২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৫১ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোহেল সানি
বাবা নেই। চলে গেছেন অকালে। তিনি আমাদের মাঝে জ্বালিয়ে দিয়ে গেছেন আশা-আকাঙ্ক্ষার পিলসুজে সম্ভাবনার প্রদীপ শিখা। তাই তাঁকে স্মরণ করি অনিন্দ্য সুন্দর কৃতজ্ঞতায়।
তাঁর রেখে যাওয়া পরিবারে নেই কোন তিক্ততা, নেই কোন বিভেদ। আছে শান্তি -প্রশান্তির স্বস্তি।
সন্তান হিসাবে কেউ কেউ আমরা দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর সৈনিক ও আপোসহীন কলমযোদ্ধা। একেকজন মুক্তচিন্তার সঙ্কল্পিত অধ্যায়ের পথনির্দেশক।
বাবার রেখে যাওয়া আমাদের মায়ের সোনার সংসারের অন্তহীন দুঃখ-দুর্দশা সকরুণ আলেখ্য রচিত হতে দেইনি আমরা। বরং প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার মিশেলে আশ্চর্য ক্ষিপ্রতায়ও তাঁর সহনশীল মতাদর্শ অনুসরণ করে চলছি। বিপন্ন মানবতার সেবায় ব্রত আমরা।
আত্ম-জিজ্ঞাসার বানী নিয়ে প্রতিবছর ২৪ আগস্ট এসে ধরা দেয়। এদিন বাবার মৃত্যুবার্ষিকী।
বাবার স্বতঃস্ফূর্ত অনুপ্রেরণায় যখন আমরা সন্তানরা বেড়ে উঠছিলাম, তখনই ঘাতকব্যাধি ফুসফুসে ক্যান্সার তাঁকে রুখে দেয়। তাঁর দূরদৃষ্টির উত্তরাধিকার বহন করাই কিনা ছিল, আমাদের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা।
বাবা প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী হিসাবে সফল হয়েছিলেন। বানারীপাড়া পৌর শহরমুখী বিরাট বন্দরের প্রায় এক চতুর্থাংশের ভূমি সম্পদের মালিক ছিলেন তিনি। পিরোজপুর সদরেও বিরাট কাপরের ব্যবসা ছিলো তাঁর।
স্বরূপকাঠির কুড়িয়ানায় অসংখ্য বাড়ি, জমি ও পেয়ারা বাগান গড়ে তুলেছিলেন তিল তিল করে। যার বর্তমান বাজার মূল্য শতকোটির টাকারও ওপরে। তিনি সত্যিই আত্মমর্যাদা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের সুমহান বিশ্বাসের ওপর নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এটা ঢাকঢোল পেটানোর বা নিজেদের জাহির করার কোন মনোবৃত্তি নয়, পরম শ্রদ্ধেয় মা, আজ বাবার কথা স্মরণ করে চোখে অশ্রুজলপ্রপাত নামিয়ে কথাগুলোর অবতারণা করলেন। আর বললেন, ‘তোরা সন্তানরা কেউই তোর বাবার মতো বিত্তশালী হওয়ার যোগ্যতা রাখিস না, তিনি কিছু ভুল আর কিছু লোককে বিশ্বাস না করলে আজ কোটি কোটি টাকার সম্পদ অন্যরা খেতে পারতো না। আবার কেউ হাতিয়েও নিতে পারতো না।’
পারিবারিক এসব কথা না-বলাই শ্রেয়। কিন্তু এ যে চরম সত্য, আপনজনও আমার বাবার সঙ্গে জমিজমা সম্পদ-সম্পত্তি নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ঠকিয়েছেন নানাভাবে। মা’কে বললাম দুঃখ করোনা, এখনও যা আছে তা তো বাবারই সম্পদ,কম কিসের।
যাহোক, আমার ভাই রাহাদ সুমন বরিশালের সাংবাদিক। বানারীপাড়া প্রেসক্লাবের ১৭ বছর ধরে সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
ছোট ভাই নাসির আহমেদ রুবেল এক্মিম ব্যাংক ঝালকাঠি শাখার ব্যবস্থাপক। বোনেরা সবাই সুখে আছে। ভগ্নিপতিরা কেউ ঢাকায়, কেউ বরিশালে সুপ্রতিষ্ঠিত। আমাদের ভাই-বোনদের সন্তানরা কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, আবার কেউবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আমার মেয়ে রামিশা সানিআহও চিকিৎসা বিজ্ঞানী হতে যাচ্ছে। স্কুল পড়ুয়া ছেলে রক্তিম মেহরাব নির্ভীক ও মেধাবী।
আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে দায়িত্বপালন করেছি দীর্ঘদিন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য (১৯৯৭-২০০৩) নির্বাচিত হয়েছিলাম।
বাংলাদেশ প্রতিদিন ও দৈনিক আমাদের সময়- এ প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে বহুবছর আওয়ামী লীগ বিটের দায়িত্বপালন করেছি। নব্বই দশকে দেশের একমাত্র রঙিন দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকারও বিশেষ সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেছি।
২০০২ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাক্ষাতকার গ্রহণেরও সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এছাড়াও তাঁর নির্দেশে বহু কাজ করে সমাদর পেয়েছি। সবই পেয়েছি। যা পেয়েছি, তাতেই আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। আছে সব, আছি সবাই। নেই শুধু বাবা।
এ অভাববোধ যে পাঁজড়-ভাঙ্গা যাতনার, তা আমরা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি দুযুগ ধরে।
আজ আত্মসন্তুষ্ট চিত্তে বাবা তোমায় স্মরণ করছি। তুমি শাসন-সোহাগে কখনো কঠোর হয়ে বলতে,’তুই এমন ব্যক্তির সঙ্গে চলবি না, যে ব্যক্তি জ্ঞানহীন, বইপত্র হোক তোর অবলম্বন’।
সত্যি বাবা, আমি আজও সেই বইপত্র নিয়ে আছি। কলমযোদ্ধা হয়েছি। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিনে “আওয়ামী লীগের ৭০ বছর শীর্ষক” আমার একটি গ্রন্থ বের হচ্ছে। বাবা তুমি থাকলে কত খুশী হতে। কত আনন্দ অনুভব করতে।
সত্যি বাবা, তুমি যে আশার আলো সঞ্চার করে দিয়ে গেছো, সেই আলোয় আমরা উদ্ভাসিতমুখে তোমার জন্য দোয়া পড়ছি, মহান আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে। তুমি নিশ্চয়ই হয়েছো বাবা জান্নাতবাসী।