২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৯ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
চুয়াডাঙ্গায় উদ্ধার হওয়া তিনটি তক্ষক বনায়ন ও নার্সারি এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বাগানে অবমুক্ত ফাতেমা জোহরা আদিবার আন্তর্জাতিক সাফল্য; অস্ট্রেলিয়ার নিবন্ধিত আর্কিটেক্ট স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় বরগুনার শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রবিউল হত্যা মামলায় নিরপরাধদের জড়ানোর অভিযোগে বাবুগঞ্জে বিএনপি’র একাংশের সংবাদ সম্মেলন বাবুগঞ্জের ছাত্রদল নেতার খুনিদের গ্রেপ্তার পরবর্তী দৃষ্টান্ত ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ চুয়াডাঙ্গায় ৩ তক্ষকসহ গ্রেফতার ১জন বাবুগঞ্জ এলজিইডি’র এলসিএস কমিউনিটি অর্গানাইজার সানজিদার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ও হয়রানির অভিযোগ জোটের চাপ নাকি অভ্যন্তরীণ কোন্দল? বরিশাল -৩ আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। ভোটারদের মাঝে ‘ভিআইপি চমক’-এর গুঞ্জন বাবুগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এর ৫০ বছর পূর্তীতে ঝালকাঠি জেলা জাসাসের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
মাদক সেবন দুরে থাক, আমার ভাই জীবনে একটা সিগারেটও খায়নি”- মেজর সিনহা বোন।

মাদক সেবন দুরে থাক, আমার ভাই জীবনে একটা সিগারেটও খায়নি”- মেজর সিনহা বোন।

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের (৩৬) মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। তাঁরা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও নিজ দেশে সিনহাকে এভাবে মারা যেতে হবে, তা তাঁরা কখনোই ভাবেননি।

জানা গেছে, ঈদের আগের রাতে পুলিশ ফোন দিলেও মেজর (অব.) সিনহার মৃত্যু সংবাদ জানায়নি। মেজর (অব.) সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘ঈদের দিন সকাল ১১টার দিকে উত্তরা থানা থেকে কয়েকজন পুলিশ আমাদের বাসায় আসেন। তারা এসে আমার ভাই সম্পর্কে নানান প্রশ্ন করেন। তারা ঘরে থাকা ছবিগুলোও দেখেন। তারা কনফার্ম হতে চেয়েছিলেন আমার ভাই আর্মিতে ছিল কি না। তারা ছবিও তুলে নিয়ে যান।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা আমার ভাই সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করলেও একটি বারের জন্য বলেনি যে সে আর নেই।’

শারমিন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ আনা হয়েছে; মাদক সেবন দুরে থাক আমার ভাই তো জীবনে একটা সিগারেট পর্যন্ত খায়নি।’

মেজর (অব.) সিনহার মা তার ছেলের ব্যাচমেটদের জানিয়েছেন, কক্সবাজার থেকে পুলিশ তাঁকে ফোনে তাঁর ছেলে সম্পর্কে বিভিন্ন খোঁজ খবর নিয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর সংবাদ তাকে জানানো হয়নি।

মেজর (অব) রাশেদ খান সিনহার মা নাসিমা আখতার।
মেজর (অব) রাশেদ খান সিনহার মা নাসিমা আখতার বলেন, আমার ছেলে বাস্তবের একজন নায়ক ছিল, সে সাহসের সাথে মৃত্যুকে বরণ করেছে, সে কোনও কাপুরুষ ছিলো না, সে একজন জাতীয় বীর ছিল। সে ছিল একজন সত্যিকারের প্রেরণাদাতা, আমাদের সকল আত্মীয়, সব বন্ধু তার কাছ থেকে জীবনের উৎসাহ পেতো। সে সবসময়ই হাস্যজ্জল এক চমৎকার মানুষ ছিল যে সবসময়ই মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে এবং অন্যদের সুখী করতে চেষ্টা চালাতো। অপরের সুখের জন্য জীবন উৎসর্গ করাই ছিল তাঁর অন্যতম ব্রত।

আমাকে বিন্দুমাত্র জিজ্ঞাসা না করেও আমার সকল আরামের দিকে তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর ছিলো। চাকরির কারণে তার পোস্টিং যেখানেই হোক না কেন আমি যাতে ভালো থাকি, আরামে থাকি সে নিয়ে তাঁর চেষ্টার অন্ত ছিল না। বাড়ির প্রতিটা কাজে আমাকে সাহায্য করতো। সবকাজ সবসময়ই নিজে নিজেই করে আমাকে সবসময় চমকে দেওয়ার কাজটা সে খুব ভালো পারতো। আমাদের বাড়ীর প্রতিটি কোণা, প্রতিটি দেয়াল সে নিজের হাতে সাজিয়েছিল।

তাঁর বাবার মৃত্যুর সময় আমাদের বাড়িটা দুইতলা ছিল। কিন্তু যখন সে এসএসএফে পোস্টিং পেল (তাঁর ১৬ বছরের সামরিক জীবনে যে একটি মাত্র সময়েই সে ঢাকায় পোস্টিং পেয়েছিল), তখনই যে হাউজ বিল্ডিং থেকে ঋণ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে আমাদের বাড়িটা চারতলা করে। এই নির্মাণ কাজের তদারকি করার সে অধিকাংশ সময়ই সে রাতে আসতো যেহেতু এসএসএফের দায়িত্বে ব্যস্ততা অত্যন্ত বেশি থাকায় এছাড়া সময় পেত না।

পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব) রাশেদ খান সিনহা।
আমার ছেলেকে তার কোনও ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি আটকে রাখি নাই, কোন সময়েই না। যা যা সে করতে চেয়েছে আমি স্বাধীনতা দিয়েছি। অবশ্য সে আমাকে সবসময়ই বুঝিয়ে ফেলতে সক্ষম হতো কোন না কোনভাবে। আমাকে না বুঝিয়ে সে একটা কাজও করেনি। সে সবসময়ই আমার অনুমতি নিয়ে নিত সেই কাজগুলোর জন্য যেগুলো তাকে সুখি করতে পারে। যাতে তার ভালো লাগে, সেই কাজগুলোতে আমার সবসময়ই সায় ছিল।

সে ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশকে যে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসতো। আমার ছেলে ছিল দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সে সমুদ্র ভালোবাসতো, সে সৈকতে বই পড়তে পড়তে সময় কাটাতে চাইতো। শৈশব থেকেই সে অ্যাডভেঞ্চারের ভক্ত ছিল। সারা বিশ্ব ভ্রমণের এক প্রগাঢ় সাধ ছিলো তার, যে জন্য বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী থেকে সে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছিল। আমি তাকে নিষেধ করি নাই। তার হিমালয়ে যাবার স্বপ্ন ছিল, ছেলেটা হাইকিং পছন্দ করতো, জাপানে একটা সাইকেল ট্যুরে যেতে চেয়েছিলো। চাকুরি থেকে অবসরের পরপরই সে তাঁর এই স্বপ্নগুলো ছোঁয়ার জন্য প্রস্তত হচ্ছিল।

এর মাঝে করোনা মহামারি চলে এলো। দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হবার ক’দিন পরে সে জানালো যে তাকে নিয়মিতই বাহিরে যাতায়াত করতে হয়, এবং আমি একজন বয়স্ক মানুষ, তাই তার এই চলাফেরা আমার জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এরপর সে বলল যে রাজশাহী যাবে কিছুদিনের জন্য, সেখানে তাঁর এক বন্ধুর মা (যিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন) এক বিশাল লাইব্রেরি করেছেন। ছোট থেকেই সে প্রচুর বই পড়তো। তাই তাকে আমি সেখানে যেতে দিলাম, বললাম প্রচুর পড়াশোনা করতে। সে রাজশাহীতে প্রায় চার মাস ছিল এবং আস্তে আস্তে নিজেকে বিশ্ব ভ্রমণের জন্য প্রস্তত করছিল।

ছেলেটার তীব্র ভ্রমণের নেশা ছিল। যখন সে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে ছিল, ছুটিতে বাংলাদেশে আসতো না। তার বদলে দুই মাসের ছুটিতে ইউরোপ যেয়ে গাড়ি করে হাজার হাজার মাইল ড্রাইভ করে নিজে নিজে ঘুরেছিল। এটা আমার খুব ভালো লেগেছিল কারণ ছেলেটা অন্তত নিজের একটা স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিল। আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল এই সিদ্ধান্তের প্রতি।

চাকরি থেকে অবসর নেবার পর প্রতি রাতে সে আমার মশারি টানিয়ে দিত, আমার সকল ঔষধপত্র নিজে নিজেই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতো, যাতে আমার বুঝতে বিন্দুমাত্র সমস্যা না হয়। যখনই বাড়ির বাহিরে যেত, সবসময়ই নিজের চাবি নিয়ে যেত, যাতে আমাকে বিরক্ত না করতে হয় দরজা খোলার জন্য।

রাজশাহী থেকে ফিরে মাত্র ক’দিন আমার সাথে ছিল। এবং তারপর কক্সবাজারে এক মাসের জন্য থেকে একটা তথ্যচিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা জানালো। আমি সম্মতি দিয়েছিলাম। সে বিয়ে করেনি, আর আমিও তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাইনি। ২৬ জুলাই ছিল ওর জন্মদিন। অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে সে যে রিসোর্টে ছিল সেখানে এক বাক্স চকলেট পাঠিয়েছিলাম। কোরবানির ঈদের সময় ছেলেটা আমাকে কক্সবাজারে যেয়ে ওর সাথে ঈদ করতে বলছিল, কারণ তথ্যচিত্রের শুটিঙয়ে নাকি আরও কয়েকদিন সময়ের দরকার ছিলো। অসুস্থতার কারণে আমার যাওয়া হয়ে উঠেনি।

আমার ছেলে একজন শহীদ। একজন বীরের রক্ত এবং মায়ের অশ্রু বৃথা যেতে পারে না। আশা করি পরম করুণাময় তাকে জান্নাতে আশ্রয় দিবেন।”

পুলিশের গুলিতে নিহত সাবেক মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। সোমবার তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019