২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১১ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥ প্রাণঘাতি নভেল করোনা ভাইরাসের
সুযোগে বরিশালের বানারীপাড়ায় উদ্বেগজনক হারে বাল্য বিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রশাসনের অজ্ঞাতসারে গত ৬ মাসে পৌর শহর সহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে অনন্ত
২০/২২ টি বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের নজর এড়াতে বরিশাল শহরে নিয়েও
বাল্য বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে
কয়েকটি বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটে। রেজিষ্ট্রি না করে শুধু হুজুর ডেকে কলেমা
পড়িয়ে বাল্য বিয়ের (সরা রেজিষ্ট্রি) অভিযোগও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে
জনপ্রতিনিধিরা জন্ম নিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে দিয়ে বাল্য বিয়েকে উৎসাহিত করছেন
বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া অর্থের লোভে বাল্য বিয়ে পড়ানোর অভিযোগ বিয়ে
ও তালাক রেজিষ্ট্রারদের (কাজী) বিরুদ্ধে । তারাই মূলত বর-কনের পরিবারকে
জন্ম নিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে আনতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অসাধু ওই জনপ্রতিনিধি
ও কাজীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় কিছুতেই বাল্য বিয়ে নির্মূল করা
সম্ভবপর হচ্ছেনা। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদের নেতৃত্বে বিয়ের আসরে
অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টে ৮ টি বাল্য বিয়ে বন্ধ করে বর-কনের পরিবার ও
বরকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় উপজেলার বড় ভৈৎসর গ্রামে
ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে বন্ধ করে বরকে অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। ৩
আগস্ট সোমবার রাত ৮টায় মোবাইল কোর্টে বর মুন্না আহম্মেদকে ১০ হাজার টাকা
জরিমানা করে বর-কনে দু’পরিবারের মুচলেকা রাখেন মোবাইল কোর্টের নির্বাহী
ম্যাজিস্ট্রেট ইউএনও শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ। উপজেলার চাখার ওয়াজেদ
মেমোরিয়াল বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ১২ বছরের ওই
কনের নানা বাড়ি বড় ভৈৎসর গ্রামে বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ
গ্রামের আনোয়ার শরীফের ছেলে গার্মেন্ট কর্মী মুন্না আহম্মেদের (২০)
সঙ্গে বিয়ের আয়োজন চলছিল। বর ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করে। বিয়ে বন্ধ
করে মোবাইল কোর্টে বরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে উভয়
পক্ষের অভিভাবকের কাছ থেকে মুচলেকা রাখা হয় বর ও কনে প্রাপ্তবয়স্ক না
হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দিতে পারবে না। তবে এসময় বিয়ের কাজী মাওলানা মিজানুর
রহমান পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ইউএনও
জানান। এ দিকে করোনাকালে বাল্য বিয়ে বৃদ্ধি পাওয়া প্রসঙ্গে উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ জানান মহামারীর সুযোগে গোপনে
বাল্য বিয়ে দেওয়া হলে সেক্ষেত্রে করার কিছু থাকেনা। তবে খবর পেলে
তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে বাল্য বিয়ে বন্ধ করে বর-কনের পরিবারের
সদস্য ও বরকে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ৮ টি বাল্য
বিয়ে বন্ধ করে জেল-জরিমানা করেছেন বলেও জানান। এছাড়া তিনি বাল্য বিয়ে
বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সাংবাদিক ও শিক্ষক সহ
সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ###