিরঘাট, রাজাপুর, রসুলপুর, মোরেলগঞ্জের জিউধরা, পাথরঘাটার চরদুয়ানী, জ্ঞানপাড়া এলাকার শিকারিরা জেলে বেশে সুন্দরবনে ঢুকে হরিণ শিকার করে লোকালয়ে নিয়ে আসে। রামপাল ও সাতক্ষীরা এলাকার জেলেরা কাঁকড়াশিকারের টোপ বানাতে নিয়মিত হরিণ শিকার করছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের সুপতি, দুবলা, কটকা, কচিখালী, বাদামতলা, চান্দেশ্বর, টিয়ারচর, কোকিলমুনি, আন্ধারমানিকসহ গভীর বনের সুবিধাজনক স্থানে নায়লনের ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করা হয়। প্রতি কেজি হরিণের মাংস ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। টাকা বেশি পেলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়েও মাংস পৌঁছে দেওয়া হয়। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, রাসমেলাকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি হরিণ শিকারের ঘটনা ঘটে। তীর্থযাত্রীর ছদ্মবেশে শিকারিরা বনে ঢুকে নির্বিচারে হরিণ শিকার করে।

সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, হরিণ শিকার বন্ধে কোস্ট গার্ডের কিছু অভিযান দৃশ্যমান হলেও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে সুন্দরবনে এই অপতৎপরতা বেড়েই চলেছে। বন বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি হরিণশিকারিদের জন্য কঠোর আইনও করতে হবে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চর দোয়ানি, কাঁঠালতলী, জ্ঞানপাড়া ও পদ্মা স্লুইস এলাকার একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাতের আঁধারে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে। সুন্দরবন থেকে শিকার করে এনে শরণখোলার সোনাতলা, পানিরঘাট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে হরিণের মাংস পাচার করে চক্রটি।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব বলেন, সুন্দরবনের জেলে মৌয়ালীদের ফাঁদ উদ্ধার করে জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কেউ বনে ফাঁদ দেখলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বনরক্ষীদের সাথে নিয়ে ফাঁদ উদ্ধার করতে হবে বলে এসিএফ জানান।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বাগেরহাটের নবাগত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ( ডিএফও) মোঃ রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনে চোরাশিকারীদের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিকারীরা ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে থাকে। যেহেতু জেলেরা ও বিশেষ করে মৌয়ালীরা গহীন বনে হেটে হেটে মধুর চাক সংগ্রহ করে থাকে। এ সময় মৌয়ালীদের চোখে হরিণের ফাঁদ দেখা সহজেই সম্ভব। সে কারণে জালের ফাঁদ উদ্ধারে কেজি প্রতি জালের বিনিময়ে দুই হাজার টাকা নগদ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘোষণার ফলে হরিণ শিকার প্রতিরোধে ভালো সুফল পাওয়া যাবে বলে নবাগত ডিএফও আশা প্রকাশ করেছেন।##

#

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019