২১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৪ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের ক্রাইম ডেক্স : বিদায়ের আগে আরও একটি বাজেট ঘোষণা দিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
আজ বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪৪২ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৮৭ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন তিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৯ কোটি ৫৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭৯৬ টাকা।
এর মধ্যে নিজস্ব আয় থেকে উন্নয়ন ব্যয় মাত্র ৬৭ কোটি টাকা। অবশিষ্ট টাকায় আয়ের উৎস দেখানো হয়েছে সরকারি ও বিদেশি সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে।
বাজেটের ৭৯ দশমিক ৭ ভাগই অনুদান নির্ভর (সরকারি ও বিদেশি সাহায্য)। অর্থাৎ বিদেশি সাহায্য না পেলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখবে না। সংশ্লিষ্টরা এ বাজেটকে অবাস্তব দাবি করে বলেছেন, বাজেটের বোঝা নব নির্বাচিত মেয়রের ঘাড়েই চাপানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে বিদায়ী মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ আগের বাজেটগুলোর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, তার মেয়াদের দুই বছর ছিল করোনাকালীন সংকট। যে কারণে তিনি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বিগত ৪টি বাজেটেও একই ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ থোক এবং সরকারি ও বিদেশি সাহায্যে আয়ের খাত দেখিয়ে বড় অঙ্কের বাজেট দেখানো হয়েছে। বরাদ্দ না পাওয়ায় বছর শেষে তিনভাগের একভাগ সংশোধিত বাজেট দিতে হয়েছে।
গত ৫ বছরে তিনি এক টাকাও উন্নয়ন বরাদ্দ পাননি। আগামী ১৩ নভেম্বর তার মেয়াদ শেষ হবে। নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ১৪ নভেম্বর।
আজ বৃহস্পতিবার ঘোষিত ৪৪২ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের দায় বর্তাবে নতুন মেয়রের ওপর।
এ প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, মেয়র সাদিক বিগত ৫ বছরে নগরীতে কোনো কাজই করেননি। তিনি বিদায়ের আগ মুহূর্তে বাজেটের নামে ভাঁওতাবাজি করে যাচ্ছেন।
জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য এটি একটা বিশাল বাজেট। নব নির্বাচিত মেয়রের ঘাড়ে এই অবাস্তব বাজেট চাপানোই তার লক্ষ্য।বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবার নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তবনার পাশাপাশি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১৭১ কোটি ৯৪ লাখ ৩৩ হাজার ২৮১ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন দিয়েছেন। গত অর্থ বছরে প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৪১৮ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭২ টাকা।
বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৫৪৮ কোটি ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছিলেন।
২০০২ সালে বিসিসি প্রতিষ্ঠার পর এত বড় অঙ্কের বাজেট এবং ঘোষণায় জাঁকজমক আয়োজন এর আগে কখনো হয়নি। উন্নয়ন বরাদ্দ না পাওয়ায় বছর শেষে সংশোধিত আকার হয় মাত্র ৯৪ কোটি ৭২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
পরের ৩টি বাজেটের ভাগ্য প্রায় একই রকম হয়েছে। ২০২০-২১ সালের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা দেন ২০২০ সালে ঈদুল ফিতরের ছুটির মধ্যে ফেসবুকে পেজে। যার টাকার পরিমাণ ছিল ৪২৭ কোটি ৬২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪৫ টাকা।
বছর শেষে জানানো হয়, সরকারি বিশেষ অনুদান এবং সরকারি ও বিদেশি সাহায্যপুষ্ট উন্নয়ন ২৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ পেয়েছেন মাত্র ১৭ কোটি ৯১ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ৫ বছরে বড় অঙ্কের সংশোধিত বাজেট ছিল ২০২১-২২ অর্থ বছরে। তখন ৪১৫ কোটি ৭২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকার প্রস্তাবের বিপরীতে সংশোধিত বাজেট হয় ২৯৬ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬০ টাকা।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর বরিশাল নগর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, বিদেশি অর্থ কতটা পাওয়া যাবে তা তো নতুন মেয়র নির্ধারণ করবেন।
বাজেটের ৮০ ভাগ বিদেশি সাহায্য নির্ভর বাস্তবসম্মত নয়। আসলে নতুন মেয়রের ওপর বোঝা চাপিয়ে দিয়ে মেয়র সাদিক বিদায় নিচ্ছেন। কেননা বিদায়ী মেয়র সাদিকই তো কোনো বিদেশি অনুদান পাননি। এটি অসামঞ্জস্য বাজেট।