২১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৮ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় বরগুনার শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রবিউল হত্যা মামলায় নিরপরাধদের জড়ানোর অভিযোগে বাবুগঞ্জে বিএনপি’র একাংশের সংবাদ সম্মেলন বাবুগঞ্জের ছাত্রদল নেতার খুনিদের গ্রেপ্তার পরবর্তী দৃষ্টান্ত ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ চুয়াডাঙ্গায় ৩ তক্ষকসহ গ্রেফতার ১জন বাবুগঞ্জ এলজিইডি’র এলসিএস কমিউনিটি অর্গানাইজার সানজিদার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ও হয়রানির অভিযোগ জোটের চাপ নাকি অভ্যন্তরীণ কোন্দল? বরিশাল -৩ আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। ভোটারদের মাঝে ‘ভিআইপি চমক’-এর গুঞ্জন বাবুগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এর ৫০ বছর পূর্তীতে ঝালকাঠি জেলা জাসাসের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাংলাবান্ধায় ভারসাম্যহীন নারী গণধর্ষণেন শিকার চার ধর্ষক আটক বাবুগঞ্জে ছাত্রদল নেতা হত্যাকাণ্ড: ২১ জনের নামে মামলা!
চিরিরবন্দরে ৫ বছর স্কুলে না গিয়েও নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক

চিরিরবন্দরে ৫ বছর স্কুলে না গিয়েও নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক

শফিকুল ইসলাম দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে প্রায় পাঁচ বছর বিদ্যালয়ে না গিয়েও নিয়মিত বেতন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসগর আলীর বিরুদ্ধে। তিনি স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে অফিস সহকারী এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে হাজিরা খাতা বাসায় নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর করেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজাপুর বুড়িহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৯৪ সালে স্থাপিত হয়। এটি এমপিওভুক্ত হয় ২০০০ সালে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের মোট ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৬০ জন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন আসগর আলী। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তার বড় ভাই আহসান হাবিব। সহকারী প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ তার ভাতিজা। ২০১৮ সালে স্কুলের পাশে দুর্গা পূজা মন্দির কমিটির সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত জমি নিয়ে বিরোধের পর থেকে তিনি আর স্কুলে আসেন না।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। নেই বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড। বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ক্লাস রুমে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ১০ থেকে ১২ জন ছাত্রছাত্রী বসে রয়েছে, নেই কোনো শিক্ষক।

ছাত্রছাত্রীদের কাছে তাদের প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তারা ‘স্যারকে কোনো দিন স্কুলে দেখি নাই’ বলে জানায়। এ সময় তাদের ক্লাস রোল জানতে চাওয়া হলে বলতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে তারা জানায়, তাদের রোল দেয়া হয়নি। তাদের হাজিরাও নেয়া হয় না।

এ সময় অফিস রুমে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করতে চাইলে সহকারী এক শিক্ষক জানান প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেননি। কেন স্কুলে আসেনি জানতে চাইলে তিনি এর উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে ‘হাজিরা খাতা নাই’ বলে জানান শিক্ষকরা।

বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী জুঁই আক্তার বলেন, আমার বাড়ির কাছেই হেড স্যারের বাসা। কিন্তু স্যারকে কোনো দিন স্কুলে দেখি নাই। খালি জানি আসগর আলী স্যার আমাদের হেড স্যার।

জুঁই আক্তারও তার রোল বলতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য: ‘আমাদের তো রোল দেয় নাই। আমরা যে স্কুলে আসি আমাদের হাজিরাও হয় না।’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শচীন রায় বলেন, ‘প্রধান শিক্ষ বেশ কয়েক বছর বিদ্যালয়ে আসেন না। বিদ্যালয়ের পাশে স্থানীয় দুর্গা মন্দির কমিটির সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত জমি নিয়ে বিরোধের পর মামলা হয়। তারপর থেকেই তিনি স্কুলে আসেন না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, মামলার বিষয়টি সামনে এনে তিনি স্কুলে আসেন না। কারণ স্কুলের সভাপতি তার আপন বড় ভাই। সহকারী প্রধান শিক্ষক তার ভাতিজা। উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের সাথেও তার সম্পর্ক ভালো। ফলে তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আহসান হাবিবের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অভিযুক্ত শিক্ষক আসগর আলী বলেন, স্কুলের পাশে আমার ব্যক্তিগত জমি নিয়ে কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়ের পাশে দুর্গা পূজা মন্দির কমিটির সঙ্গে বিবাদ হলে তারা মামলা দেয়। সে সময় আমার বিরুদ্ধে তারা মূর্তি ভাঙার মামলাও দিয়েছিল। স্কুলে গেলে আমার বিরুদ্ধে তারা আরো মূর্তি ভাঙার মামলা দিতে পারে তাই আমি স্কুলে না গেলেও স্কুলের যাবতীয় কাজ করি।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজি ইকবাল হোসেন বলেন, কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবক আমাকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে খোঁজ নিয়ে আমি এর সত্যতা পাই। উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ঘটনাটি বলেছিলাম। তিনি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেছিলেন। কিন্তু কি যে ব্যবস্থা নিলো জানি না।

চিরিরবন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফজলে এলাহি বলেন, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমার অফিসে স্কুলের প্রয়োজনীয় কাজে নিয়মিত আসেন। তার সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু তিনি যে ২০১৮ সাল থেকে স্কুল করেন না সে বিষয়ে আমাকে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বিষয়টি আপনাকে অবগত করেছিলেন- বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, তখন আসলে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কারণ স্থানীয়ভাবে এসব মতবিরোধ থাকতে পারে। এখন বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019