২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫২ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরায়েলে হামলা চালানোর মতো প্রচুর মিসাইল রয়েছে হামাসের
ইসরায়েল, ফিলিস্তিন সংঘাতে আলোচিত বিশ্ব। তুলনামূলক বিচারে ইসরায়েলের শক্তি অনেক বেশি। তাদের বিমানবাহিনী, অস্ত্রবাহী ড্রোন ও চরবৃত্তি মাধ্যমে শত্রুশিবিরের খবর জোগাড় করার নেটওয়ার্ক খুবই জোরদার। যার জোরে যখন খুশি তারা গাজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। খবর দ্য ওয়ালের।
ইসরায়েলের দাবি, তাদের টার্গেট গাজার শুধুমাত্র সেইসব এলাকা যেগুলো সামরিক উদ্দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু ঘটনাচক্রে ফিলিস্তিনিদের ঘন জনবসতি, হামাস ও ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর ঘাঁটিগুলি তার বেশ কাছে হওয়ায় এবং অনেক সময় সেগুলো নাগরিক বাসস্থানের তলায় ভূগর্ভে অবস্থিত হওয়ার ফলে ইসরায়েলি হামলায় সাধারণ বাসিন্দাদের প্রাণহানি অনিবার্য হয়ে ওঠে।
কিন্তু ইসরায়েলকে আঘাত করার মতো যথেষ্ট শক্তি হামাসেরও আছে। এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের অস্ত্রভাণ্ডারের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার তাদের নানা ধরনের ভূমি থেকে ভূমিতে আঘাত করার শক্তি রাখা মিসাইল। মিশরের সিনাই থেকে চোরাপথে কোরনেট চালিত ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রসহ এইসব মিসাইলের বেশ কিছু নিয়ে আসা হয়েছে।
তবে গাজা খাড়িতেই সচল ও তুলনামূলকভাবে অত্যাধুনিক অস্ত্র নির্মাণ ঘাঁটি থেকে বেশিরভাগ সমরাস্ত্র পায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠী।
ইসরায়েলি ও বাইরের নানা দেশের বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, এই অস্ত্র নির্মাণ শিল্প গড়ে তোলায় ইরানের প্রযুক্তি ও সহায়তার বড় ভূমিকা রয়েছে। সেজন্যই ইসরায়েলি হামলার টার্গেট ছিল অস্ত্র নির্মাণ কেন্দ্র ও তা মজুত রাখার ঘাঁটিগুলি।
ফিলিস্তিনিরা নানা বৈচিত্র্যে ভরা মিসাইল ব্যবহার করছে। এগুলির কোনোটাই মৌলিক নকশার মাপকাঠিতে একেবারে নতুন বলে মনে হয় না। কিন্তু মিসাইলগুলির পাল্লা বাড়ানো ও তাদের আরও বেশি বিস্ফোরক বহনে সক্ষম করে তোলাই ফিলিস্তিনিদের ভাবনা।
জানা গেছে, হামাসের হাতে কাসাম (১০ কিমি বা ৬ মাইল দূর পর্যন্ত টার্গেটে আঘাত করতে সক্ষম), কাডস ১০১ (১৬ কিমি পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে সক্ষম)-এর মতো স্বল্প পাল্লার প্রচুর মিসাইল আছে। আর আছে গ্রাড সিস্টেম (৫৫ কিমি পর্যন্ত দূরের টার্গেটে আঘাত করতে পারে), সেজিল ৫৫। আর আছে প্রচুর গোলাবারুদ। তবে হামাসরা এম-৭৫, ফজর, আর-১৬০, এম ৩০২ এর মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমও ব্যবহার করে। এগুলির কোনোটার ৭৫ কিমি, কোনোটার ১০০ কিমি, ১২০ কিমি পর্যন্ত দূরের টার্গেটে আঘাত হানার শক্তি আছে।
এম-৩০২ ২০০ কিমি পর্যন্ত দূরের টার্গেটে হামলা করতে পারে। সুতরাং জেরুজালেম, তেল আবিব-দুই জায়গাতেই হামলা করার মতো অস্ত্র হামাসের আছে, যা ইসরায়েলি জনসংখ্যার এক বড় অংশ ও তাদের নানা গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোর সামনে বিপদ হতে পারে।
ইসরায়েলি সেনার বক্তব্য, গত কয়েকদিনে ইসরায়েলের ওপর আছড়ে পড়া হাজারের বেশি রকেটের মধ্যে প্রায় ২০০টা গাজা খাড়ির মধ্যেই পড়ে গেছে, বেশি দূর যেতেই পারেনি। এটা সম্ভবত প্রমাণ করছে যে, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্র নির্মাণ প্রক্রিয়া বেশি কাজ দেয় না।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বলেছে, ইসরায়েলে ঢুকে পড়া সব মিসাইলের ৯০ শতাংশকেই তাদের আয়রন ডোম অ্যান্টি-মিসাইল সিস্টেম রুখে দিয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মোকাবিলায় সীমিত উপায় আছে। অ্যান্টি-মিসাইল প্রতিরোধী সিস্টেম চালু করা, শত্রুপক্ষের অস্ত্রের মজুত করা ঘাঁটি, নির্মাণকেন্দ্রগুলিকে পাল্টা নিশানা করা, সমতলে অভিযান চালিয়ে মিসাইল হামলাকারীদের পিছনে হটিয়ে দেওয়া। কিন্তু সেটা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় না। কেননা তাদের কৌশলগত গভীরতা নেই।
অতীতে ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলের সর্বশেষ বড়সড় অভিযানে ২২৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল। এদের ১৪৬২ জনই সাধারণ নাগরিক। উল্টোদিকে মাত্র ৬৭ জন ইসরায়েলে সেনা জওয়ান ও তাদের ৬ জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছিলেন।