২২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শনিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি রাজাপুরের সেই বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী রিনার (২০) কৃত্রিম পায়ের জন্য আর্থিক সহয়তা দিলেন ঢাকার এক ব্যবসায়ী। গত ১ অক্টোবর প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত একটি কৃত্রিম পায়ের জন্য প্রতিবন্ধী রিনার আকুতি শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি দেখে এই প্রতিবেদকের কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক ব্যবসায়ী রিনা জন্য ২৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।ঝালকাঠির প্রথম আলোর প্রতিনিধি আসম মাহমুদুর রহমান (পারভেজ) গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের পুটিয়াখালী গ্রামের রিনাদের বাড়িতে গিয়ে সেই ২৫ হাজার টাকা রিনার হাতে তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সময়ের আলো পত্রিকার ঝালকাঠি প্রতিনিধি আতিক রহমান, স্থানীয় পুটিয়াখালী ভলান্টিয়ার্স নামে স্থানীয় একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ শাহাদাত, রিনার শুভাকাঙ্খি কলেজছাত্র মেহেদী হাসানসসহ রিনার প্রতিবেশীরা।রিনা টাকা হাতে পেয়ে খুশিতে চোখের পানি ছেড়ে দেয়। সে কথা না বলতে পারলেও আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় , এই টাকায় তাঁর একটি কৃত্রিম পা হবে। সে আবারও হাটতে পারবে। সেই ব্যবসায়ীর সাথেও রিনা মুঠোফোনে খুশিতে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে।
রিনা জন্ম থেকেই কথা বলতে ও শুনতে না পরায় শিশু বয়সে রেললাইনে বসে খেলার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে ডান হাত ও পা হারাতে হয়েছে। ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারান রিনা। ২০১০ সালের কথা সেটি। ২০০৫ সালের দিকে রিনার বাবা মোজাম্মেল হক খুলনা জুট মিলে নিরাপত্তাপ্রহরীর চাকরি করতেন। সেখানেই দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন তিনি। শিশুকালে খুলনার রেললাইনে বসে খেলার সময় বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী হওয়ায় হর্ন শুনতে না পাওয়ায় রিনার ডান হাত ও পায়ের ওপর দিয়ে ট্রেন চলে যায়। সে যাত্রায় কোনোমতে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। বাবার মৃত্যু পর ২০১১ সালের দিকে দুই মেয়েকে নিয়ে খুলনা থেকে রাজাপুর উপজেলার পুটিয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন তাঁর মা জয়নব বিবি। সেখানে একটি ঝুপড়িঘরে ঠাঁই নিয়ে কোনোমতে জীবন যাপন করছিলেন তাঁরা। মায়ের ভিক্ষা ও প্রতিবেশীদের সাহায্যে চলত তাঁদের সংসার। এক বছরের মাথায় তাঁর মা জয়নব বিবিও মারা যান। এতিম হয়ে যান দুই বোন শিরিন ও রিনা। শিরিন বড়। মা-বাবা হারিয়ে গ্রামের বাড়ির সেই খুপরিঘরেই অর্ধাহারে-অনাহারে তাঁরা বাস করতে থাকেন। ঝড়বৃষ্টি এলেই পানিতে ভরে যেত তাঁদের ছোট্ট ঘরটি। নিরুপায় হয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বৃষ্টিবাদল কাটিয়ে দিতে হতো দুই বোনকে।
স্থানীয় কিছু মানুষের সহযোগিতায় বছর দেড় আগে পেয়েছিলেন একটি কৃত্রিম পা। সঙ্গে মেরামত করে দেওয়া হয় তাঁর ঘর। দেড় বছর ব্যবহার করার পর তাঁর সেই কৃত্রিম পা নষ্ট হয়ে গেছে। পায়ের অভাবে এখন বাইরে সাহায্যের জন্যও বের হতে পারেন না তিনি।
কৃত্রিম পা নষ্ট হওয়ায় হাঁটতে গেলেই পায়ে প্রচন্ড ব্যথা হয় তাঁর। কয়েকটি স্থানে কালো দাগও হয়েছে। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় নিজের কষ্টের কথা মুখে প্রকাশ করতে পারেন না তিনি।
বছর দেড় আগে স্থানীয় কলেজছাত্র মেহেদি হাসান প্রতবন্ধী রিনা আক্তারের এ দুর্দশা দেখে তাঁদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেন। পুটিয়াখালী ভলান্টিয়ার্স নামে স্থানীয় একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ শাহাদাতকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের ঘরটি মেরামত করে দেয়া হন। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবীরা মিলে নিজেদের অর্থ ও শ্রম দিয়ে রিনার জন্য একটি তহবিল গঠন করেন। সেই তহবিলের অর্থে রিনা একটি কৃত্রিম পা পান। এরপর চলেফিরে খেলেও এখন সেই কৃত্রিম পা নষ্ট হওয়ায় এখন আবার মানবেতর অবস্থায় পড়েছেন তিনি। রিনার শুভাকাঙ্খী কলেজছাত্র মেহেদী হাসান বলেন , আমরা ঢাকার শ্যামলীর একটি বেসকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে রিনার কৃত্রিম পায়ের বিষয়ে যোগাযোগ করেছি। ঢাকার ব্যবসায়ীর দেয়া এই ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সেখান থেকে রিনার কৃত্রিম পাটি সংযোজন করে আনবো। শিগগিরই আমরা স্থানীয় পুটিয়াখালী ভলান্টিয়ার্স সেচ্ছাসবেবী সংঠনের সদস্যরা সাথে রিনাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে কৃত্রিম পা লাগিয়ে নিয়ে আসবো।
পুটিয়াখালী ভলান্টিয়ার্স সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ শাহাদাত বলেন , রিনার জন্য প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য ও আর্থিক সহায়তার জন্য প্রথম আলো ও সেই ব্যবসায়ীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।