২২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ন, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শনিবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে বিএনপির মনোনয়নকে ঘিরে সুবাতাস বানারীপাড়ায় ভূমিকম্পে মুহুর্তে বসতবাড়ি সন্ধ্যা নদী গর্ভে বিলীণ ছারছীনার পীর সাহেব হুজুরের বরিশাল আগমন উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার ঈছালে ছওয়াব ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় উদ্ধার হওয়া তিনটি তক্ষক বনায়ন ও নার্সারি এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বাগানে অবমুক্ত ফাতেমা জোহরা আদিবার আন্তর্জাতিক সাফল্য; অস্ট্রেলিয়ার নিবন্ধিত আর্কিটেক্ট স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় বরগুনার শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রবিউল হত্যা মামলায় নিরপরাধদের জড়ানোর অভিযোগে বাবুগঞ্জে বিএনপি’র একাংশের সংবাদ সম্মেলন বাবুগঞ্জের ছাত্রদল নেতার খুনিদের গ্রেপ্তার পরবর্তী দৃষ্টান্ত ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ চুয়াডাঙ্গায় ৩ তক্ষকসহ গ্রেফতার ১জন বাবুগঞ্জ এলজিইডি’র এলসিএস কমিউনিটি অর্গানাইজার সানজিদার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ও হয়রানির অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গায় অপহৃত কিশোরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার মূল পরিকল্পনাকারীসহ চার জনকে আটক করেছে দর্শনা থানা পুলিশ।

চুয়াডাঙ্গায় অপহৃত কিশোরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার মূল পরিকল্পনাকারীসহ চার জনকে আটক করেছে দর্শনা থানা পুলিশ।

মো: জাকিরুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা প্রতিনিধি ::-

মা আমার শরীরটা ভালো নেই। আমাকে খেতে দাও, ঘুমাবো। এরই মধ্যে বেজে উঠলো মোবাইলফোন। খাবার রেখে বাড়ি থেকে বের হয় কিশোর শাকিব। রাত শেষে ভোরের আলো ফুটে উঠলেও ছেলে শাকিবের দেখা পাননি মা শেফালী বেগম। ছেলে শাকিবকে ফেরত পেতে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করা হয়। পুলিশকে জাননোর পর বিষয়টি সাধারণ ডায়রিভুক্ত করে দর্শনা থানা পুলিশ। এরপর একে একে কেটে গেলো সাতটি দিন। এরইমধ্যে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের স্বীকারোক্তিতে সাতদিন পর উদ্ধার করা হলো কিশোর শাকিবের লাশ। বলা হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার যদুপুর গ্রামের কিশোর শাকিবের কথা। অপহরণের সাতদিন পর গতকাল শনিবার দুপুরে গ্রামের আমবাগান থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই বাগানে গর্তের ভেতরে জ্বালানি খড়ি ও পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আজ রোববার ময়নাতদন্তের পর শাকিবের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে, এ ঘটনার মুলহোতা কুষ্টিয়ার রাজিবসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুক্তিপণ নাকি অন্য কারণে শাকিলকে ফোনে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের যদুপুর গ্রামের মাঠপাড়ার সৌদি প্রবাসী আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে শাকিব হোসেন ওরফে শাকিল আহম্মেদ (১৫) গত ১৯ ডিসেম্বর শনিবার রাত ৮টার দিকে তার মাকে ভাত দিতে বলে। খাওয়ার আগ মুহূর্তে একটি ফোন পেয়ে খাবার রেখে বাইরে চলে যায়। পরদিন সকালে শাকিলকে ফেরত পেতে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে তার মা শেফালী বেগমের কাছে ফোন করা হয়। পরদিন সকালে বিষয়টি দর্শনা থানা পুলিশকে জানানোর পর সাধারণ ডায়রিভুক্ত করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রযুক্তির সহায়তায় অপহরকদের গ্রেফতার ও শাকিবকে উদ্ধার করতে অভিযান শুরু করা হয়। সন্দেহভাজন চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তিতে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে যদুপুর গ্রামের মোল্লাবাড়ির আমবাগানের একটি গর্তের ভেতর থেকে শাকিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন কুষ্টিয়া মিরপুরের কামিরহাট ক্যানালপাড়ার কুদ্দুস ম-লের ছেলে হত্যাকা-ের মুলহোতা রাজিব ম-ল (২৪), যদুপুর গ্রামের আকরাম বকাইলের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান (৪২), যশোরের শার্শা উপজেলার উলাশি গ্রামের ঈমন আলীর ছেলে আকাশ (২৫) ও ওমর আলীর ছেলে সোয়েবকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত চারজনকে আজ রোববার আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পিতা প্রবাসে থাকায় কখনও রাজমিস্ত্রী আবার কখনও মাছ বিক্রি করতো নিহত শাকিব। দু’মাস আগে যদুপুর গ্রামের সিদ্দিকের ছেলে সুমনের সাথে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে ঝিনাইদহে যায় সে। সেখানে কাজ করার সুবাদে পরিচয় হয় কুষ্টিয়া মিরপুরের কামিরহাট গ্রামের রাজিব ম-লসহ সমবয়সী কয়েকজনের সাথে। তাদের মধ্যে রাজিব কয়েকদিন আগে যদুপুর গ্রামে সুমনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলো।
দর্শনা থানার ওসি মাহাব্বুর রহমান কাজল বলেন, ঘটনার রাতেই অপহরণকারীরা শাকিবকে কোমল পানীয়’র সাথে ২৫টি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে যদুপুর গ্রামের মোল্লাবাড়ির আমবাগানে নিয়ে যায়। পরে সেখানে শাকিবের গায়ের গেঞ্জি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর শাকিবের মায়ের কাছে মোবাইলফোনে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করতে থাকে। অপহরণকারীরা একবার কুষ্টিয়া, একবার যশোর, একবার ঢাকার ঠিকানা বলে তাকে ঘুরাতে থাকে। তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত রাজিব একজন পেশাদার অপরাধী। শাকিলের পিতা প্রবাসী। তাকে অপহরণ করলে মুক্তিপণ হিসেবে টাকা পাওয়া যাবে এমন ধারণা থেকেই তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। আরও তদন্তের মাধ্যমে এর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
সন্তান হারানোর শোকে কাতর মা শেফালী বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ঘটনার রাতে শাকিব আমাকে ভাত দিতে বলে। ভাত দিই। খেতে বসবে, এমন সময় ফোন পেয়ে বাড়ির বাইরে চলে যায়। সেই যে গেলো আর ফিরে আসেনি।
নিহত শাকিবের পিতা সৌদিআরব প্রবাসী। মা ও ৮ বছরের বোনকে নিয়ে তাদের সংসার। পিতা প্রবাসে যাওয়ার পর থেকে সংসার চালাতে কখনও রাজমিস্ত্রী আবার কখনও মাছ বিক্রির কাজ করতো শাকিব। মিষ্টভাষী শাকিব এলাকার মানুষের কাছে প্রিয়পাত্র ছিলো। তাকে হত্যা করা হতে পারে এটা কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। শাকিবের লাশ উদ্ধারের পর থেকে পরিবারজুড়ে যেমন চলছে শোকের মাতম, তেমনি গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সেই সাথে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছে এলাকাবাসী।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, অপহরণের বিষয়টি জানার পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হয়। তারা ঘটনা স্বীকার করেছে। তাদের কথা মতো লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রকৃত ঘটনা জানতে পুলিশি তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, এটা কি মুক্তিপণের কারণে হত্যা, না কি অন্য কিছু এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019